বাঘায় বিচ্ছিন্ন চরের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা
Published : Tuesday, 22 November, 2022 at 1:15 PM Count : 121
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বিচ্ছিন্ন চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের মধ্যে অবহেলিত চৌমাদিয়া, আতারপাড়া ও দিয়াড়কাদিরপুর। এই তিনটি চরে বসবাসকারীদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তারা উপজেলা সদরের সাথে যাতায়াত করতে হয় নৌকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরের মানুষ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পারাপার হয়। চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, দিয়াড়কাদিরপুর চরের মানুষদের প্রতিদিন পায়ে হেঁটে চৌমাদিয়া ঘাটে আসতে হয়। এখান থেকে পদ্মা নদী পর হয়ে গোকুলপুর ঘাটে পৌঁছে। তারপর সেখান থেকে ভ্যান যোগে উপজেলা সদরে যেতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদী পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। বর্ষাকালে সময় লাগে এক ঘণ্টার বেশি। বছরের অর্ধেকটা সময় পদ্মা নদী উত্তাল থাকে। উত্তাল পদ্মা নদী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
১৯ নভেম্বর পদ্মা নদী পার হওয়ার সময়ে কথা হয় চৌমাদিয়া চরের সোলেমান হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। বর্ষা ও শুষ্ক উভয় মৌসুমে পায়ে হেঁটে ঘাটে আসতে হয়। তারপর নৌকায় পার হতে হয়। গোকুলপুর ঘাটে পদ্মা নদীর উপর একটি ব্রিজ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর চৌমাদিয়ায় ওয়ার্ডের মেম্বর আবদুর রহমান দর্জি বলেন, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া ও দিয়াড়কাদিরপুর চকরাজাপুর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড। এর মধ্যে ১ নম্বর আতারপাড়ায় ভোটার সংখ্যা ৩৭৩। ২ নম্বর ওয়ার্ড চৌমাদিয়ায় ভোটার সংখ্যা ৫৫৬। ৩ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ারকাদিরপুর ভোটার সংখ্যা ৯৮৭। এই তিনটি ওয়ার্ডে পরিবার রয়েছে প্রায় ৭৫০টি। জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০ জন। এ তিনটি চরে মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নেই কোন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টান। এর মধ্যেই আবার অসময়ে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এই ভাঙনের কারণে ২ শতাধিক পরিবার তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে। তাদের ঘর নির্মাণের জন্য কোন টাকা না থাকায় অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রীসহ অনেক মোটরসাইকেল পারাপার হয়। স্বল্প সময়ে কুষ্টিয়া ও রাজশাহী অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য অনেকে এই ঘাট ব্যবহার করেন। তারা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। রাজশাহী শহরে ডাক্তার দেখানোর জন্য যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চিলমারী ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকার আরিফুর রহমান।
এ সময় তিনি বলেন, বাসে যেতে হলে দুই-তিন ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। স্বল্প সময়ে যাতায়াতের জন্য এই খেয়াঘাট দিয়ে আসা যাওয়া করি। কুষ্টিয়া থেকে এই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গোকুলপুর খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি সাজামাল হোসেন ও নিয়ারুল ইসলাম বলেন, এই খেয়াঘাটের প্রতিটি নৌকায় দুই জন করে শ্রমিক রয়েছে। গোকুলপুর ঘাট থেকে চৌমাদিয়া ও বাংলা বাজার ঘাট ২৫ কিলোমিটার। যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৭০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। তবে নদীর ওপর সেতু করলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে।
এএইচ/এনএন