For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

সিভিল সার্জনের তালিকায় বন্ধ থাকলেও বাস্তবে ক্লিনিকগুলো চালু

Published : Sunday, 5 June, 2022 at 7:59 PM Count : 202

নিবন্ধন না থাকার অভিযোগে রাজশাহীতে ৪২টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি এবং মহানগরীতে দুটি। 

গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ বলা হলেও সেগুলো মালিকরা বৈধ দাবি করে কার্যক্রম চালু রেখেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বাঘা উপজেলায়। নিবন্ধন না থাকার অভিযোগে এ উপজেলার ১১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক বন্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

এগুলো হলো- বাঘা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মুঞ্জু ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাহমুদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাহমুদ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিক, উপসম মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নাদিয়া ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফারিহা খেয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, খেয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আল-মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা যায়, এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটিও বন্ধ করা হয়নি। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানে কোন অভিযানও চালানো হয়নি বলে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরতরা।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, রাজশাহী জেলার উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি এবং মহানগরের দুটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে সর্তক করা হয়।

এদিকে, সিভিল সার্জনের তালিকা ধরে শুক্রবার ও শনিবার অনুসন্ধান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠানে কোন চিকিৎসক দেখা যায়নি। কয়েকজন নার্স ও প্যারামেডিক দিয়ে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার নিউরো কেয়ার এবং মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে শাহমুখদুম ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করার কথা জানানো হলেও আদতে তা বন্ধ হয়নি। শুক্রবারও সেগুলো চালু ছিল।

এদিকে, নিবন্ধন না থাকার অভিযোগে বাগমারা উপজেলার আটটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও বাস্তবে তালিকার ছয়টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চালু রয়েছে। তালিকার বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান দুই মাস আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ বলা হলেও মালিকরা বৈধ দাবি করে কার্যক্রম চালু রেখেছেন।

সিভিল সার্জনের তালিকায় বাগমারা উপজেলার আটটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভিযান চালিয়ে বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকায় এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। 

এগুলো হলো- উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়ায় অবস্থিত সাফল্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডক্টর ক্লিনিক, হামিরকুৎসা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চানপাড়ার ওরিন ডায়াগনস্টিক, ওরিন ইসলামী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তাহেরপুরের রয়েল আলট্রাসাউন্ড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার ডা. আবদুল হাদি হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটের নিউ বাগমারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

এর মধ্যে চানপাড়ার ওরিন ডায়াগনস্টিক এবং ওরিন ইসলামী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দুই মাস আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। সিভিল সার্জনের পাঠানো তালিকায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।

বাগমারা উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়ার সাফল্য ও ডক্টর নামের দুটি প্রতিষ্ঠান চালু রাখা হয়েছে। রোগীদের ভেতরে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এগুলোর কোনটি সিলগালা বা বন্ধ করা হয়নি বলে প্রতিষ্ঠান দুটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। তাদের লাইসেন্স রয়েছে বলেও দাবি করেন। 

এছাড়া, এখানে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রুরাল মেডিকেয়ার নামের দুটি বেসরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। এগুলোরও কোন নিবন্ধন নেই।

অপরদিকে, হামিরকুৎসা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চলছে। এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তাহেরপুর বাজারে অবস্থিত রয়েল আলট্রাসাউন্ড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারও চালু অবস্থায় দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখার বিষয়ে ও বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলাকায় মাইকযোগে ও অনলাইন মাধ্যমে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। 

এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবদুল মালেক সরদার দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানটি মানসম্মত ও সব ধরনের কাগজপত্র রয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে বন্ধের তালিকায় তার ক্লিনিকের নাম দেখানো হয়েছে।

উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোবাইদুর রহমান বলেন, উপজেলার অবৈধ ও বিতর্কিত অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়নি। সেগুলোর কার্যক্রম প্রচার করে চালানো হচ্ছে। অথচ কয়েকটি ভালো মানের বৈধ ক্লিনিককে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এগুলোর কার্যক্রম চলমান বলে তিনি স্বীকার করেন। 

বৈধ ক্লিনিকগুলোকে চালু রেখে অন্যগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বন্ধের তালিকায় থাকা ক্লিনিকগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, 'যাদের খোলার পাওয়ার (ক্ষমতা) আছে, তারা খুলতে পারে। এর দায়-দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে। তবে এবার ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানা বা ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে অভিযান চলবে।'

সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক দাবি করে বলেন, 'তারা যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছেন, সেগুলো বন্ধই রয়েছে।'

তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়ার পর তিনি বলেন, 'এগুলোর বিরুদ্ধে আবার অভিযান চালানো হবে।'

তবে সিভিল সার্জনের তালিকা অনুযায়ী বেশ কয়েক জায়গায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা করে সতর্ক করা ও বন্ধও করা হয়েছে। এর মধ্যে, তানোরের প্রাইম ডায়াগনিস্টক সেন্টার, চারঘাটের বি এম ক্লিনিক, নিলিমা ক্লিনিক, মিম কমিউনিটি হাসপাতাল।

পবা উপজেলায় বন্ধ করা হয়েছে লাইফ কেয়ার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক, সততা ফার্মেসি অ্যান্ড হেলথ সার্ভিস, সিবানী হাসপাতাল, মনোয়ার লাইফ সাপোর্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সুফিয়া নার্সিং হোম, মডার্ণ আই হাসপাতাল।

দূর্গাপুরের দিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়। এছাড়া, কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হলি ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। 

গোদাগাড়ীর নাহার ক্লিনিক, জনতা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিখিলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়।

মোহনপুরের শতফুল ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ এবং তাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও রুপোশ মেডিকেয়ার, লাকী ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়। আর ইসলামীয়া জেনারেল হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

-আরএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,