আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ও মহালয়া উদযাপন উপলক্ষে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আগমনী অনুষ্ঠান ‘নবমাতৃকায় দিব্যত্রয়ী’ শীর্ষক নৃত্যমালিকা মঞ্চায়িত হয়েছে। এবারের থিম ছিল নবপত্রিকা। মানে নয়টি শস্যবধু (গাছ) এর অধিষ্ঠিত দেবী। এই নয়টি উদ্ভিদ নয়টি দেবী রুপে আবির্ভাব হন।
মঙ্গলবার রাতে শহরের মহসিন অডিটোরিয়ামে দেবীদূত ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে চন্ডী পাঠ ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শুভ সূচনা করা হয়। এরপরে সারগাম সঙ্গীত বিদ্যালয়ের পরিবেশনায় আগমনী সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
নৃত্যমালিকার এবারের থিম ছিল নবপত্রিকা। মানে নয়টি শস্যবধু (গাছ) এর অধিষ্ঠিত দেবী। বাস্তবে নবপত্রিকা নয়টি পাতা নয়, নয়টি উদ্ভিদ। অর্থাৎ: কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মানকচু ও ধান। মূলত এই নয়টি উদ্ভিদ নয়টি দেবী রুপে আবির্ভাব হন।
নৃত্যমালিকা ‘নবমাতৃকায় দিব্যত্রয়ী’র বিভিন্ন রুপে নৃত্য ও অভিনয়ে ছিলেন শিব রুপে সাজু দেব, মহামায়া ও দুর্গা রুপে টুম্পা দেব, পার্বতী রুপে প্রজ্ঞা পারমিতা দাশগুপ্তা, দেবী শোকরহিতা রুপে তমা দেব পায়েল, দেবী রক্তদন্তীকা রুপে সংগীতা দেব, ব্রক্ষ্মাণী রুপে শ্রেয়া সেন, চামুন্ডা রুপে নীলাদ্রি এন্দ শ্বেতা, উমা রুপে মন্দিরা মল্লীক, প্রলয়ঙ্করী কালিকা রুপে শর্মি ভট্টাচার্য, দেবী লক্ষ্মী রুপে সামান্তা এন্দ তুর্যা, দেবী কার্তীকি রুপে অগ্নিলা ধর, দেবী মাহেশ্বরী শিবা রুপে অংশিতা রায় অথৈ, কার্তিক রুপে ঋদ্ধিমান দেব শ্লোক, নারদ রুপে অনির্বান পাল, নারায়ন রুপে প্রাজ্জ্বল প্রিয় চক্রবর্তী, ব্রহ্মা রুপে অন্তর আচার্য, ইন্দ্র রুপে রুপম দাস, অসুরগন রুপে রাহুল, দ্বীপ, দীপক, অমিত, দুর্জয়, সুমন, কিশোর।
পার্বতী রুপে ছিলেন প্রজ্ঞা পারমিতা দাশগুপ্তা। তিনি ডেইলি অবজারভারকে বলেন, ‘শৈলপুত্রী পর্বতরাজ হিমাবতের কন্যা এবং মহাদেবীর একটি রূপ। তিনি দেবী পার্বতীর বিশুদ্ধ রূপ হিসেবে পরিচিত। এই চরিত্রে এটা আমার তৃতীয় পরিবেশনা। এই চরিত্রের সাথে মনে হচ্ছে আমি অতপ্রতভাবে জড়িয়ে গেছি। চরিত্রের প্রতিটি অংশে নিজেকে দেবীর শুদ্ধরুপ হিসাবে প্রকাশিত করতে হয়েছে। শিবজয়া পার্বতীর প্রতিটি সত্ত্বাকে নিজের মধ্যে ধারন করতে হয়েছে। অল্প সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের নৃত্যাঙ্গনের এই পরিবেশনা যে এতোটা সারা পাবে তা ছিলো আমাদের কল্পনাতীত। সকলের থেকে এতো এতো অভিনন্দন ও শুভকামনা পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।’
নৃত্যাঙ্গন শ্রীমঙ্গলের পরিচালক সাজু দেব ডেইলি অবজারভারকে বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় দেবীপক্ষে শ্রীমঙ্গলে কিছু আয়োজন থাকে, এ বছরও হয়েছে। খুব অল্প সময়ে সবাই এই নৃত্যনাট্যটি তুলেছি। দর্শকের সমাগম ছিল খুবই ভালো। কানায় কানায় ভরপুর ছিল দর্শক, এতে মনে হয়েছে আমাদের কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। ধন্যবাদ দেবীদূত ছাত্র পরিষদকে। আশা করি আমরা প্রতি বছর এ রকম একটা কিছু শ্রীমঙ্গলবাসীকে উপহার দিতে পারবো। সবাই আমাদের পাশে থাকবেন।’
সংগঠনের সদস্য অসীম দেব ডেইলি অবজারভারকে বলেন, ‘দেবীদূত ছাত্র পরিষদ এবারের দ্বিতীয় আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে মহালয়া। এই মহালয়া মূলত পিতৃপক্ষের শেষে পিতৃতর্পণের মাধ্যমে শেষ হয় এবং দেবী পক্ষের শুরু হয়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য দেবীর আবাহনটাকে একটু সুন্দর ভাবে আয়োজিত করার জন্য। আমরা মূলত দেবী পক্ষের আড়ম্বটা মহালয়ার মাধ্যমে করি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার পাঠের মধ্যে দিয়ে এই অনুষ্ঠানটা পরিচালিত হয়। পরবর্তী সময় বিভিন্ন টেলিকাস্টের মাধ্যমে মহিষাসুর বধ দেখানো হতো। এছাড়াও আমাদের গ্রামে একটি সংস্কৃতি রয়েছে যে, আমাদের পূজোর আগে একটা মহিষাসুর বধ পালা হবে। মূলত এই আবহমান বাংলার শিল্প সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই আয়োজন।’
কান্তা ধর চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেবাশীষ চৌধুরী রাজা, সাবেক কাউন্সিলর মীর এম এ সালাম।
অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন ঢাকা ড্যান্স একাডেমির পরিচালক প্রান্তিক দেব।
এছাড়াও দেবীদূত ছাত্র পরিষদের সকল সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
-এমএ