মোংলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ
Published : Saturday, 5 November, 2022 at 1:49 PM Count : 326
খুলনার মোংলায় ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ হওয়া প্রায় ২ কোটি টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক, প্রকৌশলী ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে। এসব কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা দীর্ঘদিন লুটপাটে ব্যস্ত থাকায় ভেঙে পড়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গেল অর্থ বছরে মোংলা উপজেলার ৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংস্কার, ক্রীড়াসামগ্রী ক্রয় ও স্লিপের মাধ্যমে মালামাল ক্রয়ের জন্য বরাদ্ধ হয় প্রায় ২ কোটি টাকারও বেশি। সংস্কার কাজ শেষ দেখিয়ে বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে গেল জুন মাসে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিবাবক শাজাহান সিদ্দিকি, স্কুল কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, প্রথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকা নামমাত্র কিছু খরচ করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বাকী টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন সদ্য বদলি হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুমন্ত কুমার পোদ্দার, এটিও পুস্পজিৎ মন্ডল, মোংলা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী লাবিব হোসেন ও বরাদ্ধ পাওয়া স্কুল প্রধান শিক্ষকরা।
সরেজমিনে কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, নতুন করে কোনো কাজ করা হয়নি ভবনগুলোতে। সরকারি বরাদ্দের টাকায় কী কাজ করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে চিলা বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃক মন্ডল জানান, তিনি কাগজ না দেখে বলতে পারবেন না। কাগজ চাওয়া হলে বলেন, ফাইলটি তার বাসায় রয়েছে।
অন্যদিকে ফেলুর খন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গায়েত্রী রাণী রায় বলেন, কী কাজ হয়েছে এসব তিনি জানাতে পারবেন না। বার বার জানতে চাওয়া হলে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী লাবিব হাসান স্বাক্ষরিত কাজ সম্পন্ন করার একটি প্রত্যায়ন বের করে দেন। আর বলেন, কাজ না করলে প্রত্যায়ন কি করে পেলেন? এ ছাড়া অধিকাংশ প্রধান শিক্ষক বলতে পারছেন না তারা বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কি কাজ করিয়েছেন। তবে কাজের কথা বলতে না পারলেও জানালেন তাদের কাছে রয়েছে কাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয়নপত্র।
তবে যে প্রত্যয়ন দিয়ে সরকারি বরাদ্দ হওয়া টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, সেই প্রত্যয়ন প্রদানকারী খোদ উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী জানান, তিনি কোনো প্রত্যয়ন দেননি। তার দাবি, যেসব প্রত্যয়ন দেখানো হচ্ছে তা জাল।
অর্থ আত্বসাতে অভিযুক্ত টিও সুমন্ত কুমার কয়েক দিন আগে বদলি হয়েছেন খুলনার দাকোব উপজেলায়। মুঠোফোনে তার কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, কাজ হয়েছে কি হয়নি এটি দেখার দায়িত্ব উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের। তাই মোংলা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পেয়ে টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ শাহ আলম জানান, দীর্ঘদিন এক কর্মস্থলে থাকার কারণে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধ করতে পারছেন না তারা। এর আগে নানা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মোংলা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারকে বদলির জন্য বারবার লিখিত আবেদন দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। কিন্তু ওইসব সুপারিশ আজও আলোর মুখ দেখেনি। এর ফলে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ ৭ বছর মোংলায় কর্মরত ছিলেন এটিও পুস্পজিৎ মন্ডল।
কোমলমতি শিশুদের গড়ে ওঠার প্রথম স্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর এ বিদ্যালয়গুলোকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি মোংলাবাসির।
জেইউ/এনএন