চলতি বছরের এসএসসির ফলাফলে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে খুবজীপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। সেই সঙ্গে উপজেলা সেরাও হয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মৌমিতা তাবাসসুম, মো. হুসাইন, মাইশা ফারজানা মিথি। তারা তিন জনই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
তাই আনন্দ-উল্লাসের কমতি ছিল না ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মচারীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে।
১২৬১ নম্বর পেয়ে উপজেলা সেরা হয়েছেন মৌমিতা তাবাসসুম, ১২৫৭ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন মো. হুসাইন আর ১২৫৪ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন মাইশা ফারজানা মিথি।
মৌমিতা তাবাসসুম বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠান থেকে সফল হওয়া কৃতি মানুষগুলোর কথা জেনেই মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিল প্রথম হওয়ার। সেই থেকে শিক্ষকদের পরামর্শে নানা পরিকল্পনা করি। আমরা কি মফস্বল থেকে দেশের নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতো ফলাফল করতে পারব না? শিক্ষকরা জানালেন ইচ্ছা থাকলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাইনি। তাই উপজেলা সেরা হতে পেরেছি। বাবা আব্দুর রাজ্জাক ব্যবসায়ী মা মরিয়ম গৃহীনি হলেও আমাকে সর্বদাই সহযোগিতা করে আসছে। আমার স্বপ্ন ভবিষ্যতে একজন সুনামধন্য প্রকৌশলী হবার।'
দ্বিতীয় সেরা হওয়া আবু বক্কারের ইচ্ছাও প্রকৌশলী হাবার। তিনি বলেন, 'স্যারদের নিকট শুনেছি এই প্রতিষ্ঠানের কৃতি শিক্ষার্থী ডা. সিরাজুল ইসলাম শিশির, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক; ডা. খলিলুর রহমান, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, পাবনা; মো. সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; মো. শওকত আলী, যুগ্ম সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়; ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ভিসি, অতিশ দিপংকর বিশ্ব বিদ্যালয়, ড. মো. আমিরুলল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের পথচলা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।'
উপজেলার তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মাইশা ফারজানা মিথির ইচ্ছা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হবার। তিনি বলেন, 'আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুর পর মা কাজল রেখা শিক্ষকতার পাশাপাশি আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। আর শিক্ষকদের অবদান তো ভুলবার নয়। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান স্যার এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম স্যার সার্বক্ষণিক বন্ধুর মতো সকল বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে পাশে থেকেছেন। এ কারণেই আমার ভালো ফলাফল করা সম্ভব হয়েছে। আমি ভবিষ্যতে ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রেখে এলাকা ও দেশের জন্য অবদান রাখতে চাই।'
ভালো ফলাফলে যিনি রাত দিন কাজ করেছেন। শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে নিজের উচ্ছ্বাসের কথা জানালেন খুবজীপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, 'এবার এসএসসি পরীক্ষায় ২৫ জন জিপিএ-৫ সহ গড় পাশের হারে উপজেলার সেরা হয়েছে আমার প্রতিষ্ঠানটি। চলনবিল এলাকার এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বরাবরই ভালো ফলাফল করে আসছে। তবে এবছর তিন জন উপজেলা সেরা হওয়ায় সবার নজরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। সবার সহযোগিতায় এই ভালো ফলাফলের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।'
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের এসএসসির ফলাফলে উপজেলায় খুবজীপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় গড় পাশের হার ৯৩ দশমিক ৯৮ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে, গুরুদাসপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ১১৬ জন জিপিএ-৫ সহ গড় পাশের হার ৯১ দশমিক ৮৮ পেয়ে দ্বিতীয় স্থান এবং ৩২ জন জিপিএ-৫ সহ গড় পাশের হার ৮৮ দশমিক ৪৬ পেয়ে বেগম রোকেয়া স্কুল এন্ড কলেজ তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। এ বছর উপজেলায় ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মোট দুই হাজার ২১৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যেখানে গড় পাশের হার ৮৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
বিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, নিয়মিত সমাবেশ, সতন্ত্র ডিবেট ক্লাব ও ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, সমৃদ্ধ লাইব্রেরী, সুসজ্জিত স্কাউট ও গার্লস গাইড, মনোরম পরিবেশে শিক্ষাদান, স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার দ্বারা হাজিরা ও ফলাফল প্রদান, সিসি ক্যামেরা দ্বারা শ্রেণিকক্ষ ও প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ, নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ, নিয়মিত খেলাধুলার পাশাপশি গালর্স গাইড, বয় স্কাউটিংয়ের ধারাবাহিকতায় ভালো ফলাফল করা সম্ভব হয়েছে।
ওই প্রতিষ্ঠানের আরেকজন সাবেক শিক্ষার্থী পাঁচ বারের এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, 'খুবজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে চলনবিল অধ্যুসিত এই প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছি। প্রতিষ্ঠানের কলেবর বৃদ্ধিসহ উন্নয়নমূলক কাজ করেছি, যাতে করে এখান থেকে মানসম্মত শিক্ষার্থী তৈরী হয়ে আমাদের মতো দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারে।'
-এমএ