পদ্মায় নদী ভাঙন, আতংকে শত শত পরিবার
Published : Sunday, 6 October, 2024 at 7:05 PM Count : 249
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নদী তীরবর্তী দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার এলাকার কাওয়াল জানি পাড়ায় আশংকাজনক ভাবে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। একদিনেই ৬০ ফুট কৃষি জমি পদ্মার বুকে হারিয়ে গেছে। এই আতঙ্কে রয়েছে কয়েকশো পরিবার।
রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আতংকে শত শত পরিবার নদীর পারে এসে ভীড় জমিয়েছে। এখানে যারা বসবাস করে তাদের অধিকাংশ কয়েক ভাঙা দিয়ে বর্তমান স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেকে ছিল বড় গৃহস্থ মাঠে শত বিঘা (৩৩ শতক ১ বিঘা) জমি গোয়ালে গরু আর গোলা ভরা ধান আজ সেগুলো শুধুই স্মৃতি। চারপাচ ভাঙনে এখন অন্যের জমি চাষ করে খায়। এখন আগের সেই দিন শুধুই স্মৃতি।
ষাটোর্ধ বৃদ্ধা ছনেকা বেগম বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ছয় ভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন কোথায় যাবো যাওনের জায়গা নেই। এ জীবনে অনেক কিছু দেখলাম। কতবার ভাঙলাম এই বয়সে। এখন আর এসব ভালো লাগে না। বাবারে বুড়া হয়ে গেছি সব কিছু হারিয়ে এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। আগে কতকিছু ছিল। কতোবড় গৃহস্থালি এখন আর তার কিছুই নাই। চোখের সামনে এগুলো সহ্য হয় না।
আর এক বয়োবৃদ্ধ আজিজ সরদার কয়েকজন মানুষ নিয়ে তার ঘর বাড়ি ভাঙছে। তিনি বলেন, আর মাত্র দুই কাঠা সামনে পানি আসলেই আমার ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। সারারাত দুচোখ এক করতে পারি নাই। প্রায় সবাই জেগেছিল এই বুঝি নদীতে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যায়। চারদিন ধরে ভাঙছে গত রাতেই সব থেকে বেশি ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন আর যাওয়ার জায়গা নেই। এক আত্মীর একটু জায়গা আছে কলেজের কাছে সেখানে যাচ্ছি।
এক রাতেই খালেক ব্যাপারীর দশ কাঠা অর্থাৎ চল্লিশ হাত ফসলি জমি পদ্মার বুকে হারিয়ে গেছে। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হয়তো রাতেই তার আরও কিছু জমি হারিয়ে যাবে পদ্মার। তখনো থেকে থেকে ভাঙছে তার জমি। তিনি বলেন, সরকারের উর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষের কাছে মিনতি তারা যেন ব্যবস্থা নেয়। তা-না হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো। আরও অসংখ্য চোখ তাকিয়ে আছে একটু সাহায্যের জন্য।
মুন্সি বাজারের এলাকার তরুণ সমাজ সেবক জামাল মুন্সি বলেন, সেই ছোট্ট বেলা থেকে দেখে আসছি ভাঙন। এখানে আমরা অনেক মানুষকে জায়গা দিয়েছি। যে গতিতে ভাঙন শুরু হয়েছে খুব শীঘ্রই এই এলাকার কিছুই থাকবে না। এখানকার স্কুল, আশ্রয়ন প্রকল্প, ক্লিনিক সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এই এলাকার নাম।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলা থেকে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে এ ব্যাপারে। আগামীকাল সকালে সেটা জমা দিব। দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙন চলছে। দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প গ্রহন না করলে মানচিত্র থেকে এই এলাকা হারিয়ে যাবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আমি এই এলাকা পরিদর্শন করে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এসআর