রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ইট ভাটাগুলোতে অবাধে বনের কাঠ আর গাছের গুড়ি পুড়িয়ে চলছে ইট তৈরির কাজ। এসব ইট ভাটায় রয়েছে জ্বালানি কাঠের বিশাল স্তূপ। কয়লা ব্যবহারের কথা থাকলেও কোথাও তা দেখা যাচ্ছে না।
কয়লার দাম বেশি এবং কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। এই অজুহাতে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। এ কারণে পরিবেশ মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে।
গত মৌসুমে এভাবে ইট পোড়ানোর দায়ে এএফকে ব্রিকসের মালিক কবির হোসেন ও এএনএ ব্রিকসের মালিক মোশারফ হোসেনকে তিন লাখ টাকা করে জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এবারও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ওই দুটি ভাটায় ইট তৈরির কাজ চলছে।
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কয়েকটি ভাটায় কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিটি ভাটার পাশে জ্বালানি কাঠের বিশাল স্তূপ। যা ইট পোড়ানোতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিভিন্ন ইট ভাটার কয়েকজন শ্রমিক জানান, সংশ্লিষ্ট ভাটা মালিকের নির্দেশে ইট পোড়াতে শুধু জ্বালানি কাঠই ব্যবহার করা হচ্ছে।
কয়লার বদলে বনের কাঠ ব্যবহারের বিষয়ে অধিকাংশ ভাটার মালিক জানান, কয়লার দাম বেশি। তাছাড়া কয়লা পাওয়া যায় না।
এমআইবি ভাটার ম্যানেজার মানিক খান বলেন, ‘সারাদেশের ৮০ শতাংশ ভাটায় খড়ি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আমরা কয়ক বছর ধরেই খড়ি ব্যবহার করে আসছি।’
টিআইবি ভাটার মালিক আজিবর সরদার বলেন, ‘কয়লা পুড়িয়ে এত দাম দিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকা মুশকিল।’
এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার দুটি ভাটায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করে, এগুলো দেখতে হয়। তাছাড়া বর্তমানে কয়লার সংকট রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যশোর ও বরিশাল এলাকা থেকে ওই জ্বালানি খড়ি আনতে হচ্ছে। খড়ির দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন প্রতি মণ খড়ি ১৮০-১৮৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কয়লার দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাটায় খড়ি ব্যবহার বন্ধ করে আমরা কয়লা ব্যবহার করব।’
ফিরোজ সরদার বলেন, ‘আমাদের দুটি ভাটায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দুই হাজার লোক জড়িত। ভাটার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখার স্বার্থে, আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সরকারি নির্দেশনা কিছুটা অমান্য করেই আমাদের ইট ভাটা চালাতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এবার কয়লার ভাব তো ভালো না। দামও অনেক বেশি। এখন প্রতি টন কয়লার দাম ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। খরচ পোষাতে আমরা বাধ্য হয়ে ভাটায় খড়ি ব্যবহার করছি।’
গোয়ালন্দ পদ্মার মোড়ের অদূরে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের দুই পাশে দুটি ইট ভাটা। এর মধ্যে এএনএ ভাটা গোয়ালন্দ পৌরসভা এলাকায়, এএফকে ভাটাটি দেবগ্রাম ইউনিয়ন এলাকায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই দুটি ভাটার ভেতর বৃষ্টির পানি জমে আছে। উভয় ভাটার পাশে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কাঠের স্তূপ। তা কয়েকশ মণ হতে পারে। এএফকে ব্রিকসে মাটি দিয়ে কাঁচা ইট তৈরিতে ব্যস্ত ২০-২৫ জন শ্রমিক।
শ্রমিক সরদার মো. ফরিদ শেখ বলেন, ‘বৃষ্টির পানি জমে থাকায় এই ভাটার কাজ এখনো পুরোপুরি শুরু করা যাচ্ছে না। তবে কাঁচা ইট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যেই কাঁচা ইট তৈরির কাজ শুরু হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার বেশির ভাগ ইট ভাটার আইনগত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটার মালিকরা বছরের পর বছর ইট ভাটা চালিয়ে আসছেন।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর কোন সুযোগ নেই। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক জেলার সব ইট ভাটা মালিকদের সঙ্গে মত বিনিময় সভা করে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। এর পরও যদি কোন ভাটার মালিক কাঠ দিয়ে ইট পোড়ান, তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো আইনগত ভাবে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। গোয়ালন্দে বনের কাঠ ভাটায় পুড়িয়ে ইট তৈরির বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
-এমএ