For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

১৭ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ১৬ হাজারই গুদাম ঘরে

Published : Wednesday, 20 September, 2023 at 7:17 PM Count : 431


বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধীন পরিচালিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারকটি প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের সবচেয়ে বড় সম্ভার।

জাদুঘরের গ্যালরিতে প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণের জন্য তিল ধরনের ঠাঁই নেই। বাইরের গ্রন্থাগার ভবনের নিচে পড়ে রয়েছে অনেক নিদর্শন। জাদুঘরের মাঝখানের খোলা জায়গার গ্যালারিতে শতাধিক প্রস্তর মূর্তিসহ নানা প্রত্নসম্পদ পড়ে রয়েছে।

এদিকে, সময়ের ব্যবধানে এর সংগ্রহ বাড়লেও বাড়েনি এর আকার-আয়তন। জাদুঘরটিতে প্রায় ১৭ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। তবে মাত্র একহাজার ২০০টি নিদর্শন গ্যালারিতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। আর বাকি ১৬ হাজার নিদর্শনের স্থান হয়েছে তালাবন্দি অবস্থায় গুদাম ঘরে।
 
এতে করে লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে থাকা এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর ফলে যেমন তথ্য পাচ্ছেন না ইতিহাসের গবেষকরা তেমনি ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই বিশাল সম্ভার অজানাই থেকে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের কাছে।

১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জাদুঘরটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাদুঘরের গ্যালরিতে প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণের জন্য তিল ধরনের ঠাঁই নেই। 

বাইরের গ্রন্থাগার ভবনের নিচে পড়ে রয়েছে অনেক নিদর্শন। জাদুঘরের মাঝখানের খোলা জায়গার গ্যালারিতে শতাধিক প্রস্তর মূর্তিসহ নানা প্রত্নসম্পদ পড়ে রয়েছে।

এরমধ্যে নবম শতকের দুর্গা সিংহবাহিনী, সূর্য, দশম শতকের বিষ্ণু (ত্রিবিক্রম), উপবিষ্ট গণেশ, এগারো শতকের চৌকাঠের অংশ বিশেষ, বারো শতকের উমা-মহেশ্বরসহ অসংখ্য মূর্তি। জাদুঘরের আঙিনার ওপরে ছাদ না থাকায় পুরাকীর্তিগুলো খোয়া যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

গ্যালারির ঠিক সামনে খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে আরও কিছু প্রত্নসম্পদ। মূল কমপ্লেক্সের ভেতরে পাহারা থাকলেও খোলা জায়গা পুরোটাই রয়েছে অরক্ষিত। জাদুঘরের ভেতরে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকলে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দর্শণার্থীরা ছবি তুলছেন ঠিকই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত জাদুঘরের পূর্ণাঙ্গ ইনভেন্টরি প্রতিবেদন মতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮৫টি প্রত্নসামগ্রীসহ প্রায় তিন হাজার দুর্লভ বস্তু হারিয়েছে জাদুঘর থেকে। জাদুঘরে নিবন্ধিত নানা ধরনের প্রত্নসামগ্রীর ১৮৫টির কোনো হদিস নেই।

 হারিয়ে যাওয়ায় প্রত্নসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দু’টি ব্রোঞ্জ, দু’টি কপার, দু’টি লিনেন, একটি ব্রাশ, দু’টি সিলভার, একটি ক্রিস্টাল, ৪৭টি বিভিন্ন ধরনের পাথর, ১০১টি টেরাকোটা, ১৩টি কাগজ এবং দুটি প্রাণির চামড়া। এছাড়া, পাঁচ হাজার ৯৭১টি নিবন্ধিত মুদ্রার মধ্যে ৩৩টি এবং ১৩ হাজার ৯৩৩টি গ্রন্থের মধ্যে ৮৫টি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না ১৩ হাজার ৫৭৬টি প্রকাশনার (পুস্তক, পুস্তিকা, গ্রন্থ, জার্নাল ইত্যাদি) মধ্যে তিন হাজার ৫২টি।

 রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তর বলেন,  বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর শুধু আমাদের এই জনপদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি গোটা ভারত বর্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি একজন ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে খুব আশাহত হয়েছি এটা জেনে যে, ঐতিহাসিক এ জাদুঘরটির এখনো এতো বড় অংকের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুদারঘরে তালাবন্দি অবস্থায় পরে আছে। ১৭ হাজারের মধ্যে মাত্র ১০০০ হাজার প্রদর্শনের ব্যবস্থা আছে এটি সত্যিই দুঃখজনক। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, যত শীঘ্রই সম্ভব এই বিশাল সংখ্যক প্রত্ননিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন।

 জাদুঘরের উপ-সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, জাদুঘরের ভেতরে প্রত্নসম্পদ রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এখানে ১৭ হাজার প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষণের জন্য মাত্র ১১টি গ্যালারি কক্ষ রয়েছে। যা পর্যাপ্ত নয়। ফলে বাধ্য হয়ে প্রত্ননিদর্শনগুলো বারান্দায় এবং গুদাম ঘরে রাখা হয়েছে। আরও গ্যালারি প্রয়োজন।

এসব বিষয়ে কথা হয় বরেন্দ্র জাদুঘরের নবনিযুক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বর্তমানে ১ শতাব্দী পার করেছে। এখানে ১৭ হাজার বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন আছে। এ সংগ্রহের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার টেরাকোটার ভাস্কর্য, প্রায় সাড়ে ৬ হাজার প্রাচীন মুদ্রা এবং ৬ হাজার পান্ডুলিপি আছে। জায়গা সংকটের কারণে ১৭ হাজার নিদর্শনের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ২০০ প্রদর্শনীতে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো স্টোর রুম রাখা আছে।

জায়গার বিষয়ে তিনি বলেন, জাদুঘরটি আরও বর্ধিত করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি। আশা করছি, খুব শীগ্রই এই সমস্যার সমাধান হবে।

তিনি আরও বলেন, জাদুঘরের নিদর্শনগুলোকে সঠিকভাবে উপস্থাপন ও সংরক্ষণের জন্য এবং ঐতিহাসিক গবেষকদের কাছে তুলে ধরার জন্য ৫০ বছরের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জনগণকে এটির প্রতি আকর্ষণীয় করতে কাজ করার পাশাপাশি স্টান্ডিং মেশিন, ডেমিনেশন মেশিন মাইক্রোফিল্ম অত্যাধুনিক ফটোকপির প্রয়োজন আছে। এগুলো প্রক্রিয়ায় আছে কিন্তু আমাদের কাছে এখনো এসে পৌঁছায়নি। এগুলোর ব্যবস্থা হলে আমরা জাদুঘরটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।


এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,