For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

পরিবেশ বৈরিতায় ঝুঁকিতে বাবুই

Published : Sunday, 1 September, 2019 at 12:52 PM Count : 415

দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখিসহ এর সুদর্শন বাসা। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না। মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং আত্মনির্ভশীল হতে উৎসাহ যোগাত। কালের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ এ পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। 

এক সময় গ্রামগঞ্জের তাল, নারকেল ও খেজুর গাছে সুনিপুণ কারিগরের মতো বাসা বেঁধে থাকতো। প্রকৃতি থেকে তাল আর খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় শিল্পি বাবুই পাখিও হারিয়ে যেতে বসেছে।

বাবুই পাখির ইংরেজি নাম Baya weaver, বৈজ্ঞানিক নাম Ploceus philippinus (দেশি বাবুই)। এক সময় মেহেরপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। তবে বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে কিছু দেশি বাবুই বেশি দেখা যায়। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির প্রথম পছন্দ তাল গাছ। এরপর নারিকেল বা সুপারি ও খেজুর গাছ। তাল বা নারিকেল গাছ এত ওপরে থাকায় সেখানে সাধারণত অন্য কোন কিছুর নাগালের বাইরে থাকে। এরা খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে দল বেঁধে বাসা বাঁধে। বাসার গঠণও বেশ জটিল, তবে আকৃতি খুব সুন্দর। বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত। 

শুরুতে বাসায় দুটি নিম্নমুখী গর্ত রাখে। অর্ধেক বাসা বাধার পর তার সঙ্গীকে খোঁজে। স্ত্রী বাবুইটির পছন্দ হলে মাত্র চার দিনে বাসা বাঁধার কাজ শেষ করে। বাসার নিন্মমুখী একটি গর্ত বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা করে নেয়। অন্যটি খোলা রেখে দেয় প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাসার ভেতরে বাইরে কাদা লাগিয়ে রাখে ফলে প্রবল ঝড়ে বা বাতাসেও টিকে থাকে তাদের বাসা। রাতে বাসা আলোকিত করার জন্য জোনাকী পোকা ধরে এনে বাসায় রাখে। সাথী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে পুরুষ বাবুই। স্ত্রী বাবুইকে নিজের প্রতি আকর্ষণ করাতে খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফুর্তিতে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। 
সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। একটি পুরুষ পাখির একাধিক বাসা ও পরিবার থাকতে পারে। বাবুই পাখি দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। তাই এদের ঠোঁটের আকৃতি সহজে বীজ ভক্ষণের উপযোগী চোঙাকার। আর ঠোঁটের গোড়ার দিকটা মোটা। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে।

গাংনী উপজেলার ভাটপাড়ার আকতারুজ্জামান জানান, সোনালী ও সবুজ রঙ্গের এ বাবুই পাখির কিচির মিচির ডাক শোনা যেত সন্ধ্যা ও সকালে। এ পাখি যেমন শিল্পী তেমন ঘুম জাগানিয়া। চমৎকার শৈল্পিক সূরে মানুষের ঘুম ভাঙ্গাতো। এখন নেই কোন বড় তাল আর নারকেল গাছ। বাসা বাধার জায়গা না থাকায় এ পাখি বংশ বৃদ্ধি করতে পারেনি। এলাকা থেকে বিদায় নিয়েছে। পরিবেশ ও পাখি সংরক্ষণের জন্য তাল নারকেল গাছ রোপণ জরুরী।

গাংনী মহিলা কলেজ জীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রিনা আকতার জানান, বাবুই পাখি সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। এখন কৃষকরা ক্ষেতে ও বীজতলায় কীটনাশক ব্যবহার করায় বাবুই পাখি মারা যায়। বংশ রক্ষার্থে তারা এলাকা ত্যাগ করেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা বাবুই পাখি বংশ বিস্তার লক্ষ্যে তাল খেজুর ও নারকেল গাছ রোপণের পরামর্শ দেন তিনি। সেই সঙ্গে কীটনাশকের অপব্যবহার রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান তিনি।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,