For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

কালিহাতীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে

Published : Monday, 14 March, 2022 at 3:14 PM Count : 259

টাঙ্গাইলেকালিহাতীতে নদীতে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে অবৈধ ভাবে বাংলা ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে দিবা-রাত্রি বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব চলছে। যার ফলে হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী বসতবাড়ি, বিদ্যালয়, বাজার ও বিভিন্ন স্থাপনা। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। 

গত কয়েক বছর যাবৎ অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী তীরবর্তী বাড়ি-ঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরিবেশবাদী ও স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত লৌহজং নদীর গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের যোকারচর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে শতাধিক বাংলা ড্রেজার বসিয়ে ও ভেকু দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের হীনস্বার্থে প্রশাসনিক নির্দেশনা অমান্য করে সরকারি নিলামকৃত বালুর ভিটি কেটে রাস্তা নির্মাণ ও বালু বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধ বাংলা ড্রেজার ও ভেকু বসিয়ে বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন শত শত ট্রাক, ড্রাম ট্রাকে বালু বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় মাছুদ সরকার ও নুরুল ইসলাম মেম্বার প্রমুখ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, ইতিপূর্বে ওই স্থানে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদকারীদের উপর হামলা ও বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। কোন সময় কিছু বলতে গেলে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়। বালু খেকোরা প্রকাশ্যে বলে বেড়ায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও এমপি সাহেবের লোকেরা এ বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউ রিসিভ করেননি। 

এদিকে, খনন প্রকল্পের নাম নিয়ে উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার এলেঙ্গা বাজার সেতু সংলগ্ন স্থানে ১৫-২০টি বাংলা ড্রেজার বসিয়ে ও ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেখানে গত সপ্তাহে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চললেও পর দিন থেকে পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। দিনে বালু উত্তোলন ঢিলেঢালা চললেও রাতে বালু উত্তোলন চলে পুরোদমে। এলেঙ্গা অঞ্চলে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় মাজেদুর রহমান, মান্নান, গোলাপ হাজী প্রমুখ। 

অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে কালিহাতীর পৌলী নদীর ওপর বিপুল অর্থে নির্মিত মহাসড়ক ও রেল সেতুর অদূরে ভেকু বসিয়ে বালু কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পৌলী সেতু ও শহর রক্ষা বাঁধ। বালু উত্তোলনের স্বার্থে রাস্তার ধারে সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে। যেখানে উল্লেখ- “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য হাইকোর্ট অনুমোদিত, রিট পিটিশন নং-১১২০/২০০৯, এখানে নিজ ভুমি থেকে মাটি অপসারণ করা হয়। যোগাযোগ- ০১৭১৬০৮০০৯০৯।” 

তবে, সাইবোর্ডে উল্লেখিত রিট পিটিশন নং মোতাবেক হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে খুঁজে জানা যায়, পিটিশনটি মূলত পৌলী গ্রামের মৃত একাব্বর আলীর নামে। তিনি বেশ কয়েক বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইতিপূর্বে বালু উত্তোলনের ফলে পৌলীসহ আশপাশের এলাকার শতাধিক পরিবারের ভিটে-বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। রেল সেতুর দু’পাশের নিচ থেকে মাটি সরে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। গত বর্ষা মৌসুমেও মহাসড়কের উপর নির্মিত পৌলী সেতুর দক্ষিণের অ্যাপ্রোচে ধ্বসের ঘটনা ঘটে। গ্যাস পাইপ ফেটে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কিছুদিন বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ থাকে। 

জানা যায়, পৌলী অঞ্চলে অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য ও স্থানীয় এমপির নিকট আত্মীয় খন্দকার আব্দুল মাতিন, সহদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান খান (ফরিদ), স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফির নেতৃত্বে এলেঙ্গা পৌরসভার বিএনপি ঘরোনার উজ্জ্বল সরকার, ওয়ার্ড আ.লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। 

তবে বালু ব্যবসায়ী ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, 'আমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। শুধু ভেকু ভাড়া দিয়েছি মাত্র।'

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান হোসেন বলেন, 'শুনেছি রিটের বাহানায় ঘাট চালাচ্ছে স্থানীয় কিছু লোকজন।'

এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নূর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, 'কিভাবে কে বালু উত্তোলন করছে আমি কিছুই জানি না। পৌরসভা থেকে কেউ কোন ছাড়পত্র গ্রহণ করেনি।'

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, 'আমার জানামতে আওয়ামী লীগের কেউ বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নেই। তবে কেউ কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি বা কোন জনপ্রতিনিধির নাম ব্যবহার করে থাকলে তা একান্তই তাদের। বিষয়টি আমি আইন-শৃঙ্খলার মিটিং এ উপস্থাপন করেছি।'

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'নদীতে বাঁধ দেয়ার এখতিয়ার কারোর নেই। আমি ঢাকাতে আছি। পৌলীতে বালু উত্তোনের বিষয়ে আমি আবগত নই। এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুসেইন বলেন, আমি কালিহাতীতে যোগদানের পর অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আসছি। এসিল্যান্ড বর্তমানে প্রশিক্ষণে আছেন। আমাকে একা বিষয়গুলো দেখতে হয়। অবৈধ সকল বিষয়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে।'

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,