For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

কৃষি জমির মাটি দুই নেতার ভাগাভাগি

Published : Wednesday, 5 January, 2022 at 2:46 PM Count : 412

গাজীপুরেকালীগঞ্জের কালাইলের বিলের কৃষি জমির মাটি ভাগ ভাটোয়ারা করে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। মাটি কেটে নেওয়ায় ওই বিলের পাঁচ শতাধিক বিঘা কৃষি জমির ফলন বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে। 

কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না প্রভাবশালী ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে। 

মাটি কাটার ঘটনায় জড়িত ওই দুই নেতার নাম ম. বজলুর রহমান ও মো. আলামিন আকন্দ। দু’জনের বাড়িই কালীগঞ্জ পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের দুবার্টি গ্রামে। 

বজলুর রহমান গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। আলামিন পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছৃক স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, বর্ষায় বিলে প্রচুর পানি থাকে। আর বর্ষার পানি শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে কেউ সবজি, আবার কেউ ধান চাষের জন্য প্রস্তুতি নেন। কিন্তু ওই দুই নেতার নেতৃত্বে গত দুই/তিন মাস ধরে কালাইলের বিলের দুর্বাটি উত্তরপাড়া ও বৈরাইল এলাকায় দুটি এস্কেভেটর (ভেকু) লাগিয়ে চার-পাঁচজন শ্রমিক নিয়োগ করে কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এই চক্রটি বিগত তিন/চার বছর ধরে এই কাজ করে যাচ্ছে। তারা প্রতিদিন ১৮-২০টি লড়ি মাটি টানার কাজে লাগানো হয়েছে। আর দিনে একটি লড়ি কমপক্ষে ৮/৯ বার মাটি বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছে। লড়ি দিয়ে এই মাটি নিয়ে যাওয়ার ফলে একদিকে যেমন রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে ওই বিলের পাঁচ শতাধিক বিঘা জমির কৃষি উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। মাটি কেটে বিক্রি করে দেওয়ায় প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

তারা আরও জানান, ওই বিলে একটি সেলু মেশিন (গভীর নলকূপ) রয়েছে। আর সেটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আরমান আকন্দ পরিচালনা করেন। কৃষকদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে প্রতিদিন লড়ি চলাচলে মাটি নিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে বিধায় আ’লীগ নেতা আরমান সেলু মেশিনটি (গভীর নলকূপ) বন্ধ রেখেছেন। যে কারণে কোন কোন কৃষক ফসল উৎপাদন করতে চাইলেও পানির কারণে তা বন্ধ রয়েছে। তারা এবার জমিতে কোন ফসল চাষ করতে পারেননি। মাটি কাটতে অনেক নিষেধ করা হলেও নেতারা তা শোনেননি। বাধা দিতে গেলে ওই নেতারা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।

বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালাইলের বিলের দুর্বাটি উত্তরপাড়া ও বৈরাইল এলাকায় ২০-২৫ একর ফসলি জমি থেকে এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে জমির বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ ফুট গভীর গর্ত করা হচ্ছে।

দুর্বাটি গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, বজলু ও আলামিন বিলের কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। তাদের বাধা দিলে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে।

একই গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুল হক বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়াতে জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবাদ করায় নেতারা বলেছে মাটি কাটা শেষ হলে ভেকু দিয়ে ঠিক করে দেবে। মাটি কেটে নেয়ায় জমিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে গেছে। এ কারণে এই বছর আর জমিতে ফসল করতে পারব না।

দুবার্টি গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, জোর করে ভূমিদস্যুরা তার জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। মাটি কাটতে বাধা দিলেও তারা কেটে নেবে। আমরা সাধারণ মানুষ তাদের সঙ্গে পেরে উঠবো না। বাধা দিতে গেলে নানা ধরনের হুমকি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। ওইসব কৃষি জমিতে এবার কোন চাষাবাদ করতে পারিনি। তাই ইচ্ছা করেই নিজের কৃষি জমির মাটি বিক্রি করে মাছের জন্য ডাঙ্গি (মাছ জমার স্থান) তৈরি করে ফেলেছি।

লড়ি চালক শাকিল, ছাব্বির, আতিক ও আরিফুল বলেন, পার্শবর্তী নরসিংদী জেলা থেকে লড়ি নিয়ে এসেছেন। সারাদিন মাটি কাটার কাজ করি। আর সন্ধ্যার পর দুবার্টি গ্রামে বজলু ও আলামিনের ব্যবস্থাপনায় রাত্রিযাপন করি।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আরমান আকন্দ বলেন, আলামিন আমার কৃষি জমির উপর দিয়ে লড়ির রাস্তা করার কারণে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। তাকে কয়েক দফা বাধা দিয়েছি। এরপরও সে শোনেনি।

তবে গভীর নলকূপ বন্ধ রাখার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। প্রতি রাতে গভীর নলকূপ চলে বলেও জানান তিনি। 

মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে আলামিন আকন্দ বলেন, 'কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে মাটি কাটছি। আর এর সঙ্গে শুধু আমি না আরও অনেকেই জড়িত।'
 
ম. বজলুর রহমান বলেন, 'কৃষি জমিতে মাটি জমে থাকলে তা কেটে নিলে কি হয়? এটার কি কোন আইন আছে? তাছাড়া কালীগঞ্জে শুধু তো আমি মাটি কাটছি না। আরও অনেক নেতারা কাটছে? শুধু আমার ব্যাপারে আপনাদের এতো আগ্রহ কেন?'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম বলেন, 'ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসসাদিকজামান বলেন, 'ভূমিদুস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,