জয়পুরহাটে স্ট্রবেরি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
Published : Saturday, 12 March, 2022 at 12:37 PM Count : 185
স্বুস্বাদু আর পুষ্টিকর ফল স্ট্রবেরি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। বাণিজ্যিকভাবে এখন স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে উত্তারাঞ্চেলের এ জেলায়। জেলার মাটি আর আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী হওয়ায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে স্ট্রবেরির চাষাবাদ।
অন্যান্য ফসলের তুলনায় স্ট্রবেরি চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এ জেলার কৃষকরা। এখানকার উৎপাদিত স্ট্রবেরি জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। ৭ বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে জয়পুরহাট জেলার চান্দা এলাকায় ছোট পরিসরে একজনের মাধ্যমে স্ট্রবেরি চাষ শুরু হলেও এখন চাষির সংখ্যা ৮০ জন। চাষ হচ্ছে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে। সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে বর্তমানে চাষ হচ্ছে বিদেশি ফল স্ট্রবেরি। গ্রামগুলো হচ্ছে- কালীপাড়া, আওয়াল দেওনা, ইমনিপাড়া, চান্দা ও কুমারপাড়া।
স্ট্রবেরি চাষের কারণে ওই এলাকার নতুন নাম হয়েছে এখন স্ট্রবেরি গ্রাম হিসাবে। এখানে বাণিজ্যিকভাবেই গড়ে ওঠা রেডগ্রীন স্ট্রবেরি ভিলেজ থেকে প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২০০ কেজি স্ট্রবেরি যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। স্ট্রবেরি চাষের সফলতা দেখে কৃষকের পাশাপাশি অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরাও এই স্ট্রবেরি চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে।
প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পড়লেও বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। যা অন্য কোনো ফসল থেকে আয় করা সম্ভব নয় বলে জানান কৃষকরা।
কালীপাড়া গ্রামের স্ট্রবেরি চাষি রেজুয়ান হোসেন জানান, দুই বিঘা জমিতে এবার স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে ৪ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন আরও এক-দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও স্ট্রবেরির চারা বিক্রি করে ২ লাখ টাকা বাড়তি আয় করেছেন রেজুয়ান। একেকটি চারা বিক্রি করা হয় ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। রেজুয়ান হোসেনের সফলতায় প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম ২ বিঘা জমিতে, আজিজুল ইসলাম ৫৫ শতাংশ জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন বলে জানান।
বর্তমান বাজারে খুচরা প্রতিকেজি স্ট্রবেরি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি সুবিধা হচ্ছে স্ট্রবেরি নিয়ে কৃষকদের বাজারে যেতে হয় না। স্ট্রবেরি বাগান থেকে আড়ৎদাররা কিনে নিয়ে যায়। স্ট্রবেরি চাষ অর্থনৈতিকভাবে অত্যধিক লাভবান হওয়ায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাত বছর আগে জামালপুর এলাকার শিক্ষিত চার যুবক আব্দুল ওয়াদুদ, আব্দুল হামিদ, রবিউল ইসলাম ও ফারুক হোসেন বাবু প্রথম দিকে স্ট্রবেরি চাষে সফলতা অর্জন করায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুষ্টি ও ওষুধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ এই স্ট্রবেরি চাষ।
স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশন এবার ২০ জন স্ট্রবেরি চাষির মাঝে স্বল্প সুদে ১০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেছে বলে জানান জামালগঞ্জ শাখার ম্যানেজার তোফায়েল হোসেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহায়তায় স্ট্রবেরি চাষিদের কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে জাকস ফাউন্ডেশন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জয়পুরহাটের মাটি স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী। জেলায় এবার প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে পুষ্টি ও ওষুধী গুণসম্পন্ন স্ট্রবেরির চাষ হয়েছে। জয়পুরহাট জেলায় এবার ৫ কোটি টাকার স্ট্রবেরি বেচাকেনা হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি স্ট্রবেরি চাষ সম্প্রসারনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এসআই/এনএন