রাজশাহীর দুটি রুটে চলে সিএনজিচালিত যান। রাজশাহী কোর্ট থেকে বানেশ্বর পর্যন্ত চলে ৪ চাকার সিএনজিচালিত হিউম্যান হলার এবং রাজশাহীর রেলগেট এলাকা থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত চলে ৩ চাকার সিএনজিচালিত মিশুক। কেবল এই দুই ধরনের সিএনজি থেকেই মাসে ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে।
এসব চাঁদার ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ থেকে শুরু করে ‘মালিক সমিতি’র নামে গড়ে তোলা চাঁদার দোকানে। সিএনজিচালকদের বিপদে-আপদে পাশে থাকার কথা বলে প্রতিদিন ২ লাখ টাকার ওপরে চাঁদা আদায় হলেও সেটিও আসলে করা হয় না। কিন্তু প্রতিদিনই চাঁদা উঠছে সমানে। এ নিয়ে চালকদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও পেটের দায়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহানগরীর রেলগেট থেকে বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করে ৩ চাকার সিএনজিচালিত মিশুক। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর হতে ব্যস্ততম রেলগেট এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত এই মিশুকগুলো ভীড় করে থাকে। এই সিএনজি স্টেশনে দিনের অধিকাংশ সময় অন্তত দেড়-দুই শ সিএনজি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকেই। যাত্রী ধরার জন্য চালকদের হাঁকাহাঁকিও চলতে থাকে সমানে।
চলাকরা জানান, দিনে এখান থেকে গড়ে ১ হাজার ২০০ সিএনজি চলাচল করে। এর জন্য এ স্টেশনের মালিক সমিতিকে দিতে হয় ৪০ টাকা, শ্রমিক অফিসকে ৫৫ টাকা, দুর্গাপুরের কানপাড়া বাজারে ২০ টাকা এবং মোহনগঞ্জে ২০ টাকা করে টোল বা চাঁদা দিতে হয়। এতে ১২০০ মিশুককে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে এই রাস্তায় চলাচলের জন্য।
এ রুটে চলাচলকারী একাধিক মিশুকচালক (সিএনজি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি মিশুক থেকে প্রতিদিন ১৩৫ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে ৩ জায়গায়। কিন্তু এই টাকার কোনো হিসাব নাই। আমরা কোনো বিপদে পড়লেও সমিতি তেমন কোনো সহযোগিতা করে না। অথচ মালিক সমিতির নামে প্রতিদিন ৪০ টাকা আবার শ্রমিক সমিতির নামে ৫৫ টাকা আদায় হচ্ছে একটি মিশুক থেকে। তাহলে এতো টাকা যায় কোথায়? আমরা প্রশ্ন করলেই সমিতি থেকে বলা হয়- পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়, বছর শেষে চালকদের টাকা দিতে হয়, অফিস খরচ হয়। তাতেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আসলে টাকাগুলো লুটপাট করা হয়।
চালকরা আরও অভিযোগ করে বলেন, কিছু টাকা স্থানীয় পুলিশকে দেয়। আর বাকি টাকা নেতারা লুটেপুটে খায়। হিসাব চাইতে গেলেও আমাদের কোনো হিসাব দেয়া হয় না। প্রতিবাদ করলে উল্টা গাড়ি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে প্রতিদিন চাঁদা দিয়েই গাড়ি চালাতে হয়। কোনো কোনো দিন চাঁদা টাকা আর পকেট খরচেই টাকা শেষ হয়ে যায়।
অন্যদিকে কোর্ট এলাকা থেকে বানেশ্বর পর্যন্ত চলে অন্তত ৩০০ হিউমেন হলার। এটি চলাচল করেত গিয়ে প্রতিদিন মালিক সমিতিকে ৮০ টাকা, কোর্ট এলাকার মাস্টারকে ৩০ টাকা, সাহেব বাজারে ২৫ টাকা, কাটাখালিতে ১০ টাকা, বেলপুকুরে ১০ টাকা ও বানেশ্বরে ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ফলে একেকটি হিউমেন হলারকে এ রুটে চলাচল করতে ১৮৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। গড়ে এ রুটে প্রতিদিন চাঁদা উত্তোলন হয় অন্তত ৫৫ হাজার টাকা। আর মাসে চাঁদা উত্তোলন হয় অন্তত ১৬ লাখ টাকা। এই টাকাও ভাগ-বাটোয়ারা করেন মালিক সমিতির নেতারা।
একাধিক সিএনজিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিএনজি দুর্ঘটনার শিকার হলেও আমাদের কোনো সহযোগিতা করা হয় না। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা তুলে লুটপাট করা হয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে। আমরা কষ্ট করে টাকা ইনকাম করি, আর মালিক ও মাস্টারকে চাঁদা দিতে সেই টাকার বেশিরভাগ শ্যাষ হয়ে যায়।
জানতে চাইলে সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মিলু হোসেন বলেন, বেশির ভাগা টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ হয়। না হলে প্রশাসন ঝামেলা করে রাস্তায় সিএনজি চালাতে দেয় না। আবার বছর শেষে চালকদেরও কিছু টাকা করে দেয়া হয়। এভাবেই সমিতি চলে। না কোনো শৃঙ্খলা থাকে না।
রাজশাহী জেলা হিউম্যান হোলার সমিতির সভাপতি শরিফ উদ্দিন বলেন, ৩০০ সিএনজি চলে না। বড়ো জোর এক-দেড়শ চলে। কিন্তু চাঁদার টাকার কোন কোন খাতে খরচ হয় তার হিসাব দিতে পারব না। এটা আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
এসব বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের কেউ কথা বলতে না চাওয়ায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে জানতে চাইলে মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাণ চাকমা বলেন, সিএনজি থেকে চাঁদার ভাগ পুলিশ পায়, এটা সঠিক নয়। এই ধরনের অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।
আরএইচ/এনএন