শীত থাকলেও নেই ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছের রস
Published : Tuesday, 31 December, 2019 at 11:10 PM Count : 405
সারাদেশের ন্যায় নোয়াখালীতে জেঁকে বসেছে শীত। শীতে জবুথবু হয়ে গেছে শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ। যুবকেরা শীতের ঝাকুনি সহ্য করে নিতে পারলেও কষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশু ও বয়স্কদের। শত কষ্টের মাঝেও আক্ষেপের শেষ নেই এই অঞ্চলের মানুষের। কারণ শীত থাকলেও শীতের প্রধান আকর্ষণ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এবং শীত মৌসুমের প্রিয় খেজুর গাছের রস অনেকটাই বিলিনের পথে। শীতের এই মৌসুমে এক সময়ে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে রস দিয়ে ফিন্নি তৈরি, রসের তৈরি গুড় দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠা, ছাই পিঠা, ফুলি পিঠা এবং গুড় দিয়ে মুড়ি, চিড়া, খই, চিতই পিঠা ইত্যাদি খাওয়ার মহোৎসব চলতো।
কালের পরিক্রমায় সেদিনের মহোৎসব ক্রমান্বয়ে স্মৃতির পাতায় ধাবিত হচ্ছে। এক সময়ে ভোর থেকে শুরু করে অর্ধবেলা পর্যন্ত চলতো এই মহোৎসব। এখন আর পূর্বের ন্যায় শোনা যায় না প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ফেরি করে আনা “রস লাগবে রস” এসব হাক ডাক।
খেজুর গাছের রস হারিয়ে যাওয়া নেপথ্যে জানতে চাওয়া হলে ৭নং একলাশপুর বাসিন্দা গাছি রহমান জানান,গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার হওয়ার কারণে রাস্তার পাশে থাকা খেজুর গাছগুলো ক্রমান্বয়ে কেটে ফেলা হলেও বিপরীতে কেউ নতুন করে গাছ লাগায় না। অথচ এক সময়ে বাড়ীর বৃদ্ধরা প্রতি বছরে কম বেশি খেজুর গাছ লাগাতো। যার কারণে প্রতি নিয়ত খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ যারা এ সময়ে এলাকায় খেজুর গাছ কাটতো এখন তারা শহরে বিভিন্ন কাজ করে বিধায় গাছ কাটার লোক তেমন পাওয়া যায় না।
এর পাশাপাশি এক সময়ে একটি গাছ রসের জন্য তৈরি করতে মজুরি দিতে হতো ২০-৩০ টাকা। প্রতিটি হাড়ির মূল্য ছিলো ১০-১৫ টাকা। লাগতোনা কোন পাহারাদার। আর বর্তমানে একটি গাছ রসের জন্য তৈরিতে দিতে হয় ৮০-১০০ টাকা। প্রতিটি হাড়ির মূল্য ৫০-৬০ টাকা। চুরির হাত থেকে রক্ষার জন্য রাত্রিকালীন পাহারাদারকে দিতে হয় প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা। এসকল খরচের কারণে বর্তমানে খেজুর গাছ কাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেকেই। যার ফলে আগের মতো রস উৎপাদন না থাকার কারণে বাজারে রসের পরিমাণ কম এবং সে হারে রস দিয়ে তৈরি গুড়ের পরিমাণও কমে গেছে।
মূলত এই সকল কারণেই গ্রাম বাংলার বিশেষ করে নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছের রস এবং গুড় বিলুল্পির পথে। এ অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে পূর্বের ন্যায় শীতের মহোৎসব থেকে।
এমআরএম/এইচএস