For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ধার-দেনা আর সঞ্চয় ভেঙে চলছেন উপকূলের প্রান্তিক জনপদের মানুষ

Published : Thursday, 13 October, 2022 at 10:58 AM Count : 148

নদীতে মাছ ধরা বন্ধ, তাই মাছ ঘাটের আলো হঠাৎ নিভে গেল। থেমে গেল সবার ব্যস্ততা। উপকূলীয় এলাকার গ্রামগুলোতে কোন কাজ নেই। শুধু জেলে নয়, মাছ ধরার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, এমনকি ক্ষুদ্র চা-পান দোকানিদের জীবনেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। 

মাছ ধরা ট্রলারে থাকা সৌরবাতির প্যানেল, ব্যাটারি, কাঁথা-বালিশ, জাল, দড়িসহ সবকিছু নিয়ে বাড়ি ছুটছে মানুষগুলো। কমে গেছে নিত্যদিনের আয়-রোজগার। ইলিশ ধরার প্রধান মৌসুম এই চার মাসের শ্রমে যা পাওয়া গেল- তা এক কথায় ‘সমান সমান’। এখন শহরে গিয়েও কাজ মিলছে না। কাজের খোঁজে ইলিশের মোকামগুলোতে কাজ করা শহরমুখী মানুষগুলো আবার গ্রামে ফিরেছেন। চড়া সুদে ধার-দেনা আর সঞ্চয় ভেঙে দিন চলছে উপকূলের প্রান্তিক জনপদের মানুষের।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিছিন্ন চর এলাকায় মানুষের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

বর্ষায় এসব অঞ্চলে কর্মজীবী মানুষের কোলাহল থাকলেও এখন প্রায় জনশূন্য। ছোট বাজার কিংবা ঘাটে বহু দোকানপাট সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে। গ্রামে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে অস্বাভাবিক। গত ০৭ অক্টোবর থেকে মেঘনাসহ উপকূলের কয়েকটি নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞাকে বলে ‘অবরোধ’। এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ২২ দিন। 
এর আগেও কয়েক ধাপে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে মাছ ধরা পেশায় নিয়োজিত বহু মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সংকট। শুধু চরফ্যাশন উপজেলার থেকেই অন্তত ৩০ হাজার মানুষ কাজের সন্ধানে বাইরে চলে গেছেন বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

চরফ্যাশনের সামরাজ মাছ ঘাটের কাছে চায়ের দোকানে আলাপ হয় মো. সেলিম মাঝির সঙ্গে। মাছ ধরা ধরা বন্ধ থাকায় তিন সদস্যের সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এ সময়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে নিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতি হাজারে ছয় মাসে সুদ গুনতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। নিষেধাজ্ঞা শেষে জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে নামতে ঋণ লাগবে আরও কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা। 

চরফ্যাশনের মজিব নগর এলাকার জেলে মো. ইউসুফ বলেন, 'নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তাদের জীবিকায় নেমে এসেছে সংকট। ঘরের ছয় সদস্যের মুখে ভাত তুলে দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। কর্মহীন এই সময়ে মহাজন আর এনজিওর কাছে দেনা করেছেন প্রায় ২০ হাজার টাকা। ‘মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এবার সরকার থেকে কোন ধরনের সহায়তা পাইনি। গতবার পেয়েছি মাত্র ৩০ কেজি চাল। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় এ সহায়তার পরিমাণ অত্যন্ত কম।'

জেলে মালেক বলেন, অন্য সময় ঘাটে কাজ করে দৈনিক যা পেতেন, তা দিয়ে চলে যেত সংসার। এখন সে অবস্থা আর নেই। ভরা মৌসুমে যেখানে রোজগার হয় ৩০০-৪০০ টাকা, সেখানে এখন দিনে সর্বোচ্চ মেলে ৫০ টাকা। সংসার চালিয়ে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

বেতুয়া বেড়িবাঁধের নতুন সুলিছ ঘাটের কাছে বরফকলে চাকরি করেন মো. কাঞ্চন মিয়া। বললেন, মাছ না থাকায় বরফকলটি এখন লোকসানে। 

চরফ্যাশনের বেতুয়াঘাটে কিনারে তুলে রাখা বেশ কয়েকটি মাছ ধরা ট্রলার। কিছু মানুষ জাল-নৌকা মেরামতের কাজ করছে। নদীতে দু’একটি মাছ ধরা নৌকা চোখে পড়ে। একই ভাবে ঘাটের আশপাশের দোকানেও লোকজনের তেমন ভিড় চোখে পড়ল না। অথচ বর্ষাকালে এই এলাকা হাজারো কর্মজীবী মানুষের কোলাহলে মুখর থাকে। বেতুয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে হাঁটতেই চোখে পড়ে বাঁধের পাশের ছোট বাজারগুলোর দিকে বহু দোকানপাট বন্ধ। ভরা মৌসুমে এই দোকানগুলোতে অসংখ্য মানুষের ভিড় থাকে।  

এদিকে, বিশেষ সময়ে নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও জেলেদের জন্য পুনর্বাসন সহায়তা একেবারেই কম বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি বছর এই সহায়তা দেওয়া হলেও সব জেলের কাছে তা পৌঁছায় না। সহায়তা বিতরণে দলীয়করণের অভিযোগও রয়েছে।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,