সাগড়ে জেলেদের জালে ধরা পরছে ইলিশ। পেটে ডিম না আশায় মা ইলিশ রক্ষায় দেয়া নিষেধাজ্ঞা পিছানোর দাবি জেলেসহ আড়তদারদের। অন্যদিকে, পার্শ্ববর্তী দেশ সমন্বয়হীন অবরোধের ফলে লাভবান হচ্ছে ভারতের জেলেরা।
জেলেরা বলছেন, তারা অভাব-অনটনের মধ্যে থেকেও নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরেন না। অথচ ভারতের জেলেরা তখন বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যান। তাই তারা ভারতের সঙ্গে একই সময়ে বঙ্গোপসাগরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানান।
মৌসুমের শুরুতে আশানুরুপ ইলিশ না পাওয়ায় হতাশা দেখা দিয়েছিল জেলেদের মাঝে। এ সময় কিছু মাছ পাওয়ায় দীর্ঘদিনের হতাশা কাটিয়ে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতে বছরের বিভিন্ন সময় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে সরকার। প্রতি বছর ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
এছাড়া, ভোলার দুটি এবং চাঁদপুর, বরিশাল ও শরীয়তপুরের একটি করে ইলিশের মোট পাঁচটি অভয়ারণ্যে এপ্রিল ও মে মাসে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। আর পটুয়াখালী অভয়ারণ্যে নভেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ। পাশাপাশি প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। আর এই নিষেধাজ্ঞা ভারতের জলসীমায় প্রতি বছর একবার ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন (৬১ দিন) দেয়।
জেলেদের অভিযোগ, বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার মধ্যে ভারতীয় জেলেরা দেদারছে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ দেশের লাখ লাখ জেলে এবং মাছের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে বলেন, ‘পেটে পাথর বেঁধে আমরা মাছ ধরায় বিরত থাকি। আর আমাদের পাশের দেশের জেলেরা আমাদের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে না হয় জেলেদের লাভ, না বাড়ে মাছের উৎপাদন। আমরা কষ্ট করতে প্রস্তুত আছি, যদি তাতে দেশের ভালো হয়। কিন্তু এতে তো ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হচ্ছে না। দুই দেশে মাছ ধরা বন্ধের একই সময় থাকলে ভালো হবে।’
চরফ্যাশনের সামরাজ মাছ ঘাটে সুর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় ইলিশ মাছ বিক্রির হাকডাক। ট্রলার থেকে ইলিশ নামিয়ে বিক্রি হয় এই মাছ ঘাটে। তবে আকারে ছোট ইলিশ পাওয়ার কথা জেলেরা তুলে ধরে বলেন, অন্তত আক্টোবর মাসের শেষের দিকে অবরোধ দিলে তখন ডিম আসতো ইলিশের পেটে। এবং দামেও অনেকটা সস্তা হতো।
জেলে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রচুর ইলিশ ধরা পরেছে জালে। তবে আকারে ছোট। যে কারণে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। একটি ট্রলারের মাঝি মাল্লারা অন্তত ৩৫ মণ ইলিশ পেয়েছেন। তাতে বেশ খুশি।
সমরাজ মাছ ঘাটের আড়ত মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. সেলিম বলেন, দৌলতখানের অপর একটি ট্রলার ৮৬ মণ ইলিশ পেয়ে সরাসরি চাঁদপুর নিয়ে গেছে। সেখানে বিক্রি করেছে ৩৯ লাখ টাকা। এভাবে কম-বেশি প্রতিটি ট্রলার ইলিশ পাচ্ছে।
তার মতে, আগের চেয়ে এখন বেশ ভালোই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তবে মাছের পেটে ডিম এখনো আসেনি। সেক্ষেত্রে অবরোধটা আরও কিছুদিন পিছিয়ে দিলে ভালো হত।
মা ইলিশ রক্ষায় দেয়া নিষেজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে আড়তদার মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, 'সাগড়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পরছে। কেউ পাচ্ছে ৩৫ মণ আবার কেউ পাচ্ছে ৮৬ থেকে শত মণ ইলিশ। এসব ইলিশ আকারে খুবই ছোট। পেটে নেই কোন ডিম।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে ইলিশ মেঘনায় কম ধরা পরছে। তবে সাগড়ে ইলিশ রয়েছে। সরকারি ভাবে এক লাখ ৯২ হাজার মে. টন ইলিশের উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে তা সফল হবে। আর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমার বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য নানা প্রক্রিয়া চলছে।
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ০২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় সকল ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন, সংরক্ষণসহ সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।
-এমএ