সারা জীবন নিজের পছন্দের কাজের সুযোগ ক'জনের থাকে? ইটালির এক রেস্তোরাঁর মালিক নিজের হাতে একটা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক গড়ে তুলেছেন। ৮৪ বছর বয়সেও তিনি ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন।
রানওয়ে, হাম্প ওয়াগন বা মৃত্যুর চাকা। এগুলি ‘আই পপি' নামের অ্যামিউজমেন্ট পার্কের ৩৭টি আকর্ষণের অন্যতম। ব্রুনো ফেরিন নিজের হাতে সেগুলি গড়ে তুলেছেন। তাঁর বয়স এখন ৮৫। প্রায় পাঁচ দশক আগে তিনি সেখানে প্রথম দোলনা বসিয়েছিলেন। ব্রুনো বলেন, ‘৫০ বছর ধরে আমি যা কিছু গড়ে তুলেছি, প্রতিবার এখানে এসে সে সব দেখে খুব আনন্দ হয়। আমি আমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি – নিজের জীবন সম্পর্কে এমনটা বলতে খুব ভালো লাগে।’
১৯৬৯ সালে এক রেস্তোরাঁ থেকে তাঁর স্বপ্ন শুরু হয়েছিল। ব্রুনো জঙ্গলের এই অংশের প্রেমে পড়ে যান। তাঁর স্ত্রী যখন পপলার গাছের নীচে অতিথিদের ওয়াইন ও সসেজ পরিবেশন করতেন, ব্রুনো তখন দোলনা তৈরি করতে ব্যস্ত। সব কাজ নিজেই আয়ত্ত করেছিলেন। নিজের কৃতিত্বের দিকে ফিরে তাকিয়ে ব্রুনো বলেন, ‘আমি মাত্র পাঁচ বছর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি ছিলাম। কিন্তু সংখ্যা এখনো মাথায় রয়েছে। আমার তৈরি আকর্ষণগুলির ওজন ও পালটা ওজন কীভাবে কাজ করে, সে সব সহজেই মাথায় আসে। আমিও ভুল করি ঠিকই। এক দিক বেশি ভারি হলে অথবা অ্যাঙ্গেল ঠিক না হলে তখন আবার অ্যাডজাস্ট করতে হয়।’
ব্রুনোর পার্কের বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁর আকর্ষণগুলি চালাতে কোনো বিদ্যুৎ লাগে না। পদার্থবিদ্যার নিয়ম ও সমবেত মানুষের পেশিশক্তি দিয়েই সেগুলি চলে। সর্বশেষ আকর্ষণ এই নাগরদোলা। টেলিভিশনে নাসার মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দেখে তাঁর মাথায় সেই আইডিয়া এসেছিল। ব্রুনো ফেরিন বলেন, ‘এই নাগরদোলা এই সব সাইকেলের সাহায্যে চলে। দর্শকদেরই সেই সাইকেল চালাতে হয়। প্যাডেলে চাপ দিলেই নাগরদোলা ঘোরে। সেই চাপ যত দ্রুত হয়, সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স ততই বাড়ে। তখন বসার সিট কেন্দ্র থেকে আরও পেছন দিকে চলে যায়।’
অন্য অ্যামিউজমেন্ট পার্কগুলি যখন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়ছে, তখন ব্রুনো এই বয়সেও ভবিষ্যতের জন্য আরও পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘জ্বালানির মূল্য মারাত্মক বেড়ে গেছে। তাই ভাবছি পার্কের প্রত্যেকটি যন্ত্রের মধ্যে ডায়নামো লাগাবো। সেগুলির মুভমেন্টের মাধ্যমে শক্তির উৎপাদন করাই আমার পরিকল্পনা।’
প্রতি বছর প্রায় ৫০,০০০ দর্শক পার্কে আসেন। শুধু সপ্তাহান্তে খোলা থাকে, কোনো প্রবেশমূল্যও নেই। ব্রুনোর মতে, গরিব হোক বা বড়লোক – সবারই আমোদের অধিকার রয়েছে। দর্শকরা কখনো এমন মনোভাবের কারণ জানতে চান। ব্রুনো বলেন, ‘বছরের শেষে হিসেব করে যদি দেখি মাত্র এক ইউরো মুনাফা হয়েছে, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। সবাই এই কনসেপ্ট না বুঝলেও আমার জন্য যথেষ্ট।’
পার্কের দর্শকদের বেশিরভাগই ব্রুনোর রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করেন। ফলে ব্যবসার জন্য সুবিধা হয়। ৮৪ বছর বয়স হলেও ব্রুনো সব কাজে হাত লাগান। তাঁর মতে, নিজের পছন্দের কাজ আজও তাঁর তারুণ্য ধরে রেখেছে। ব্রুনো বলেন, ‘এটা সত্যি সুন্দর জীবন। নিজের মর্জি অনুযায়ী ঠিক করি আজ কী করবো। দারুণ, তাই না? এটাই জীবনের কাব্য।’
সেই দার্শনিক মনোভাবই অ্যামিউজমেন্ট পার্ককে ব্রুনোর ধ্যানজ্ঞান করে তুলেছে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
এনএন