শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় একটি সোয়েটার তৈরীর কারখানায় বিনা নোটিশে ৬৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের পর কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
রবিবার সকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার হামীদুল্যাহ ম্যানশনে অবস্থিত ‘ফ্যাশনইট কোম্পানী লিমিটেড’ কারখানার দেয়ালে ছবিসহ শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের তালিকা টানানো হয়েছে। এসময় অপর একটি নোটিশে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কারখানাটির শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, শনিবার রাতেও সোয়েটার কারখানাটিতে প্রায় ১২শ’ শ্রমিক কাজ করেছে। তখনও কেউ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি জানতো না। সকালে কারখানায় এসে ৬৩ শ্রমিকের ছবিসহ ছাঁটাই এবং কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখতে পাই।
বরখাস্তকৃত শ্রমিক শাকিল হোসেন বলেন, আমরা কখনও কোন শ্রমিক আন্দোলনে যাইনি। তারপরও কর্তৃপক্ষ আমাদের অন্যায়ভাবে ছাঁটাইসহ কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ৬৩ জন শ্রমিকের ছবিসহ তালিকা টানিয়ে দিয়েছে।
ফ্যাশনইট কোম্পানীর প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ আব্দুল খালেক স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৬ ধারায় অবসানকৃত শ্রমিকদেরকে ক্ষতিপূরন ও ভাতাদি শ্রম আইন অনুযায়ী সোমবার দুপুর আড়াইটা থেকে পরিশোধ করা শুরু হবে। এসময় সকলকেই কোম্পানীর আইডি কার্ড জমা দিতে হবে।
অপর এক নোটিশে কারখানার সকল শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে চলমান সহিংসতা, বে-আইনি ধর্মঘট ও বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার স্বার্থে রবিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ থাকবে। শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি রকেট একাউন্টের মাধ্যমে সোমবার পরিশোধ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এসব বিষয়ে জানতে কারখানার প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ আব্দুল খালেকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, শনিবার রাত ৯ টা পর্যন্ত কারখানাটিতে কাজ চলেছে। কিন্তু তখনও কোন শ্রমিক কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি জানতো না। সকালে কারখানায় কাজে যোগদান করতে এসে মূল ফটকে বন্ধের নোটিশ দেখে অবাক হয়ে যায়। তবে ৬৩ জন শ্রমিককে কী কারনে ছাঁটাই করা হয়েছে তা নোটিশে উল্লেখ করা হয়নি।
অন্যদিকে সকালে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার আল-মুসলিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় শ্রমিকদের ওপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে কারাখানা ভাঙচুরসহ এক কর্মকর্তাকে মারধর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা জানায়, প্রতিদিনের মত সকালে শান্তিপূর্নভাবে কারখানায় কাজে যোগ দেয় শ্রমিকরা। প্রায় একঘণ্টা পর বহিরাগতদের হামলায় নাজমুল হোসেন নামে এক শ্রমিক আহত হওয়ার খবর পেয়ে হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন শুরু করে শ্রমিকরা। এসময় কর্মকর্তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে কাজে ফেরানোর চেষ্টা করলে উত্তেজিত শ্রমিকরা এক কর্মকর্তাকে মারধর করে এবং কারখানায় ভাঙচুর করে।
এর আগে টানা শ্রমিক অসন্তোষের পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। শ্রমিকরা সকালে স্বতফুর্তভাবে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগদান করায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বর্তমানে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা শান্তিপূর্নভাবে কাজ করছে। সকালে কয়েকটি দাবিতে আল-মুসলিম অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এক কর্মকর্তাকে মারধরসহ কারখানায় ভাঙচুর চালালে কারাখানাটিতে ছুটি ঘোষনা করা হয়। এছাড়া জামগড়া এলাকার ফ্যাশনইট কোম্পানি লিমিটেড কারখানার ৬৩ শ্রমিককে ছাঁটাই করে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষনা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এর বাইরে শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী ৫টি কারখানা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে এবং ৪ টি কারখানায় সাধারন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্য মোতায়েনসহ টহল কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
ওএফ/এসআর