For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

দফায় দফায় মেধাতালিকা প্রকাশ করেও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

Published : Saturday, 5 March, 2022 at 3:40 PM Count : 453

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে প্রথমবারের মতো ২০২০-২১ সেশনে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে কয়েক দফায় মেধাতালিকা প্রকাশ করেও প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পন্ন এবং প্রথম বর্ষের ক্লাশ শুরু করতে পারেনি।

শিক্ষার্থীদের অভিয়োগ, ‘একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার কারণে বাড়তি চাপ বেড়েছে। শুধু এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়াত হয়। আবার মাইগ্রেশন প্রক্রিয়াও অনেক দীর্ঘমেয়াদি। এতে প্রতিবার মাইগ্রেশনে গুনতে হয়েছে আলাদা ফি।’ 

এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষার্থী, ভর্তিকৃত নতুন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের মাঝেও গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া। তাদের দাবি- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক আবেদনে ভর্তি না নেওয়ায় ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

অর্থ সাশ্রয় এবং ভোগান্তি লাঘবের জন্য গুচ্ছের আওতায় একটিমাত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও পরবর্তীতে আসন নিশ্চিতের জন্য শিক্ষার্থীদের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন করতে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এ পদ্ধতিতে ভোগান্তি লাঘবের নামে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নতুন সঙ্কটে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমার পরিবর্তে বেড়েছে। স্বস্তির বদলে বেড়েছে মানসিক চাপ। তাই যেকোনো মূল্যে ভোগান্তি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে, একই শিক্ষার্থী কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের পর যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ফলে পরবর্তীতে নতুন আসন শূন্য হয়। ফলে সিরিয়ালের পেছনের দিকের শিক্ষার্থীদের ভালো সাবজেক্টের আশায় কয়েকবার মাইগ্রেশন করতে হয়। প্রতিবার মাইগ্রেশনের জন্য নতুন করে টাকা খরচ করতে হয়।

জানা যায়, গত বছরের ১৭ অক্টোবর ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম। পরে ২৪ অক্টোবর ‘খ’ ইউনিট এবং ০১ নভেম্বর ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও অনেক শিক্ষার্থী এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়েছে।

পরে পরীক্ষার ফলাফলে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে পছন্দ অনুযায়ী একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়েছে তাদের। কিন্তু ভর্তি সম্পন্নের ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন বিড়ম্বনা। গুচ্ছের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১০ম, ৪র্থ এবং ৫ম ধাপে মেধাতালিকা প্রকাশ করেও নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারেনি। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র একই। ফলে গুচ্ছ পদ্ধতির এ ভর্তি পরীক্ষার কার্যকারিতা এবং যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে।

জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চমবারের মতো মেধাতালিকা প্রকাশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এতে এক হাজার ৪০ আসনের বিপরীতে এখনও খালি রয়েছে ৮৪টি। যেখানে মোট ভর্তি হয়েছে ৯৫৪ জন শিক্ষার্থী। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ ধাপের ভর্তি কার্যক্রম শেষেও চারুকলা ও আরবি ভাষা সাহিত্য বিভাগ বাদে এক হাজার ৯৮৬টি আসনের মধ্যে তিনটি ইউনিটে ৪৬৮টি আসন খালি রয়েছে। 

এদিকে, পহেলা মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম মেধাতালিকা প্রকাশ করেছে। এতে ১৯০টি আসন ফাঁকা রয়েছে। দুই হাজার ৭৬৫টি আসনের বিপরীতে মোট ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৫৭৫ জন শিক্ষার্থী। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম ধাপের ভর্তি কার্যক্রম শেষে এক হাজার ৭০৩টি আসনের বিপরীতে ফাঁকা রয়েছে ২৮৬টি আসন। এছাড়াও গুচ্ছভুক্ত প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক ধাপে মেধাতালিকা প্রকাশ করেও শেষ করতে পারেনি ভর্তি কার্যক্রম।

এমনকি হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করতে পারেনি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ক্লাস শুরু হওয়ার কোন সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা হয়নি। ১০ম বারে মেধাতালিকা প্রকাশ করেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ০৮ মার্চ থেকে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা করছে। এমনকি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের আওতায় তাদের স্বাভাবিক ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

গুচ্ছের আওতায় পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগ আহমেদ বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। যেখানে আগে পছন্দ অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা এবং ভর্তির সুযোগ থাকত এ পদ্ধতিতে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দফা ভর্তির জন্য টাকা জমা দেওয়া এবং ভাইবা দিতে হয়েছে। যেখানে অধিক অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি পোহাতে হয়েছে প্রচন্ড মানসিক চাপ। আবার এতো দীর্ঘ সেশন জট নিয়ে ভর্তি হয়েছি পরবর্তীতে কেমন হবে সেটি নিয়েও চিন্তিত।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো সংস্কৃতির আদান প্রদানের অন্যতম আসর। যেখানে একটি শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নিজের সংস্কৃতির স্বকীয়তা সম্পর্কে অন্যদের জানান দিতে পারে। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেখা যায় ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থী স্থানীয় অঞ্চলের। ফলে সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সম্প্রীতির আদান-প্রদান হুমকির মুখে পড়বে।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আমরা বর্তমানে চতুর্থ ধাপে শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। গুচ্ছ পদ্ধতিতে এবার নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এ পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে কিংবা এর নেতিবাচক দিক কোনগুলো রয়েছে সে বিষয়ে বিস্তর আলোচনার প্রয়োজন। আপাতত আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কোন কিছুই বলতে পারব না।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন বলেন, আমি দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। যদি গুচ্ছ পদ্ধতি আমাদের জন্য খারাপ হয় তাহলে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। আলোচনা ছাড়া কোন কিছু বলা যাবে না। তবে যেহেতু প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে আমরা এর সম্ভাব্য ইতিবাচক এবং নেতিবাচক সকল দিক বিবেচনায় রাখব।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, আমরা প্রথম বার গুচ্ছের আওতায় ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছি। তবে এবারের পরীক্ষায় সরাসরি কমিশন কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর সমস্ত দায়িত্ব প্রদান করেছিলাম। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি সময় ব্যাহত এবং ভর্তি নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই আমরা চিন্তা ভাবনা করছি বিষয়টিকে আরও পরিমার্জিত করা যায় কি না? এমনও হতে পারে পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষা সরাসরি মঞ্জুরি কমিশন পরিচালনা করবে। এবং এখানে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য থার্ড পার্টি কোন এজেন্সি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে সব বিষয়ে আমি এখনি কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারছি না। আমরা সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করছি। সুষ্ঠু পদক্ষেপ আসবে বলে আশাবাদী।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,