For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

টিসিবির ফ্যামেলী কার্ডে উপসচিবের বাবা-জনপ্রতিনিধিদের স্বজনদের নাম

Published : Sunday, 17 April, 2022 at 6:06 PM Count : 196

মৌলভীবাজারেকমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগী তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

ইউনিয়নে ৯২৫ জন কার্ডধারীর তালিকায় এক উপসচিবের বাবা, টিভি শোরুমের মালিক, ব্যবসায়ী, বিপুল পরিমাণ জমির মালিক, দ্বিতলা পাকা ভবনের মালিক, বিত্তশালী ও প্রবাস ফেরত ব্যক্তি নামও রয়েছে।

এছাড়াও, ইউপি সদস্যদের বাবা, ছেলে, বোনসহ সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনের নামও তালিকায় রয়েছে। যাদের পরিবারের অনেকেই প্রবাসে থাকেন। স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীকে উপকারভোগী হিসেবে তালিকায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সেটি মানা হয়নি আদমপুর ইউনিয়নে। 

বঞ্চিতদের অভিযোগ- ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজেদের ইচ্ছামাফিক আত্বীয়-স্বজন ও নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে টিসিবির ফ্যামেলী কার্ড করেছেন। এতে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টির পাশাপাশি এলাকায় চলছে তোলপাড়।
জানা যায়, সরকারের ভিজিডি, ভিজিএফপ্রাপ্ত ও করোনাকালীন অসহায়দের তালিকা থেকে টিসিবি পণ্য বিতরণের জন্য উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভূক্তির সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি আদমপুর ইউনিয়নে। এখানে নয়টি ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান তাদের স্বজন ও আস্থাভাজন লোকজনকে তালিকাভুক্ত করেছেন। শুধু তাই নয় হতদরিদ্রদের নাম না দিয়ে দিয়েছেন গাড়ি, বাড়ির মালিক সরকারের এক উপসচিবের বাবার নাম, এলাকার বিত্তশালী, আ'লীগের লোকজন, দ্বিতল ভবনের মালিক ও ব্যবসায়ীদের নাম। যাদের পরিবারে কোন অভাব নেই। আবার অনেক পরিবারের সদস্যরা থাকেন প্রবাসে। 

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক টিসিবি পণ্য বিতরণের নামের তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। নামের তালিকায় রয়েছেন ৭ নং ওয়ার্ডের উত্তর ভানুবিল গ্রামের বাসিন্দা সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে চাকুরীরত প্রদীপ কুমার সিংহের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কৃষ্ণ কুমার সিংহ। তিনি স্বচ্ছল। তার বাড়ি পাকা এবং গাড়ি রয়েছে। জমিজমা আছে। প্রথম কিস্তির পণ্য নিয়েছেন তিনি।

৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের ছেলে ধান ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, তার বাবা জহুর উল্যা ও ভাই এরফান আলীর নামও রয়েছে। অথচ ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরের দুই ছেলে ফ্রান্স ও দুবাই প্রবাসী। 

আদমপুর বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী কীর্তিজিত সিংহ, উত্তর ভানুবিল গ্রামের বিত্তশালী মো. গনু মিয়া। যার দ্বিতলা বাড়ি ও তিন ভাই প্রবাসে। ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আজিমের ছেলে ফাহাদ আলী, মেয়ের জামাই জুবের মিয়া ও বোন সাহেদা আক্তারের নামও রয়েছে টিসিবির তালিকায়।

স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মে পিছিয়ে যাননি ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাজী আলমগীর ফারুক। স্বচ্ছল হয়েও ছেলে শামসুল আলম শুভ'র নাম দিয়েছেন তালিকায়। সংরক্ষিত নারী সদস্য গুলনাহার বেগমের ভাই ও স্বজনদের নামও রয়েছে। একই ভাবে ৩ নং ওয়ার্ডের অধিবাসী আদমপুর বাজারের ওয়ালটন টিভির শোরুমের মালিক যুবলীগ নেতা মইনুল ইসলামের নামও তালিকায় স্থান পেয়েছে। 

এছাড়া, বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও অর্ধশতাধিক স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায়। যারা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বা তাদের স্বজনরা প্রবাসে আয়-রোজগার করছেন। দরিদ্রদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা টিসিবি কার্ড পাওয়ায় বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সমাজকর্মী তাজউদ্দিন আহমেদ তাজু বলেন, তালিকা তৈরিতে আরও যাচাই বাছাই ও স্বচ্ছতার প্রয়োজন ছিল। দরিদ্ররা পেলে উপকার হতো।

উপকারভোগী উপসচিবের বাবা কৃষ্ণ কুমার সিংহকে নিজের নাম অন্তর্ভূক্তির কথা জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় মেম্বারের সঙ্গে কথা বলার উপদেশ দেন।

৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর টিসিবির তালিকায় উপসচিবের বাবার নাম, নিজের ছেলে, বাবা ও ভাইয়ের নাম অন্তর্ভূক্তির বিষয় স্বীকার করে বলেন, 'আসলে আমি এতো সব বুঝিনি, আমার ভুল হয়েছে।

এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'এ রকম আর হবে না। চেয়ারম্যানকে বলে তালিকা থেকে নাম কেটে দেব।'

আরেক ইউপি সদস্য আজিম মিয়া বলেন, 'দরিদ্র অনেকে টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় স্বচ্ছলদের নাম দিতে হয়েছে।'

আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন মেম্বারদের স্বজনপ্রীতির কথা স্বীকার করে বলেন, 'আমি অনিয়ম পছন্দ করি না। মেম্বারদের তালিকায় কিছুটা স্বজনপ্রীতি হয়েছে। আমি স্বচ্ছলদের নাম কেটে দেব।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, 'আমি জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুয়ায়ী কার্ডে স্বাক্ষর করেছি। সেখানে কারা স্বচ্ছল তা জানি না, এ রকম হলে চেয়ারম্যানকে বলে দেব নাম কেটে দেয়ার জন্য।'

উপসচিবের বাবার নাম টিসিবির তালিকায় রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ব্যাপারটি আমি জানি না। তবে এ রকম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে কার্ড বাতিল করা হবে।'

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,