ঢাকা-দশমিনা-পায়রাবন্দর (কলাপাড়া) ও ঢাকা-দশমিনা-রাঙ্গাবালী নৌ রুটের লঞ্চগুলোর ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের খাবার তৈরিসহ পরিবেশন করা হয় যাত্রীদের। দামও নেয়া হয় অতিরিক্ত।
বোতলজাত পানিসহ প্যাকেটজাত ও অন্যান্য সকল পণ্যের পরিমাণ ও আকার ভেদে গায়ে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেয়া হয়। নেই কোন সঠিক মূল্য তালিকা।
এ রুটের প্রতিটি লঞ্চেই চায়ের ক্যান্টিন ও খাবার হোটেল একটি করে থাকায় নদীর মধ্যে যাত্রীদের ইচ্ছানুযায়ী অন্য কোথাও থেকে কেনা বা খাওয়ার সুযোগ নেই। তাই যে সকল যাত্রীরা সঙ্গে করে খাবার, পানিয় এবং শুকনো খাবার না আনেন তাদের বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে খাবার কিনতে হয় বলে অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী।
এ ব্যাপারে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে দশমিনা হাজির হাট লঞ্চঘাট থেকে ঢাকাগামী এমভি ইয়াদ ও এমভি জাহিদ-৮ লঞ্চে গিয়ে দেখা যায়, খাবার হোটেল ও চায়ের ক্যান্টিনের মান ভাল নয়। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি ও পরিবেশন করা হচ্ছে খাবার। খাবার টেবিলের নিচে রয়েছে অপরিস্কার গ্যাস সিলিন্ডারের সংযোগ পাইপ।
খাবার হোটেল সংলগ্ন পেছনেই রয়েছে নিচতলার ডেকের সাধারণ যাত্রীদের জন্য অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা টয়লেট। তার পাশেই বাবুর্চীকে সবজি কাটতে ও রান্না করতে দেখা যায়। হোটেলে ঢাকনাবিহীন ড্রাম ভর্তি খোলা পানি ও খাবারগুলো রাখা হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। লঞ্চের কেবিনগুলোতে যাত্রীদের খাবার দেয়ার সময় কোন ঢাকনা ছাড়াই আনা নেয়া করে কেবিন বয়রা।
হোটেল ও ক্যান্টিনের মালিক সূত্রে জানা যায়, ক্যান্টিনগুলোতে ছোট এক পিস মুরগীর মাংস ১৩০ টাকা, বাইরে সাধারণ হোটেলে যার দাম ৬০/৭০ টাকা। প্রতি পিস রুই মাছ ১২০ টাকা, পোয়া মাছ ১৩০ টাকা, আইড় মাছ ১৩০ টাকা, ইলিশ মাছ ১২০ টাকা, ছোট এক বাটি সবজী ৩০ টাকা, ডাল ৩০ টাকা, প্রতি প্লেট ভাত ২০ টাকা, প্রতি কাপ চা ১৫-২০ টাকা, কফি ৩০ টাকা।
আকার ও মান অনুযায়ী সব খাবারের দাম যেকোনো সাধারণ হোটেল ও ক্যান্টিনের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ।
ঢাকাগামী এমভি ইয়াদ লঞ্চের যাত্রী উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা মামুন আহম্মেদ অবজারভারকে বলেন, 'আমি নিয়মিত এ রুটের লঞ্চগুলোতে চলাচল করি। এসব লঞ্চের খাবারগুলো একদিকে অস্বাস্থ্যকর ও অপরদিকে দামও বেশি। তাই আমি দু'বছর ধরে লঞ্চের কোন খাবার খাইনা। খাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসি।'
ঢাকাগামী এমভি জাহিদ-৮ লঞ্চের কেবিনের যাত্রী মো. আকিব বলেন, 'আমরা বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসি। লঞ্চে খাইনা।'
এমভি জাহিদ-৮ লঞ্চের হোটেল ও ক্যান্টিন মালিক মো. মিলন বলেন, 'আমি প্রতি আপ-ডাউন ট্রিপে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে তিন হাজার পাঁচশত টাকা দেই। সে অনুযায়ী বেশি দাম নেই না।'
জানতে চাইলে এমভি ইয়াদ লঞ্চের ইন্সপেক্টর আবদুর রহমান তাড়াহুড়ো করে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বলেন, 'লঞ্চে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি হয় না।'
এমভি জাহিদ-৮ লঞ্চের ইন্সপেক্টর শাহআলম বলেন, 'লঞ্চে কোন খাবারের অতিরিক্ত দাম নেয়া হয় না।'
নৌ-পুলিশ দশমিনা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আনিসুর রহমান অবজারভারকে বলেন, 'এ ব্যাপারে আমাদের দায়িত্ব থাকলেও প্রধান দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ’র।'
বিআইডব্লিউটিএ পটুয়াখালীর পোর্ট অফিসার মো. মহিউদ্দিন মুঠোফোনে অবজারভারকে বলেন, 'লঞ্চে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশন আমাদের দেখার বিষয় না। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় মোবাইল কোর্ট ব্যবস্থা আছে। তারা এগুলোর জন্য ব্যবস্থা নিতে পারবেন।'
ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দশমিনা আবদুল কাইয়ূম মুঠোফোনে অবজারভারকে বলেন, 'বিষয়টি অতি দ্রুত খতিয়ে দেখে ত্রুটি পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
-এমএ