স্বাধীনতার ৫০ বছর পেড়িয়ে গেলেও সাভারের আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপির গোহাইলবাড়ি-গাজিবাড়ী এলাকার মানুষের দুঃখ দূর হয়নি। বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটেই ওই অঞ্চলের মানুষকে বংশাই নদী পার হতে হয়।
গাজিবাড়ি-গোহাইলবাড়ি সড়কের বংশাই নদীর (গাজিখালি) উপর একটি সেতু না থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগ নিয়েই দিনাতিপাত করছে। সেই সঙ্গে যে সড়কটি রয়েছে তা বর্ষায় কাঁদা আর শুষ্ক মৌসুমে ধূলোয় পরিপূর্ণ থাকে। প্রায় শত বছর আগের তৈরি এ সড়কটি অবহেলাতেই রয়ে গেছে।
নদীটির উত্তর পাশে গাজীবাড়ি, নাল্লাপোল্লা, বাইদগাঁও, কালিয়াকৈরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ এ সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন থাকে নৌকা। এছাড়া সারা বছরই একটি অংশে নৌকা ছাড়া পারাপার হওয়া যায় না।
গাজীবাড়ি গ্রামের বেশির ভাগ নারী-পুরুষ পোশাক শ্রমিকরা শিমুলিয়ার গোহাইলবাড়ি, রণস্থল, জিরানী বাজার ও ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় চাকরি করে থাকেন। যার ফলে প্রতিদিন তাদের এই নদী পার হতে হয়। নদী পার হলেই আবার বর্ষা মৌসুমে কাঁদামাটি মাড়িয়ে এবং গ্রীষ্মকালে ধূলোবালিতে মেখে অসহনীয় দূর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয়।
গাজীবাড়ি এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এ অঞ্চলে নেই কোন উচ্চ বিদ্যালয় কিংবা কোন কলেজ। এ অঞ্চলে নেই কোন বাজারও। তাই প্রাথমিকে পড়াশোনা শেষ করে এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে শত কষ্ট ভোগ করে শিক্ষার্থীদের যেতে হয় গোহাইল বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে। সেই সঙ্গে চাষিদের সবজীসহ নানা পণ্য বেচা-কেনা করতে যেতে হয় গোহাইলবাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে। বর্ষার ভরা মৌসুমে একাধিক নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা থাকলেও গ্রীষ্মকালে থাকে মাত্র দুটি নৌকা। তাও আবার রাত ১০টার পর পাওয়া যায় না। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের।
আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি-গাজীবাড়ি সড়কের নদীর অংশে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে পানি থাকলে স্থানীয় মাটি খেকোরা নদীর উপর বালু ফেলে তাতে চুঙ্গি দিয়ে দিয়েছে। যার ফলে নদীর উপর দিয়েই মাটির ট্রাক চলাচল করছে। এছাড়া অন্যান্য সময়ে এখানে ছোট ছোট খেয়া নৌকা থাকে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় বংশাই নদীর এ অংশে পানি অনেকটাই এরই মধ্যে কমে গেছে। কিন্তু পানি কম থাকলেও ছোট্ট দুটি নৌকা দিয়েই মানুষ পারাপার হতো। এছাড়া এখানে সেতু না থাকায় চলে না কোন পরিবহন বা রিকশা-ভ্যান। পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে পাড়ি দিতে হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা সড়ক হওয়ার কারণে গোহাইলবাড়ি থেকে গাজীবাড়ি ওই খাল পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তাটি দিয়ে মাটি খেকোদের বড় বড় ট্রাক আর ড্রাম ট্রাক চলার কারণে ধূলোয় নিমজ্জিত থাকে পুরো এলাকা।
লাভলু মিয়া নামের গাজিবাড়ী এলাকার এক যুবক বলেন, গোহাইলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি পদে চাকরি করি। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়েই কর্মস্থলে যেতে হয়। শুধু এখন নয় ছোট বেলা থেকেই গোহাইলবাড়ি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এখান দিয়ে চলাচল করি। বর্ষা মৌসুমে এখানকার একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা এবং শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা ছাড়া কোন উপায় নেই। তাও আবার খাল পারি দিতে হয় নৌকা দিয়ে। এদিকে, মাটি খেকোরা নদীর আশপাশ এবং ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে বিভিন্ন ইট ভাটায় সরবরাহ করছে। ফলে এ রাস্তাটিতে ধূলোয় জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে রাস্তার আশপাশের বাড়িগুলোতে বসবাস করা দূরুহ হয়ে পড়েছে।
গাজীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, গোহাইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছি। প্রতিদিন আমাকে গোহাইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে বাড়ি থেকেই যেতে হয়। তার মতো এ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এই পথ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে। যার মধ্যে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং পোশাক কারখানার শ্রমিকই বেশি। একটি সেতুর অভাবে কষ্ট সহ্য করে বছরের পর বছর ধরে মানুষজন এখান দিয়ে চলাচল করছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এ সড়কটি ছাড়া গোহাইলবাড়ি, জিরানী কিংবা যেকোনো স্থানে যেতেই এর বিকল্প কোন রাস্তা নেই। বর্ষায় নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন উপায় নেই। প্রায় শত বছর ধরে এই অবস্থায় চলাচল করছে এ এলাকার মানুষ।
তিনি বলেন, কোন মানুষ যদি অসুস্থ হয় তাহলে তাকে হাসপাতালে নিতে বেগ পেতে হয়। কারণ চলাচলের জন্য যে রাস্তা রয়েছে তা দিয়ে কোন যানবাহন কিংবা রিকশা পর্যন্ত চলাচল করে না। নদী পার হওয়া ছাড়া বিকল্প কোন সড়কও নেই। তবে সরকার যদি গোহাইলবাড়ি-গাজিবাড়ী সড়কের বংশাই নদীর (গাজিখালি) এই অংশে সেতু নির্মাণ করেন তাহলে এ অঞ্চলের লাখো মানুষের স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়বে।
রুবেল হোসেন নামের ওই এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা জন্মের পর থেকেই এ রাস্তার এ অবস্থা দেখে আসছি। রাস্তার পাশেই আমাদের বাড়ি। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে মাটি ভর্তি হাজারো ট্রাক ও ড্রাম ট্রাক চলাচল করে। যার ফলে রাস্তাটির এমন অবস্থা হয়েছে যে, শুষ্ক মৌসুমে ধূলোয় আচ্ছন্ন থাকে। এছাড়া গোহাইলবাড়ি-গাজীবাড়ি সংযোগস্থল বংশাই নদীর গাজিখালির এ অংশে ব্রিজ অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার কর্মমূখী মানুষ, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষজন গ্রীষ্ম ও বর্ষাসহ সব মৌসুমে কষ্ট করে চলাচল করে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করে সরকার এলাকাবাসীর দুঃখ দূর করবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক বলেন, ওই ব্রিজটার আগে যে প্রজেক্টটা ছিল, সেই প্রজেক্টটা ক্লোজ হয়ে যাচ্ছিল যেটা আর রান করবে না বা এক্সটেনশন হবে না। সে জন্য সমগ্র বাংলাদেশ ব্রিজ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন একনেকে প্রজেক্টটা অনুমোদন হলে কার্যক্রম চালু হবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী জুন মাস নাগাদ একটা পজেটিভ নিউজ পাব।
-এআই/এমএ