For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম

Published : Sunday, 21 August, 2022 at 9:55 PM Count : 126

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল জুড়ে দালাল চক্রের দৌরাত্ম চরমে উঠেছে। ফলে রোগী ও তাদের স্বজনরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিক মালিক মিলে দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফিরোজা নামের একজন রোগী সদর উপজেলার উজলপুর গ্রাম থেকে শনিবার পেটের পীড়া নিয়ে হাসপাতালে আসেন। টিকিট সংগ্রহ করে বিলম্বে হলেও চিকিৎসকের দেখা পান। ফিরোজা শুধু বলেছেন কয়েকদিন ধরে পেটে ভীষণ যন্ত্রণা। পেলেন একটি ব্যবস্থাপত্র কয়েকটি পরীক্ষা জন্য।

ফিরোজা হাসপাতাল থেকে বের হতেই শুরু হয়ে যায় প্রতারক দালালদের টানাটানি। কেউ বলে আপা আমার সঙ্গে আসেন ভালো ক্লিনিক থেকে অল্প খরচে টেস্ট করিয়ে দেব। কেউ বলে আমার ইজিবাইকে আসেন টেস্ট করে আবার হাসপাতালে রেখে যাব। এমনি ভাবেই চলতে থাকে প্রতারকদের অনির্বচনীয় দৌরাত্ম। একপর্যায়ে দিশেহারা হয়ে একটি ইজিবাইকে চড়ে বসেন। ইজিবাইকটি হাসপাতাল সংলগ্ন (হাঁটা পথ তিন মিনিট) সনো ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসে।
সেখানকার লোকজনকে রোগী ফিরোজাকে বুঝিয়ে দিয়ে ইজিবাইকওয়ালা চলে আসে। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ফিরোজা বলেন পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি ও রক্তের কয়েকটা টেস্ট করতে খরচ হলো দুই হাজার টাকা।

হাসপাতালের রোগ নির্ণয় পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসিন শেখ বলেন, হাসপাতালে এক্স-রে খরচ ২০০ টাকা, ইসিজি ৩০০ টাকা, সিবিসি রক্ত পরীক্ষা ৩৫০ টাকা। 

একই পরীক্ষা সনো ল্যাবে করলে খরচ হবে তিন হাজার টাকা বলে জানান ল্যাবের কর্মকর্তা রাকিব হোসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ হাসপাতালে আছে। তরপরও অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যোগসাজসে প্রতারক দালালদের খপ্পরে পড়ে অহেতুক মোটা টাকা খরচ করতে হচ্ছে রোগীদের। অবশ্য মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত দালাল ধরে জেল জরিমানা করছেন কিন্তু তাতেও কোনক্রমে বন্ধ হচ্ছেনা দালালদের দৌরাত্ম।

কয়েকদিন আগে সরেজমিনে বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরী বিভাগের সামনে একদল তরুণ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে একজন উজ্জল হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা। জরুরী বিভাগের বাইরে সারিবদ্ধ ভাবে অপেক্ষায় আছে ইজিবাইক ও তার চালক। এ সময় ব্যবস্থাপত্র হাতে নিয়ে হাসপাতালের ভেতর থেকে বের হন একজন রোগী। সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল রোগী নিয়ে টানাটানি। 

নাম গোপন রাখার শর্তে এক দালাল বলেন, জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় গড়ে উঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিক, হাসপাতালে কর্মরত পরিচ্ছন্ন কর্মী, অবৈধ পার্কিং করা ইজিবাইক চালক মিলে একটি দালাল চক্র তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজনের বাইরেও কিছু টেস্ট লিখে দালালের মাধ্যমে ওই সকল প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। রোগী প্রতি দালালরা পায় ১০০ টাকা। হাসপাতালের কর্মকর্তাও পেয়ে থাকেন কমিশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দালাল চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনা। মাঝে মাঝে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদের রোষানলে পড়তে হয়।

সেবা নিতে আসা গাংনী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের রোগীর স্বজন মুস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, হাসপাতালের চেয়ে ভাল সেবা পাওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাদের সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখতে পান হাসপাতালে যে চিকিৎসকের কাছে সেবা নিচ্ছেন এখানে সেই একই চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন।

মখলেছুর রহমান বাড়ি গাড়াবাড়িয়া, দালালের খপ্পড়ে পড়েন। তিনি বলেন, বাবা মাঠে কাজ করার সময় কোমরে আঘাত পান। দ্রুত হাসপাতালে আনা হয়। জরুরী বিভাগ থেকে প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র নিয়ে এক দালাল ভালো চিকিৎসার কথা বলে তাদের এক প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে তোলে। সেখানে আটটি পরীক্ষা করে ওষধপত্র লিখে দেয়া হয়। টানা একমাস ওষধ সেবন করে তেমন কোন কাজ হয়নি এবং বাবা মারা যান।

এসব চিকিৎসা করাতে মখলেছুরের ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মখলেছুর রহমান বলেন, 'হাসপাতাল জুড়ে দালাল
দৌরাত্ম কমানো সম্ভব হচ্ছেনা। দিনে দিনে ক্লিনিক যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে দালাল। এসব প্রতিরোধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।

হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট ডা. জমির হাসিবুস সাত্তার বলেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে দালাল নির্মূলে দফায় দফায় মিটিং হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়না। হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প অথবা আনসার সদস্য মোতায়েন ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করে নিয়মিত তদারকি করলে এসব দালাল নির্মূল হতে পারে।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,