For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ভালবাসায় তারা বেঁচে থাকুক প্রিয় মানুষের সঙ্গে

Published : Monday, 14 February, 2022 at 11:29 AM Count : 459

ভালোবাসা মানে একসঙ্গে পথচলা। ভালোবাসা মানে পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব না কষে কেবল একে অপরকে ভালবাসা। প্রিয়জনের সঙ্গে বিপদে-আপদে একসঙ্গে থাকার নামই ভালোবাসা। একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায় প্রিয় মানুষটার সঙ্গে। 

রংপুর নগরীর বাহার কাছনা এলাকার রিকশাচালক আব্দুল মতিয়ার রহমানের সংসার ৫১ বছরে পা দিয়েছে। ৭৭ বছর বয়সী এই রিকশাচালকের সহধর্মীনি মাহমুদার সঙ্গে সুখে দুঃখে কেটে গেছে একান্নটি বসন্ত। 

রোববার মতিয়ার রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মতিয়ার তার স্ত্রীর গোসলের জন্য চুলায় পানি গরম করছেন। মাটির চুলায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন ইউক্যালিপ্টাসের পাতা। নাতনি শহীদাকে বলে দিচ্ছেন কলপাড়ে নানীর কাপড় রেখে আসতে। সকাল থেকে রিকশা চালিয়ে দুপুরে এক ফাঁকে বাড়িতে এসেই স্ত্রীর যত্নের শেষ নেই। 

রিকশার গদির নীচে মতিয়ার রহমান বড়ই নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান স্ত্রী মাহমুদা বেগম।
মতিয়ার-মাহমুদার আড়াই শতক জায়গায় দুটি চালা ঘর। সম্বল বলতে একটি রিকশা। ৫১ বছরের এই সংসারে তিনটি মেয়ে বেঁচে আছেন, পাঁচ সন্তান মারা গেছেন। বড় ও ছোট মেয়ের ঘর-সংসার ঠিক চললেও মেঝ মেয়ে তার ছেলে জসীম আর মেয়ে শহীদাকে নিয়ে ফিরে এসেছেন বাবার বাড়ি। নাতনীর বয়স ১৪ পেরিয়েছে। বিয়ে দিতে হবে তাই একগাদা চিন্তা মাথায়। 

মতিয়ার ও মাহমুদা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছুদিন আগেই তাদের বিয়ে হয়েছে। পরিবারের পছন্দেই তাদের বিয়ে হয়। 

মতিয়ার রহমান বলেন, ‘সে দিনের কথা কি ভোলা যায়? ০৩ মার্চ রংপুরত গোলাগুলি করিল পাকিস্তানী আর্মি। তাতে একটা হিন্দু চ্যাংড়াক (শংকু সমজদার) মারি ফেলাইল। চারপাশে মাইনসের সে কি দৌড়াদৌড়ি। হামরা সোগসময় (সবসময়) পাকিস্তান কোম্পানির (বর্তমানে জাহাজ কোম্পানি) অতি দাড়ে এগুলা শুনছিনো। তারপরের শোকরবারে (শুক্রবার) মুই বিকাল বেলা বাড়িত আসি দেখ বাড়িত মেলা মাইনষের ভিড়। শোন মোক বিয়াও কইরবার যাওয়া লাগবে। তারপরে আত্মীয়-স্বজন সবার কাছত মাফ চায়্যা দোয়া নিয়্ রাইতোত বিয়্যাও কইরবার গেনো (আত্মীয়-স্বজন সবার কাছে মাফ চেয়ে দোয়া নিয়ে রাতে বিয়ে করতে গেছি)।  

মাহমুদা বেগম বলেন, ‘অভাব-অনটনের সংসারোত হামার ভালোবাসা অভাব নাই (অভাব-অনটনের সংসারে আমাদের ভালোবাসার অভাব নেই)। ওমরা সারাদিন রিকশা চলে আসিয়াও মুই প্রেসারের ঔষদ খাচু কি না জিজ্ঞাস করে (তিনি সারাদিন রিকশা চালিয়ে এসেও আমি প্রেশারের ঔষদ খেয়েছি কি না জিজ্ঞাস করে)। না খাইলে রাইতোত (রাতে) ঘুম থাকি তুলিয়া হইলেও মোক (আমাকে) ঔষদ খিলায়। এত কষ্ট করে সারাদিন তাও সোগসময় মোর খোঁজ থোয় (নেয়)।

একাত্তরের যুদ্ধ, ৭৪ এর মঙ্গা, দারিদ্রতার কষাঘাত সবকিছুর কষ্ট যেন ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মতিয়ার-মাহমুদা। 

মতিয়ার রহমান বলেন, বিয়ার পর দ্যাশের (দেশের) অবস্থা তেমন ভাল ছিল না। নুন (লবন) কিনবার টাকা তখন আছিল না। নুনের কেজি ৫০-১০০ টাকা। চিনি দিয়া ভাত খাছি। কতদিন যে কচুর মাইজ, কচুর ড্যারা, মাল্লির কচু, কলার খায়্যা আছনো। বেচারি মোর কাছ থাকি তখন কিছুই চায় নাই। কোন অভিযোগ করে নাই।

মাহমুদার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মতিয়ার বলেন, আগোত (আগে) ওয় দেখতে খুবে সোন্দর (সুন্দর) আছিল। গায়ের গোড়া রং এ্যালা কালা হয়্যা গেইছে (গায়ের সাদা রং এখন কালো হয়ে গেছে)। পাঁচটা ছাওয়া (সন্তান) মারা যাওয়ার পর থাকি ওয় বোবার হওয়ার মতো হয়্যা গেইছে।

মাহমুদা বেগম বলেন, সংসারোত ঝগড়া ঝাটি মেলা হয়। সেই বলে কি রাগ করি থাকা যায়? ঝগড়া না হইলে মায়া বোঝমো (বুঝবো) কেমন করি। বুড়াটা মোক এতদিন ধরি আগলে থুইছে (বুড়াটা আমারে এতোদিন ধরে আগলে রাখছে)। উয়ার (তার) কষ্ট কোন দিন দেখায় নাই। 

মতিয়ার-মাহমুদা বেগমের সংসারে না আসলে ভালবাসার প্রকৃত অর্থ যেন বোঝা যায়না। বাংলাদেশে প্রতিদিন যখন কোথাও না কোথাও ডিভোর্সের কারণে অনেক দম্পত্তির সংসার ভাঙার সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে মতিয়ার-মাহবুবা বেগমের মতো একটি সংসার যেন ভালবাসার উদাহরণ। ভালবাসায় তারা বেঁচে থাক প্রিয় মানুষের সঙ্গে।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,