For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

খোর্দ্দা বাউসার সেই বাগানে আসেনি শামুকখোলা

খাবার-আবাসস্থল সংকটে হুমকিতে পাখি

Published : Friday, 8 March, 2024 at 7:36 PM Count : 214


আমগাছের ডালগুলো ছিল হাজারো শামুকখোলের আশ্রয়। এরা কখনও গাছের কচি পাতায় ঠোকর দিত, কখনও মেতে উঠত খুনসুটিতে। মানুষের শব্দ পেলেই ঝাঁক বেঁধে উড়াল দিত ডালে। প্রজনন মৌসুমে এ দৃশ্য দেখা যেত রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে। সবুজ প্রকৃতির বিমোহিত করা এসব পাখি এবার বাচ্চা ফোটাতে আসেনি বাগানটিতে।

ওই গ্রামের ১০ বিঘা বাগানজুড়ে থাকা ৩৮টি আমগাছ ছিল শামুকখোল পাখির আবাসস্থল। প্রজনন মৌসুমে এরা এখানে বাচ্চা ফোটাত। উড়তে শিখলে চলে যেত। ২০১৯ সালে ইজারাদার বাগান পরিচর্যার জন্য পাখি উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা বাচ্চাগুলোর উড়তে শেখার জন্য ১৫ দিন সময় চেয়ে নেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে এলে তা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চায়। পরে প্রশাসন বছর হিসাবে আম বাগানের ৩৮টি গাছের ভাড়া ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসককে পাখির স্থায়ী আবাস গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণ ও গাছের মূল্য নির্ধারণ হলেও পরে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বাগান মালিকরা কম ভাড়ায় পোষায় না বলে কিছু গাছ কেটে ফেলেন। গত বছরও পাখি এলে তাড়িয়ে দেন তারা। তাই এ বছরে আর বাগানে পাখি আসেনি। পাখিহীন বাগানটি এ অঞ্চলের বন্যপ্রাণীর প্রতিকূল অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অবহেলার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য হাসনাত রনি বলেন, পাখিপ্রেমীদের কাছে রাজশাহী মূলত বার্ডশাহী নামে পরিচিত। দেশে পরিযায়ীসহ ৭১৪ প্রজাতির পাখির মধ্যে রাজশাহীতেই ছিল প্রায় ৩৫০ প্রজাতি। কয়েক বছরে ‘পাখির কলোনি’খ্যাত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, জেলখানার পেছনে, বাঘার আম বাগান, পদ্মা পাড়ের সিমলা এলাকার পাখির আবাসস্থল পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করা হয়েছে। আন্দোলন করেও আবাসগুলো বাঁচানো যায়নি।

রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশে জরিপ চালিয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে ৫৬৬ প্রজাতির মধ্যে ১৯ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রাজশাহী অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত পাখির মধ্যে রয়েছে লালমুখ দাগিডানা, সারল, ধূসর মেটেতিতির, বাংলার বিখ্যাত বালিহাঁস, গোলাপি হাঁস, বড় হাড়গিল বা মদনটাক, ধলাপেট বগ, সাদা ফোঁটা গগন রেড, রাজশকুন, দাগি বুক টিয়াঠুঁটি, লাল মাথা টিয়াঠুঁটি, গাছ আঁচড়া ও সবুজ ময়ূর।

পাখির অস্তিত্ব হুমকির কারণ প্রাকৃতিক নয়, মানুষ– এমনটি বলছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, কেউ পোষার জন্য, অনেকে পাচারের জন্য বন্যপাখি শিকার করছেন। শিকারিদের অত্যাচারে এ অঞ্চল ছাড়ছে পাখি। অথচ এদের অস্তিত্ব বিপন্ন হলে অধিবাসীদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হবে। টান পড়বে পরিবেশতন্ত্রেও।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, বরেন্দ্রখ্যাত রাজশাহীতে এক সময় নিবিড় বনাঞ্চল ছিল। বিস্তৃত ক্ষেত, আম বাগান ও পদ্মা নদী ঘিরে পাখির অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছিল। কয়েক বছরে উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এতে পাখি আবাস হারিয়েছে।

গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জেলার চারঘাটে বাবা ও ছেলে মিলে ফাঁদ পেতে ছয় শতাধিক বাবুই পাখি শিকার করেন। জবাই করে সেগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে নেয়ার সময় ধরা পড়েন তারা। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের এক বছরের জেল দেওয়া হয়। গত ২ এপ্রিল  ভাটপাড়া এলাকা থেকে জবাই করা তিন শতাধিক বাবুই পাখিসহ আটক শিকারির এক বছরের জেল হয়। ১১ জুন বাঘার চকরাজাপুর চর এলাকা থেকে ৩২০টি ঘুঘু উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়। তিন পাখি শিকারির বিরুদ্ধে মামলা হয়।

এছাড়া, দুর্গাপুরের নারিকেল বাড়িয়ায় দুটি জলময়ূর, একটি ধলাবুক ডাহুক, ছয়টি পাতিসরালি, ১৯২টি বেগুনি কালেমসহ ২০১টি পাখি উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। সংস্থাটি ২০১৩-২৩ পর্যন্ত শিকারিদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৬১৮টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮২০টিই ছিল বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। পাখি শিকার বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয়েছে ৬৮টি, কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৩৮ জনকে। ৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও বিভিন্ন মামলায় ১৫৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এ শাস্তিকে পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন না সচেতন নাগরিকরা।

এ বিষয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা আহম্মদ নিয়ামুর রহমান বলেন, পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত কার্যক্রম চলমান। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীসংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে পুরস্কারের বিধান চালু হয়েছে। সাধারণ মানুষ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। নতুন করে গাছ লাগানো হয়েছে। এগুলো বড় হলে পাখির আবাসস্থলের সমস্যা হবে না।

এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,