For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাজশাহীতে অকেজো সাড়ে ৩ হাজার টিউবওয়েল

Published : Wednesday, 12 October, 2022 at 5:38 PM Count : 283

ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত রাজশাহীগোদাগাড়ীতে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে তিন হাজার ৫৪৯টি টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। সরকারি মোট পাঁচ হাজার ১৬৬টি টিউবওয়েলের মধ্যে তিন হাজার ৫৪৯টি টিউবওয়েল অকেজো।

এতে করে ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। যে টিউবওয়েলগুলো সচল আছে তাতে পানি উঠার পরিমাণ কমে গেছে। পানির চাহিদা মেটানোর জন্য সাবমার্সিবল পাম্পের দিকে ঝুঁকছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সংকট তীব্র রূপ ধারণ করে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার জন্য বৃষ্টিপাত কম হওয়া, মরণ বাঁধ ফারাক্কা ও বিএমডিএ’র গভীর নলকূপকে দায়ি করছে বিষেশজ্ঞরা।

বিষেশজ্ঞদের মতে, ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা নদীতে পানি থাকে না। এমন কি খরা মৌসুমে পদ্মা নদীর বুক জুড়ে ধূ ধূ বালুচর। এছাড়াও গোদাগাড়ীতে বিএমডিএ’র রয়েছে প্রায় এক হাজার ৪৩৩টি গভীর নলকূপ। কৃষি কাজের মৌসুমে ভূ-উপরের পানির যোগান না থাকায় এই গভীর নলকূপগুলো অবিরাম ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে যাচ্ছে। সে অনুপাতে বৃষ্টিপাতও হচ্ছে না। এতে ভূ-গর্ভে পানির রিচার্জ হচ্ছে না। প্রতিনিয়তই ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলে।

গোদাগাড়ী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৮৫ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৯৫ ফুট, মোহনপুর ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৮৯ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৯০ ফুট, পাকড়ী ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৯০ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৯১ ফুট, রিশিকুল ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৮০ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৯৫ ফুট, গোগ্রাম ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৮৬ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৯০ ফুট, মাটিকাটা ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৭৭ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৯৭ ফুট।
এছাড়া, দেওপাড়া ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৮০ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৮১ ফুট, বাসুদেবপুর ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৬৫ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৮৫ ফুট, চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ছিল ৩৫ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৩৬ ফুট। তবে এ উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর এলাকায় পানির সর্বনিম্ন স্থিতিতল ১০৫ ফুট।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২০২২ সালের সূত্রমতে, এ উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নে মোট ৬২৭টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ২৬২টি ও বন্ধ হয়েছে ৩৬৫টি টিউবওয়েল, মোহনপুর ইউনিয়নে মোট ৫৮৬টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ২০৭টি ও বন্ধ হয়েছে ৩৭৯টি টিউবওয়েল, পাকড়ি ইউনিয়নে মোট ৪২১টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ১০৯টি ও বন্ধ হয়েছে ২৩১টি টিউবওয়েল, রিশিকুল ইউনিয়নে মোট ৫৬৩টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ১৫৯টি ও বন্ধ হয়েছে ৪০৪টি টিউবওয়েল, গোগ্রাম ইউনিয়নে মোট ৬৫৪টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ২০১টি ও বন্ধ হয়েছে ৪৫৩টি টিউবওয়েল।

এছাড়া, মাটিকাটা ইউনিয়নে মোট ৭৯৬টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ১৯৭টি ও বন্ধ হয়েছে ৫৯৯টি টিউবওয়েল, দেওপাড়া ইউনিয়নে মোট ৬৬৪টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ১৯২টি ও বন্ধ হয়েছে ৪৭২টি টিউবওয়েল, বাসুদেবপুর ইউনিয়নে মোট ৫৪৬ টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ১৪৫ টি ও বন্ধ হয়েছে ৪০১টি টিউবওয়েল, চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে মোট ৩০৫টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে ৬০টি ও বন্ধ হয়েছে ২৪৫টি টিউবওয়েল, গোদাগাড়ী পৌরসভায় মোট চারটি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে চারটি। মোট পাঁচ হাজার ১৬৬টি টিউবওয়েলের মধ্যে চালু রয়েছে এক হাজার ৬১৭টি ও বন্ধ হয়েছে তিন হাজার ৫৪৯টি টিউবওয়েল।

উপজেলায় ১১০ থেকে ১২০ ফুট গভীরে গিয়ে বালু ও ১১৫ থেকে ১২০ ফুট গভীরে গিয়ে পাথর পাওয়া যায়। তবে মোহনপুর ইউপির সরদল এলাকায় ১৮০ ফুট, মাটিকাটা ইউপির কাদিপুর এরাকায় ১৩০ ফুট গভীরে গিয়ে ভালো বালু পাওয়া যায়। ২৫০ ফুট গভীরে যাওয়ার পর ভালো বালু পাওয়া যায় না। সিমেন্টের মতো চিটা কাদা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশে সেচের জন্য যে পানি ব্যবহার হয় তার ৭৫ শতাংশই মাটির নিচ থেকে তোলা। এক কেজি বোরো ধান উৎপাদন করতে প্রায় তিন হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। গম ও ভুট্টায় প্রতি কেজি উৎপাদনে প্রায় ৪০০-৬০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এক বিঘা বোরো ধান চাষে প্রয়োজন হচ্ছে ২৪ লাখ লিটার পানি।

উপজেলায় ফসল উৎপাদনে বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন হচ্ছে। সাধারণ টিউবওয়েল পানির যে স্তরে বসানো আছে বিএমডিএ’র গভীর নলকুপও একই স্তরে বসানো আছে। এর প্রভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে বলে গবেষকরা মনে করছে।

গবেষকরা বলছেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শুধু টিউবওয়েলের ক্ষতি হচ্ছে না, পানির স্তর নিচে নেমে গেলে নিচে বালু, পাথর ফাঁকা হয়ে পড়বে। তখন সামান্য ভূমিকম্প হলেই দেবে যেতে পারে বিশাল এলাকা। বরেন্দ্র অঞ্চলকে বাঁচাতে হলে পানির কোনও বিকল্প না। ভূ-গর্ভস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বৃষ্টির পানি বেশি বেশি রিচার্জ করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পুকুর-খাড়ি বেশি করে খনন করতে হবে। বাসা বাড়ির ছাদের পানি মাটির নিচে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে, টিউবওয়েলগুলোতে পানি না উঠায় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য সাবমার্সিবল পাম্পের দিকে ঝুঁকছে এ অঞ্চলের মানুষ।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় এক হাজার ৩১৩টি সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে। এ সূত্রের বাইরেও ব্যক্তিগত ভাবে আরও সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে।

বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ বসানোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে বসানো হচ্ছে সাবমার্সিবল পাম্প। টিউবওয়েল বা সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। এই কমিটি অনুমোদন দিলেই টিউবওয়েল বা সাবমার্সিবল পাম্প বসাতে পারবেন কোন ব্যক্তি। তাছাড়া নয়। সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর ক্ষেত্রেও আইন রয়েছে ১৫০ ফুটের মধ্যে কেউ সাবমার্সিবল পাম্প বসাতে পারবেনা। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের এই অনুমোদনকে (আইনকে) বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বসানো হচ্ছে সাবমার্সিবল পাম্পগুলো। ফলে বন্ধ হচ্ছে না ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন।

যে কয়েকটি টিউবওয়েল চালু আছে পানির স্তর না থাকার কারণে মেরামতের কিছু দিন পর তা পুনরায় অচল হয়ে পড়ে আবার মেরামত করে সচল করতে হয়। লেগেই থাকে মেরামতের কাজ।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী শাহীনুল হক বলেন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে ভূ-গর্ভস্থে পানি রিচার্জ হচ্ছে না। যার ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানি না পাওয়ায় টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে বেশি করে গাছপালা লাগানো প্রয়োজন যাতে করে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। বৃষ্টিপাত বেশি হলে ভূ-গর্ভস্থে পানি রিচার্জ হবে, এতে করে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

-আরএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,