For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

সংকটাপন্ন প্রাণবৈচিত্র

খিরুর দূষণ ছড়াচ্ছে শীতলক্ষ্যায়

Published : Friday, 11 March, 2022 at 10:08 PM Count : 234

স্বচ্ছ পানি ও আচরণ শান্ত, এমন পরিচিতি ছিল শীতলক্ষ্যার। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও কাপাসিয়ার বুক চিড়ে চলা এই নদী তার স্বকিয়তা হারিয়েছে বহুপূর্বেই। আর এখন শিল্প বর্জ্যের দূষণে নদীটি তার অস্তিত্বের সাথে যুদ্ধ করতে শুরু করেছে।

কয়েক বছর ধরে গাজীপুরের উত্তর সীমান্তের ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা শিল্পাঞ্চলের দূষিত তরল বর্জ্য সেখানকার খিরু নদীর মাধ্যমে প্রবেশ করছে গাজীপুরের শীতলক্ষ্যায়।  বর্ষার পর যখন প্রবহমান পানির ধারা থেমে যায় তখনই নদীটি পরণত হয় মৃত্যুপুরিতে। নদীকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা জলজপ্রাণীগুলোও আর তখন টিকতে পারে না। প্রতিবছরের (মার্চ, এপ্রিল, মে) এ তিন মাস দূষিত শিল্প বর্জ্যের কারণে নদীটির জলজপ্রাণীগুলোও ভেসে উঠে। একসময়ের দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের উৎস্যস্থল হিসেবে শীতলক্ষ্যাকে বিবেচনা করা হলেও এখন মাছের দেখাও মেলে না। শীতলক্ষ্যা ঘিরে জীবন ও জীবিকাও যেন থমকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবী শীতলক্ষ্যার দূষণ বন্ধ করতে হবে, এখানকার মানুষের বেঁচে থাকার তাগিদেই।

নদী গবেষকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দেশের উত্তর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ময়মনসিংহ জেলার একটি নদী খিরু নদী।  ডাকাতিয়া নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া এ নদীটি ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শ্রীপুরের সোনাব এলাকায় সুতিয়া নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। পরে সুতিয়া শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নান্দিয়া সাঙ্গুন ত্রিমোহনী এলাকায় শীতলক্ষ্যার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। ভালুকা শিল্পাঞ্চলের দূষিত পানি দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষিরু নদীর মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে শ্রীপুরের মধ্য দিয়ে শীতলক্ষ্যায় প্রবেশ করছে। বর্ষায় নদীর স্রোত থাকায় দূষণের তেমন কোন প্রভাব না থাকলেও বর্ষা চলে গেলে বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে পড়ে নদীর পানি। এতে জলচর প্রাণীর জীবন সংকটে পড়ে। গত দুই বছর ধরে শীতলক্ষ্যায় নানা জীববৈচিত্র বিষাক্ত পানিতে টিকতে না পেরে ভেসে উঠে মারা যাচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই পরিদর্শণ করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও কার্যত কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়নি।  প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও শিল্প বর্জ্যের হুমকীতে রয়েছে এ নদীর জলজপ্রাণী। দূষণ বন্ধে স্থানীয়রা নানা ধরনের আন্দোলন করে গেলেও ফল মেলেনি।

কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ বলেন, এ শীতলক্ষ্যা নদীর সাথে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা। দেশীয় নানা প্রজাতির মাছের উৎস্য এ নদী। কৃষি অর্থনীতির চালিকা শক্তিও এ নদী। কয়েক বছর ধরে নদীর দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। নদীর পানি কালো হয়ে গেছে, দুর্গন্ধ তৈরী হয়।  মাছ ধরা সহ নদী কেন্দ্রীক জীবন ও জীবিকা চালানো অনেকেই এখন পেশা পরিবর্তন করে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে। চোখের সামনেই আমাদের ঐতিহ্যের ধারক শীতলক্ষ্যার মৃত্যু দেখতে হচ্ছে।

কাওরাইদ এলাকার নুরুল হুদা মোড়ল বলেন, খিরুর দূষণে আমাদের সুতিয়া নদীও পড়েছে। নদী কেন্দ্রীক কৃষি অর্থনীতিও এখন অনেকটা থমকে গেছে। চোখের সামনেই প্রতিনিয়তই নদীর গুরুত্ব কমতে দেখছি। দূষণের কারণে নদীতে এখন মাছও মেলে না।  এখন মানুষের নজর নদীর দখলের দিকে।    

নদী গবেষক মোহাম্মদ এজাজের মতে, শিল্পকারখানা কর্তৃক দূষণের কারণেই  বর্তমানে শীতলক্ষ্যার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বর্ষাকালে দূষণের উৎসগুলো বের করা না গেলেও বর্ষার পর দূষণের উৎস খুঁজে বের করে প্রশাসনের উচিৎ ছিল এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার। প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিবছরই শীতলক্ষ্যার জলজ প্রাণীগুলো মারা যায়। বর্ষা থেমে গেলে নদীর প্রবহমান ধারাও বন্ধ হয়ে যায়। নদীর তলদেশে বিষাক্ত গ্যাসের তৈরী হয়। সাথে শিল্পকারখানার নানা ধরনের বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে নদীর ভেতরের পরিবেশ মৃত্যুপুরীতে রুপান্তর হয়। তখন প্রাণীর জীবন ও জীবিকার সংকট তৈরী হয়।  একটি নদী আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যেমন ব্যাপক অবদান রাখে তেমনি  নদী কেন্দ্রীক জীববৈচিত্রও আমাদের নানা ভাবে সহায়তা করে।

এ গবেষকের দাবী, শিল্পকারখানা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে যে ভূমিকা রাখে এর চেয়ে বেশী ক্ষতি করে পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস করে।

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, শীতলক্ষ্যা বাঁচাতে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্নভাবে সামাজিক আন্দোলন করে যাচ্ছি। অথচ প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে আজও শীতলক্ষ্যার দূষণ বন্ধ হচ্ছে না। গতবছর যদি প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিত, তাহলে এবার আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। শীতলক্ষ্যার পানি এখন বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানির কারণে এখন দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা তৈরী হয়েছে। কৃষি অর্থনীতিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, শীতলক্ষ্যা দূষণের বিভিন্ন উৎসস্থল চিহিৃত করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। সীমিত জনবল দিয়ে আমাদের কাজ করতে গিয়ে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হচ্ছে। এর পরও আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই দূষণ বন্ধ করতে পারবো।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান বলেন, নদীর দূষণের উৎসগুলো চিহিৃত করা হবে। সাথে কলকারখানাকেও শতভাগ ইটিপি ব্যবহারে নজরদারীর আওতায় আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। নদীর দূষণ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।

এসআর





« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,