জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় পানির সংকট বাড়ছে। ভূ-গভস্থ পানির উপর চাপ বাড়তে থাকায় পানির স্তরও নিচে নামছে। যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এটি নিয়ে পরিবেশবিদরা বিভিন্ন সময় নানা শঙ্কার কথা তুলে ধরে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিচেছন। এবার ২৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণ প্রকল্পের-২য় পর্যায়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হলো ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানো।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। এদিন মোট ২ হাজার ৫০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
এই প্রকল্পটির বাস্তবায়িত ১ম পর্যায়ে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ সেচ সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছিলো। ২য় পর্যায়ের অনুমোদিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, খাল ও পুকুরপাড়ে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়নসহ নবায়ণ শক্তির ব্যবহার (প্রায় ২ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর।
প্রকল্প এলাকা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার আবহওয়া অনেকটাই শুষ্ক। তাপমাত্রা বেশিসহ অনাবৃষ্টির সমস্যাও প্রকট। এ অঞ্চলের সেচ প্রকল্প ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পদ্মা, মহানন্দা, পুনর্ভবা, রাণী, আত্রাই ও বরনই এই ৬ টি নদীর পানি খালে সংরক্ষণ করে সেচ কাজে ব্যবহার করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সেচ সাব-সেক্টরের অন্যতম উদ্দেশ্য টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের সঙ্গে প্রকল্পটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া, টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ৬ দশমিক ১ এ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ। জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ এর ৫.৪.৩.২ এ উল্লিখিত ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা তৈরির মাধ্যমে পানির উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার সাথেও প্রকল্পটি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো- ১৭ দশমিক ৮২ লক্ষ ঘনমিটার খাল, বিল ও পুকুর পুনঃখনন, ১৩টি সাব মার্জড ওয়্যার নির্মাণ, ১৩২ সেট সোলার পাম্প ক্রয় ও স্থাপন, একটি পাইপ হোল্ডিং স্ট্রাকচার নির্মাণ, একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ৫৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার পাইপ লাইন ডিসমেন্টলিং, ২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পুনঃনির্মাণ, বিটুমিন কার্পেটিং এবং ২২০ দশমিক ৭০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ।
এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, বরেন্দ্র এলাকায় ভূ-উপরিস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। যে ৬টি নদী থেকে পানি উত্তোলন করে খালে সংরক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে, সে নদীগুলো থেকে সেচ কাজে উত্তোলনযোগ্য পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা রয়েছে। এটি বাপাউবো কর্তৃক প্রত্যয়ণ করা হয়েছে।
আগামী অক্টোবর ২০২২ থেকে ২০২৭ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। যার সুফল এ অঞ্চলের কৃষকরা যেমন পাবে, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলোও অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করেন ওই নির্বাহী পরিচালক।
আরএইচ/এনএন