মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরের পুরাতন ফেরিঘাটে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সহিংস ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় জামিন পাওয়ার পরও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশের মামলার গ্যাঁড়াকলে পড়ে জেলাব্যাপী নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে দিয়েছে।
মামলার এজাহারে নাম নেই, এমন নেতাকর্মীদেরও আটক করে পুলিশের দায়ের করা মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে পাঠাচ্ছে বলে বিএনপির স্থানীয় একাধিক নেতার দাবি।
গত রোববার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ শহরের বাজার এলাকা থেকে জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সুলতান আহমেদকে পুলিশ আটক করে পুলিশের ওপর হামলার হামলায় আসামি দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে।
যুবদল নেতা সুলতান এজাহারনামীয় আসামি নয় বলে বিএনপির নেতারা জানান। এ অবস্থায় প্রকাশ্যে দেখা মিলছে না স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে মুক্তারপুরে সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকার আব্দুর রহিম ভূঁইয়ার ছেলে ও ৮ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাওন (২০) নিহত ও সাংবাদিক-পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়।
ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে পর দিন ২২ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনসহ ৩১৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি ও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এই মামলার বাদি হয় এসআই মাইনউদ্দিন। পুলিশ অ্যাসল্ট ও সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়।
এই মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, ছয়টি উপজেলা ও দুটি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক-সদস্য সচিবসহ স্থানীয় বিএনপি, জেলা যুবদল, জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ পদ-পদবীর প্রায় সব নেতাকেই আসামি করা হয়।
অপর মামলাটি করেন মুক্তারপুরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুল মালেক। শ্রমিক লীগের অফিস ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, মারধর করে জখম করার অভিযোগে এ মামলাটি করা হয়। এ মামলায় সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান আসামি করা হয়। এ মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
এই দুটি মামলায় এক হাজার ৩৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। জেলার সব উপজেলার নেতারা আসামি হওয়ার পর থেকে মুন্সীগঞ্জে বিএনপির কর্মকাণ্ড কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। সর্বত্র গ্রেফতার আতঙ্ক।
জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকাসহ দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, বিদ্যুতের লোডশেডিং, নিত্যপণ্য ও জ্বালানী তেলের মৃল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে বিএনপি নেতাকর্মী নিহতের ঘটনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এ সময় বিভিন্ন স্থান থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হতে থাকে।
পুলিশের বাঁধা এবং দলীয় ব্যানার কেড়ে নিয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীসহ যুবদল নেতা শাওন পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ সেপ্টেম্বর রাত পৌণে ৯টার দিকে শাওন মারা যায়। সংঘর্ষকালে মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম, সদর থানার ওসি মো. তারিকুজ্জামানসহ প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন সংবাদ কর্মীও আহত হয়।
মুন্সীগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট মাহাবুবুল আলম স্বপন বলেন, মামলার পর উচ্চ আদালত থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা জামিন নেয়। জামিন নেয়ার পর মুন্সীগঞ্জের আদালতে পর্যায়ক্রমে বিএনপির নেতাকর্মীরা আত্মসমর্পণ করে জামিন নেয়। এর মধ্যে গত ০৯ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনসহ ১৭ নেতাকর্মী মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চান। আদালতের বিচারক আমজাদ হোসেন কামরুজ্জামান রতনের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এছাড়াও পুলিশের মামলার এজাহারে কয়েকজন আসামির নাম এবং ভোটার আইডির সঙ্গে মিল না থাকায় তাদের কারাগারে প্রেরণ করে এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রকৃত নাম যাচাই বাছাই করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ বিচারক দিয়েছেন বলে সেরেস্তাদার সাইদুর রহমান জানিয়েছেন।
এদিকে, যুবদল নেতা শাওন নিহত হওয়ার ঘটনায় নয় পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হলে গত ১০ অক্টোবর মামলাটি খারিজ করে দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. রহিমা আক্তার।
এর আগে যুবদল নেতা নিহতের ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন দাবি করে বলেন, যুবদল নেতা শাওনের মৃত্যু ইটের আঘাতে হয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা ঢামেক হাসপাতালের মেডিকেল সার্টিফিকেটের বরাত দিয়ে বলেছেন, বন্দুকের গুলিতে মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে শাওনের মৃত্যু হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় যাতে বিএনপি স্বার্থক ও সফল সমাবেশ করতে না পারে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি সে জন্য ধড়পাকড় শুরু করেছে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। মুক্তারপুরের সমাবেশে রতন পুলিশের সঙ্গে কোন মারামারি করেনি।
-এমএ