মৌমাছির গ্রাম চৌদ্দঘুরি। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরীর ব্রহ্মপুত্রবেষ্টিত চরাঞ্চলীয় ইউনিয়ন নারায়ণপুরের এ গ্রামে সর্বত্রই অসংখ্য চাক তৈরি করে বাসা বেঁধেছে অজস্র মৌমাছি। এক বিদ্যালয় ভবনেই রয়েছে তিন শতাধিক মৌচাক। হুল ফোটানোর আশংকায় আতঙ্কিত গ্রামবাসী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
দ্বীপ ইউনিয়ন নারায়ণপুরের একটি দ্বীপ গ্রাম চৌদ্দঘুরি। এখানকার বালুকাময় জমিতে প্রতিবছর স্থানীয়রা সরিষার চাষ করে থাকে। ক্ষেতে ফুল ফোটার সাথে সাথেই মদু সংগ্রহে দূর-দুরান্ত থেকে অজস্র মৌমাছি আসে এ গ্রামে। মৌচাক তৈরি করে বাসা বাঁধে গাছপালা ও স্থায়ী স্থাপনায়। এবারও এ গ্রামের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চৌদ্দঘুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের চারদিকের কার্ণিশ, জানালার সানসেট, বারান্দার বাড়তি অংশে ঝুলছে ৩ শতাধিক মৌচাক।
সামনের বেশ কয়েকটি শিমুল, কাঠাল, আম ও একটি নারিকেল গাছে বসেছে শতাধিক মৌচাক। এসব গাছের প্রায় সবগুলো রয়েছে ভবন ঘেঁষে। পিছন ও পশ্চিম পাশের গাছগুলোতেও রয়েছে এরকম আরো শতাধিক মৌচাক। এছাড়াও গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও বসেছে একাধিক মৌচাক। সব মিলিয়ে ৬ শতাধিক মৌচাক বসেছে এলাকাটিতে।
সারি সারি মৌচাক। নেচে নেচে উড়ে চলা মৌমাছি। যে কোনো সময় হুল ফোটাতে পারে। এ আশংকায় বিদ্যালয়ে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। বিদ্যালয়টির সামনের পথ দিয়ে চলাচল প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে অতঙ্কিত মানুষ।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান, সোহেল রানা, নাঈম, সাগর, চতুর্থ শ্রেনির সুমাইয়া, খাদিজা খাতুন ও সোনামনিসহ অনেকই জানান, অসংখ্য মৌমাছি সবসময় ওড়ে করে। অনেক সময় হুল ফুটিয়ে দেয়। ভয়ে তারা প্রায় স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। একই অবস্থা সকল শিক্ষার্থীর।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সোহেল রানা জানান, প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে স্কুলের ক্লাসরুম খুলে দিয়ে অফিসের জানালা দরজা বন্ধ করে ভিতরে থাকি। স্কুলের বারান্দা এবং অফিসের সাথেও মৌমাছি চাক দিয়েছে। মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
প্রধান শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র সেন জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত মৌমাছির উপদ্রপ সহ্য করতে হয়। এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিদ্যালয় ভবন এবং আশপাশের গাছ মিলে তিন থেকে সাড়ে তিনশ মৌচাক বসেছে।
স্থানীয়রা জানান, চরাঞ্চলের ওই এলাকাটিতে এইসময় ব্যাপক সরিষার চাষ হয়। এই সরিষার মধু সংগ্রহ করতেই প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এখানে মৌমাছির আগমন ঘটে। আশেপাশে বন জঙ্গল না থাকায় এই বিদ্যালয় এবং পাশের গাছগুলিতে মৌচাক দেয় তারা। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেশি।
ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, এবার সরিষার চাষ বেশী হওয়ায় মৌমাছির চাকের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধু স্কুলেই নয় আশেপাশের অনেক বাড়িতেও মৌমাছি চাক দিয়েছে। আমার বাড়িতেও রয়েছে ৬টি মৌচাক। সব মিলে এলাকাটিতে ৫০০ থেকে ৬০০ মৌচাক রয়েছে। স্থানীয়রা এগুলো থেকে মধু সংগ্রহ করলেও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, সরিষার চাষ বেড়ে যাওয়ায় মৌমাছিরা আসছে ওই অঞ্চলে। চাক দিচ্ছে। সেসব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করছেন অনেকে। এটা একটা ভালো দিক যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
কেএস/এনএন