For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

কচুরিপানার অজুহাতে খেয়াঘাট পারাপারে ভাড়া বৃদ্ধি

Published : Sunday, 15 May, 2022 at 10:39 AM Count : 198

গাজীপুরেকালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে আসা কচুরিপানার অজুহাতে খেয়াঘাট পারাপারে সাধারণ যাত্রীদের নিকট থেকে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবাদ করলেই ঘাটের ইজারাদার ও নৌকার মাঝিদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম নৌকা হওয়ায় যাত্রীরাও নিরবেই গুনে যাচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া।

জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। ওপাড়ে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা। আর ওই উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় বেশির ভাগ মানুষেরই ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজ, চিকিৎসা কালীগঞ্জ কেন্দ্রীক। তাই শীতলক্ষ্যা নদী হয়ে নৌকায় তাদের কালীগঞ্জ বাজার এলাকার দড়িসোম খেয়াঘাটে পার হতে হয়। কিন্তু প্রতি বছর উজানে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা ভেসে আসে শীতলক্ষ্যা নদীতে। আর সাময়িক সময়ে স্থানীয় নৌকার মাঝিরা ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী পারাপারে। এছাড়াও বর্তমান খেয়াঘাটে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের দড়িসোমে নৌকা না ভিড়িয়ে এখন একই এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের ভাদার্ত্তী (পুরাতন এস আর অফিস) ঘাটে নৌকা ভিড়াচ্ছে। 

কেরামত নামে এক যাত্রী বলেন, 'নদী পার হওয়াটা এখন অনেক মুশকিল হয়ে গেছে। কচুরিপানার কারণে নৌকাগুলোতে সময় অনেক বেশি লাগে। সেই সঙ্গে ভাড়াও দিতে হচ্ছে বেশি। আগে নৌকা ভাড়া দিতে হতো তিন টাকা আর এখন দিতে হচ্ছে পাঁচ টাকা। এছাড়াও খেয়াঘাট সাব-ইজারাদারকে (মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কিনে নেওয়া) দিতে হয় তিন টাকা। একবার পার হলে নৌকা ভাড়া হিসেবে গুনতে হয় আট টাকা। এরপর একজন যাত্রীকে মূল খেয়াঘাটে পৌঁছতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভাড়া লাগে আরও ১০ টাকা। সব মিলিয়ে একজন যাত্রীকে একবার নৌকা পাড় হতে ১৮ টাকা আর আসা-যাওয়া ৩৬ টাকা লাগছে। উপায়ন্তর না পেয়ে পেটের দায়ে নদী পার হয়ে কাজে আসতে হয়।' 
তিনি আরও বলেন, 'যখন কোন সমস্যা থাকে না। তখন তো তারা আমাদের কাছ থেকে ভাড়া কম রাখে না। এখন কচুরিপানার অজুহাতে ভাড়া বেশি রাখছে। তাছাড়া ঘাটের ইজারাদারদের নিজস্ব নৌকা থাকার কথা থাকলেও তাদের কোন নৌকাই নেই। যে কারণে ইজারাদার ও সাব-ইজারাদারদের মাঝিদের উপর নির্ভর করতে হয়।'

শফিক নামে আরেক যাত্রী বলেন, 'নদীর খেয়াঘাট এলাকায় কচুরিপানার কারণে কোন নৌযান ঠিক মতো চলাচল করতে পারছে না। তাই খেয়াঘাট স্থানান্তর করা হয়েছে ভাদার্ত্তী এলাকায়। এতে করে আমাদেরকে মূল খেয়াঘাটে পৌঁছতে আরও ১০ টাকা অতিরিক্ত রিকশা ভাড়া লাগছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পাড় হতে মাত্র ৪/৫ মিনিট সময় লাগতো। আর এখন লাগছে দ্বিগুন সময়। ভাড়াও দিতে হচ্ছে বেশি। তবে নৌকার মাঝি ও ইজারাদারদের নৈরাজ্যগুলো স্থানীয় প্রশাসন দেখার কথা থাকলেও তারা আছে চুপচাপ। যে কারণে নৌকার মাঝিদেরকে দিতে হচ্ছে অতিরিক্তি ভাড়া।'

কালীগঞ্জ খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি কাওসার মিয়া বলেন, 'কচুরিপানার জন্য আমাদের পরিশ্রম করতে হয় বেশি। তাছাড়া নৌকা আগের ঘাটে না ভিড়িয়ে কচুরিপানা নেই এমন একটি ঘাটে ভিড়াই। তাই আগের চেয়ে নৌকায় তেলও খরচ হয় বেশি। আগে লাগতো ২/৩ লিটার এখন তা ৫/৬ লিটার লাগে। আর ভাড়া বেশি না নিলে আমরা চলবো কিভাবে?'

একই কথা বলেন খেয়াঘাটের নৌকার আরেক মাঝি গিয়াস উদ্দিন ইউনুস। 

কালীগঞ্জ খেয়াঘাটের সাব-ইজারাদার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, 'আমি রফিকুল ইসলাম সিজু ভাইয়ের কাছ থেকে ইজারা কিনে নিয়েছি। কোন কথা থাকলে তাকে বলতে পারেন।'

তবে কচুরিপানার জন্য অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে তিনি কোন অনুশোচনা না দেখিয়ে বলেন, 'কিছু করার নেই। মাঝিদের সময় ও খরচ বেশি লাগছে। তাই ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে।'

ইজারাদার হিসেবে তার কোন নিজস্ব নৌকা আছে কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'এগুলো লাগে না।'

কালীগঞ্জ খেয়াঘাটের মূল ইজারাদার ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবলীগের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম সিজু বলেন, 'আমি খেয়াঘাটের ইজারা পেয়ে পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা এলাকার মোশারফ নামের এক লোকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। আমার ইজারা শেষ হওয়ার আর মাত্র দেড় মাস আছে। নতুন ইজারা ওই মোশারফই পেয়েছে।'

তবে নৌকা পারাপারে অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধি ও ঘাট স্থানান্তরের ব্যাপারে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। 

খেয়াঘাটের ইজারা নিতে হলে ইজারাদারের নৌকা থাকতে হয় কি না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার নৌকা নেই। তবে মোশারফের আছে কি না আমার জানা নেই।'

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসসাদিকজামান বলেন, 'অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেন নিচ্ছে? কে নিচ্ছে? এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আমরা পাশাপাশি চেষ্টা করবো নদীর খেয়াঘাট এলাকা থেকে কচুরিপানা পরিস্কার করা যায় কি না? আর আমি এ উপজেলায় যোগদানের আগেই খেয়াঘাট ইজারা হয়েছে। তাই যিনি ইজারা নিয়েছেন তার নিজস্ব নৌকা আছে কি না আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,