জমি জরিপেই আটকে আছে দেবীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের কাজ। গত তিন বছরেও হয়নি দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি। গত ২০২০ সালের ২৪ শে আগষ্ট পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) সাথে চুক্তি স্বাক্ষর ও দলিল সম্পাদন হয়।
বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) পক্ষে সহকারী ব্যবস্থাপক এ কে এম আনোয়ার এবং সরকারের পক্ষে পঞ্চগড়ের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন দলিলে স্বাক্ষর করেন।
সে সময় সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল , জেলার দেবীগঞ্জ সদর, দেবীডুবা, এবং সোনাহার ইউনিয়নের ৬০২ দশমিক ৪২ একর জমির ওপর ৩ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ জন্য জমি নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত জমির খাস ২১৭ একর। বাকিটা অধিগ্রহণের কথা ছিল। চুক্তি সাক্ষরের ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। জমি জরিপে কিছুটা কাজ এগিয়ে নিয়েছে বেজা কর্তৃপক্ষ। তবে প্রস্তাবিত জমি পূর্বের আয়তন থেকে কমিয়ে ২৫০ দশমিক ৮৫ করা হয়, যার খাস জমি ২১৭ একর।
যেখানে ২৪০ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ১০ দশমিক ৮৫ একর জমিতে সংযোগ সড়ক নির্মান করা হবে। ইতোমধ্যে বেজার অনুকূলে ১৮৫ দশমিক ৮৬ একর জমি বন্দোবস্ত প্রদান করেছে ভূমি দপ্তর। অবশিষ্ট ব্যাক্তি মালিকানাধীন ১৯ দশমিক ৩০ একর এবং ভূমিহীনদের নিকট বন্দোবস্তকৃত ৪৫ দশমিক ৬১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সর্বশেষ গত ১৭ ফেব্রুয়ারী বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জায়গা পরিদর্শন করেন। সাথে ছিলেন সে সময়কার দেবীগঞ্জের এসিল্যান্ড গোলাম রব্বানী সরদার।
পরবর্তীতে গত ৮ মে তিনি (এসিল্যান্ড) প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে জমি বন্দোবস্ত ও অধিগ্রহণের বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট দাখিল করেন।
তবে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় অর্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাবিত জমির আয়তন কমানো হয়েছে।
দেবীগঞ্জে অর্থনেতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী পরিচালক শেখ ইউসুফ হারুন মুঠোফোনে বলেন, এখনো আমরা এই বিষয়ে পজিটিভ আছি। ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) হয়ে গেলেই আমরা পরবর্তী কাজ শুরু করতে পারবো।
এখানে কি ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যা পরামর্শ দিবেন তাই করা হবে, তবে আমরা মনে করি ওই অঞ্চলটি যেহেতু কৃষি নির্ভর, সেহেতু সেখানে এগ্রিবেজড অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে ভালো হতে পারে।
সব মিলিয়ে কতদিন এভাবে ঝুলে থাকবে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাদের সম্ভাম্ভতা যাচাই শেষ পর্যায়ে, সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে আমরা বাকি কাজ শুরু
করবো।
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চিশতি বলেন, বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত হবে এই প্রকল্পটি।ভৌগোলিক কারনে সারাদেশের সাথে পঞ্চগড়ের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এখানকার বালু, পাথর, কৃষিজ পন্য প্রতিদিন রাজধানীসহ সারাদেশে সরবরাহ হয়। সারাদেশের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রশস্ত সড়ক পথ, দ্রুত যাতায়াতের জন্য নিকটবর্তী সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও রেলপথের সুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। সীমান্তবর্তী জেলা হবার কারনে বাংলাবান্ধা ও চিলাহাটি স্থলবন্দর দিয়ে সহজেই আমদানি রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কিছুটা জটিলতাও লক্ষ্য করা গেছে। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাঝে রয়েছে দারার হাট আবাসন প্রকল্পের দুই শতাধিক পরিবার। প্রথমদিকে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে কাছাকাছি উপযুক্ত জায়গায় স্থানান্তর করে পূনর্বাসনের সিদ্ধান্ত ছিল। তখন এ বিষয়ে আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা ঘোর আপত্তি জানায়। তারা বলেন, যখন আবাসন প্রকল্প স্থাপিত হয়, তখন এখানকার জমি অনাবাদি, অনূর্বর ছিল। সমস্ত জমি বালুময় ছিল।
ক্রমান্বয়ে তারা এই জমিগুলোতে জৈব সার, সেচ, চাষাবাদ ইত্যাদির মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন করে কৃষিজ জমিতে পরিনত করেন। তারা কোনভাবেই অন্যত্র যেতে চান না। শেষ পর্যন্ত আবাসনের পরিবারগুলো পূনর্বাসনের সম্ভাব্য ব্যায়ের আর্থিক বিষয়টি বিবেচনা করে এবং এখানকার বাসিন্দাদের দাবির প্রেক্ষিতে তা করা হচ্ছে না মর্মে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা সমেজ আলী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে হোক,কিন্তু আমাদের যেন কোন ক্ষতি না হয়। আমরা দীর্ঘদিন থেকে এখানে বসবাস করছি। আমরা এখানে যেমন আছি তেমনই থাকতে চাই। আমরা যেসব জমি আবাদ করছি তা যেন সরকার কেড়ে না নেয়।
এলাকাবাসী মনে করেন, এই ইকোনমিক জোন শুধু পঞ্চগড় নয়, এটি বাস্তাবায়ন হলে বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। জীবনমান উন্নয়ন হবে এই এলাকার মানুষের। এখানকার প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাস্তবায়ন করা হোক।
এমবি