বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে মাঠে চাতালের মতো করে ধান ও ভুট্টা শুকানো, গরু, ছাগল চরানোর চারণ ভূমি হিসাবে হয় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শমসের নগর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে প্রায় সময়ই শিক্ষকদের উপস্থিতি কম থাকে ফলে পড়ালেখা ঠিকমতো হয় না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শুনেও শুনেন না বলে অভিযোগ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের।
সরেজমিনে উপজেলার ৭ নং শিবনগর ইউনিয়নের শমসের নগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা সীমানার বাইরে ঘোরাফেরা করছে। বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের ঘোরাঘুরির কোনো জায়গা নেই। কারণ পুরো মাঠজুড়ে ধান ও ভুট্টা শুকানো হচ্ছে।
এটা প্রতিদিনের চিত্র বলে জানান এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে চাতাল হিসেবে ব্যবহার করছেন স্কুলের সভাপতি ওসমান গণির ভাতিজা মনোয়ার হোসেন। সভাপতির আরেক ভাতিজা আনোয়ার হোসেন নিয়ম বহির্ভূত ভাবে স্কুলের রুমে নিয়মিত প্রাইভেট পড়ান। এর আগে প্রাইভেট পড়ানো অবস্থায় এক ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কও স্থাপন করেন এবং পরে একসময় ধরা পড়লে গ্রামবাসী তার সাথে ওই মেয়ের বিবাহ দেন।
শ্রেণিকক্ষগুলোতে গেলে দেখা যায়, ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছেনা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, স্যারেরা ঠিকমতো ক্লাস নেয়না। স্যারদের ডেকে এনে ক্লাস করতে হয়।
শিক্ষকদের কমন রুমে গেলে শিক্ষকের উপস্থিতি কম পরিলক্ষিত হয়।
শিক্ষকরা ঠিকমতো স্কুলে আসেন না এবং ক্লাসও নিয়মিত করেন না এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বিদ্যালয়ে পর পর দুই দিন গেলেও দেখা মেলেনি প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফের। তার অফিসিয়াল কোনো কাজ না থাকলেও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। স্কুলে নিয়মিত আসেন না। প্রথম দিন প্রধান শিক্ষককে স্কুলে না পেলে তাকে মুঠোফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় দিন প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার জন্য স্কুলে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি স্কুলে এসে স্বাক্ষর করেই ব্যক্তিগত কাজে চলে যান।
প্রধান শিক্ষকের স্কুলে না থাকার বিষয়ে তৎক্ষণাৎ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুল আলমকে ফোনে জানানো হলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে তার স্কুলে থাকার কথা। তিনি কেন নেই আমি বিষয়টা দেখছি।
এছাড়াও, শমসের নগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের আরো কিছু অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের জনবল বৃৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনটি পদে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। গত ২৬ মে ছিলো দরখাস্ত জমা দেওয়ার শেষ সময়।
কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি দু'জন মিলে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিষয়টি জানেন না। এমনকি রেজুলেশনও করা হয়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অবস্থা বেগতিক দেখে প্রধান শিক্ষক সভাপতির মাধ্যমে রেজুলেশন করে নেন। ২৬ মে দরখাস্ত জমাদানের শেষ সময় থাকার পরও গত ২৮ মে সরেজমিনে গেলে দরখাস্ত জমা নিতে দেখা যায়।
স্থানীয় মিজানুর রহমান কমল বলেন, আমার ছোট মেয়ে এই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। প্রায় সময় এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিত থাকেন না। এখানকার শিক্ষার মান এতোই খারাপ যে বাধ্য হয়ে আমি মেয়েকে এই বিদ্যালয় থেকে বের করে অনত্র ভর্তি করেছি।
বিদ্যালয়ের সামনের মুদি ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক ঠিক মতো আসেন না। এখানকার শিক্ষার মান নিন্মমানের। সঠিক তদারকি না থাকার কারণে দিনে দিনে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিচে পড়তে শুরু করেছে। আমরা চাই প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যালয়টিকে বাঁচাক।
প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতে না পেরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওসমান গণির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বলেন, আমি মূর্খ মানুষ কথা বলতে পারিনা। আমি কথা বলতে পারবো না।
আপনার ভাতিজা স্কুলের ক্যাম্পাসকে চাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্রামের অনেকে ধান শুকায়।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুর আলম বলেন, শমসেরনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযোগগুলো আপনাদের কাছে শুনলাম। নিয়োগের বিষয় আমি কিছু জানিনা। নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের অনুপস্থিত থাকা এবং বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চাতালের মতো ধান ও ভুট্টা শুকানোর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএ