'কত বয়স হইলে মুই বয়স্ক ভাতা পাইম বাহে'
Published : Tuesday, 31 December, 2019 at 10:34 AM Count : 393
'মোর কত বয়স হইলে মুই বয়স্ক ভাতা (আমার কত বয়স হলে আমি বয়স্ক ভাতা) ও আর কত বার স্বামী মারা গেলে মুই (আমি) বিধবা ভাতা পাইম (পাবো) বাহে (ভাই)!' স্বামীকে হারানোর পর থেকে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও একখানা ভাতার কার্ড মেলেনি তার ভাগ্যে।
এমন আকুতি জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর ৭২ বছরের অসহায় বৃদ্ধা আজিরন বেওয়া। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের মৃত আজাতুল্ল্যার স্ত্রী।
আজিরন বেওয়ার স্বামী ২০ বছর আগে মারা যান। একমাত্র ছেলেটাও ১০ বছর আগে মারা গেছেন। দুই মেয়েকে অনেক কষ্ট করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ধার-দেনা করে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়ি চালা মাত্র তিন শতক জমি তাও ছেলের বউয়ের নামে। ছেলের বউ ও দুই নাতিকে নিয়ে আলাদা সংসার। ছেলের বউ বৃদ্ধা শ্বাশুরীর ভরণ পোষণ না করলেও বাড়ির এক কোণে বৃদ্ধা আজিরন বেওয়াকে ঠাঁই দিয়েছেন। বৃদ্ধা আজিরন বেওয়া মানুষের বাড়িতে কোন রকম কাজকর্ম করেই জীবন-জীবিকা চালাছেন। দুই মেয়ে তারাও দিনমজুরী করে সংসার চালিয়ে জীবন-যাপন করছেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে মেয়েরাও বৃদ্ধা মায়ের তেমন খোঁজ খবর নেয় না।
বর্তমানে আজিরন বেওয়া অতি কষ্টে হাঁড় কাঁপানো তীব্র শীতে একখানা ভাঙ্গা টিনের চালায় পড়ে আছেন। ছেঁড়া বস্তা বিছিয়ে কোন রকমেই একখানা ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে শীতের রাত্রী যাপন করছেন। এখন পর্যন্ত কেউ তাকে একখানা কম্বল পর্যন্ত দেয়নি বলে জানান তিনি। অভাব তার নিত্য সঙ্গী। তিনি একটি ভাতার জন্য এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মেম্বার, চেয়ারম্যানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভাগ্যে তার ভাতা জোঁটেনি। সর্বশেষ আজিরন বেওয়া একটি সরকারি ঘরের আবেদনও জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুণ-অর-রশিদ জানান, তিনি ভাতার জন্য আমার কাছে আসেননি। আসলে তিনি অবশ্যই ভাতা পেতেন। যাই হোক আজিরন বেওয়াকে দ্রুততম সময়ে বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা নিবারণের জন্য তাকে দুটি কম্বল তার বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আজিরন বেওয়ার বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানিয়ে একটি টিন সেটের ঘরেরও ব্যবস্থা করা হবে।
-এমএ