For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

দীর্ঘ দিনেও উদ্ধার হয়নি বিদ্যালয়ের বেদখলীয় জমি

Published : Sunday, 17 April, 2022 at 5:44 PM Count : 131

পটুয়াখালীকলাপাড়ার ৪৮ নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০.৩৮ একর জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। বছরের পর বছর এভাবে বেদখল থাকলেও উদ্ধারে উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা মাঝে মধ্যে সরেজমিনে ঘুরে দায়িত্ব শেষ করেছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের জমি দখল করে ২০টি পরিবার বসবাস করছে। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি জমি উদ্ধারে তৎপর রয়েছেন। তবে কতদিন তাদের এ উদ্ধার তৎপরতা থাকবে, বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার হবে কি না এমন প্রশ্ন অনেকের।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের জমিতে স্কাভেটর মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করছেন বেলায়েতের ছেলে জহিরুল ইসলাম ও মা মাজেদা বেগম। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পাউবো বেড়িবাঁধের উন্নয়ন কাজ চলছে। কিন্তু পাউবোর নতুন বেড়িবাঁধটি সম্পূর্ণ বিদ্যালয়ের জমির উপর দিয়ে গেছে। ৪৮ নং পোল্ডারের আওতাভুক্ত পাউবো বেড়িবাঁধের দু'পাশের বিদ্যালয়ের জমি। এসএ ও বিএস নকশানুযায়ী বেড়িবাঁধের ঢাল বাদে বিদ্যালয়ের জমির সীমানা। কিন্তু দু'পাশে অত্যন্ত ২০টি পরিবার বসবাস করছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের জমিতে কেউ কেউ পুকুর খনন করেছেন, কেউ আবার গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন।  

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জেএল ৩৪ নম্বর লতাচাপলী মৌজার এসএ ৬২৯ নম্বর খতিয়ানে ৪৮ নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ১৪.৩৮ একর জমি রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। বেদখল হওয়ার কারণে বর্তমান বিএস জরিপে জেএল ৬০ নম্বর লতাচাপলী মৌজার বিএস ০২ নম্বর খতিয়ানে ১২৫৮, ১২৫৯, ১২৬০, ১২৬১, ১৩৪৭, ২০১৯, ২০২০, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪, ২০২৫, ২০৭৬, ২০৭৮ নং দাগসমূহে ৯.৮৯ একর জমি রেকর্ডভুক্ত হয়। বাকি ৪.৪৯ একর জমি ১ নং খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়েছে। 
এদিকে, বিদ্যালয়ের নামে বিএস জরিপে ৯.৮৯ একর জমির রেকর্ড বিদ্যমান থাকলেও বিদ্যালয়ের দখলে আছে মাত্র ৪.০০ একর বাকি ৫.৮৯ একর জমি স্থানীয় বাসিন্দারা দখল করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে, পুকুর খনন করে ভোগদখল করছেন। 

বিদ্যালয়ের জমিতে বসবাসকারী দখলদাররা হলেন- পনু, বেলায়েত, জাফর, জমিরুল, শহিদুল ইসলাম, মহসীন, হুমায়ুন, হাবিব, জামাল, সোহাগ, মানিক, নাসির, ইউনুচ, মহিমা, খাদিজা, আ. আজিজ, নুরু আকন, বেল্লাল হোসেন, আবুল কালাম, আ. জলিল হাওলাদার। 

বিদ্যালয়ের জমিতে বসবাসকারী আ. জলিল বলেন, 'আমরা প্রথমে খাস জমি ভেবে বসবাস শুরু করেছি। পরবর্তীতে শুনেছি বিদ্যালয়ের জমি। এখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমি মেনে নেব।'

আরেক দখলদার মহসীন বলেন, 'আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধের খাস জমিতে বসবাস করছি। বিদ্যালয়ের জমি তা আমার জানা নেই।'
 
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, 'দীর্ঘ বছর যাবৎ বিদ্যালয়ের জমি স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধ ভাবে দখল করে বসবাস করছেন। তাদের কাছে কোন কাগজপত্র না থাকলেও তারা স্বেচ্ছায় জমি ছেড়ে যাচ্ছেন না। অবৈধ দখলদারদের আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হবে। আমি ইতোমধ্যে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ শুরু করেছি।'

কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার বলেন, 'বিদ্যালয়টির নামে এতো জমি আছে তা আমার জানা ছিল না। আমি সম্প্রতি বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে জমি দখলমুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছি। আমি ম্যানেজিং কমিটিকে জমি উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।'    

এদিকে, ২০০৭ সালের সিডর পরবর্তীতে লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম পাশের পুরানো বেড়িবাঁধ সম্মুখে একটি জলকপাট ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন বেড়িঁবাধটি নির্মিত হয়েছে বিদ্যালয় এবং মোকলেচ মোল্লা ও মনির হোসেনের জমিতে। কিন্তু বিদ্যালয় ও জমির মালিকরা অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের কোন টাকা পাননি। আর জলকপাট ও দু'পাশের খাল কাটা হয়েছে মনির হোসেনের বাবার বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমি থেকে সেও অদ্যাবধি কোন ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। 

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এতদিন কোন খোঁজখবর না রাখলেও মনির হোসেন ও মোকলেচ মোল্লারা বিভিন্ন অফিসে ধরনা দিয়েও কোন সুফল পাননি। তারা আজও জানে না তাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না? যদি অধিগ্রহণ হয় তাহলে তাদের টাকা পাবে কি না? কারণ তারা এখনও পর্যন্ত কোন নোটিশ পাননি। তারা এও সন্দেহ করছেন তাদের জমির অধিগ্রহণের টাকা হয়তো কেউ উত্তোলন করে নিয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিশ্ব ব্যাংকের ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বিদ্যালয় কমিটি তাদের জমিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাঁধা প্রদান করেছেন। আমি আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি। বিদ্যালয় কমিটির অভিযোগের সত্যতা রয়েছে।'

উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, 'এ বিষয়ে আমার নিকট এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। তারপরও আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, 'বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার নিকট আবেদন করলে সরেজমিনে পরিমাপপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,