For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

দিনাজপুরে বট-পাকুড় গাছের বিয়েতে ৫০০০ অতিথি

Published : Wednesday, 9 March, 2022 at 10:40 PM Count : 145

দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ঢেপা নদীর পাড়ে মন্দিরের সামনে ধুমধাম করে বট-পাকুড় গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বিয়ের দাওয়াত খেয়েছেন বলেও জানা গেছে।

সকাল থেকে বিয়ে, গায়ে হলুদ, বাদ্য-বাজনা, উলুধ্বনি, রান্না ও অতিথি আপ্যায়নসহ হিন্দু শাস্ত্রমতে সব আয়োজনই ছিল। তবে বর-বধূ ছিল বৃক্ষ। মহাধুমধামে বৃক্ষের এমন বিয়ে হয়ে গেলো দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার ৫ নং সুন্দরপুর ইউনিয়নের গড়নুরপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ভদ্রকালী মন্দিরে সামনে। জমজমাট এই বিয়ের আয়োজনে মন্দির প্রাঙ্গণ ভক্ত-পূণ্যার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।

শাড়ী পরে টোপর মাথায় দেয় বউ শ্রীমতি বটেশ্বরী (বট) ও ধুতি-পাঞ্জাবী পরে টোপর মাথায় দেয় বর শ্রীমান পাকুড়। বিয়ে হয় সন্ধ্যায়। তার আগেই হিন্দু শাস্ত্রমতে বাদ্য-বাজনা, সনাতন আচার পালন, বরযাত্রীর আগমণ ও অতিথি আপ্যায়ন সবকিছুই পালন করা হয়েছে নিয়ম মেনে। সব আয়োজন দেখে মনে হচ্ছিল সত্যি কোনো সনাতন দম্পতির বিয়ে হচ্ছে।

বুধবার বিকেলে জেলা রংপুর ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের দশমাইল মোড়ের ২ কিলোমিটার পশ্চিমে কাহারোল উপজেলার ৫ নং সুন্দরপুর ইউনিয়নের গড়নুরপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ভদ্রকালী মন্দিরে সামনে ব্যতিক্রমী এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। এই বিয়ের আয়োজন করেন গরনুরপুর, পরমেশপুর, নথাবাড়ী,ইটুয়া, বয়াইল পাতমা ও ইসানপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তারা নিজেরাই চাঁদা তুলে এই বিয়ের খরচ যুগিয়েছে। এই বিয়ের বউ শ্রীমতি বটেশ্বরীর বাবা হিসেবে কন্যাদান করেছেন ইটুয়া নৌধনবাড়ী গ্রামের রমেশ্বর রায় ও মাতা আরতী রানী রায় আর ছেলে শ্রীমান পাকুরের বাবা মা গড়নুরপুর গ্রামের  কমলা কান্ত রায় ও মেনকা রানী রায় দম্পতি।
ঢেপা নদীর পাড়ে ভদ্রকালী মন্দিরের কালী মাতার পূজা-অর্চনার মাধ্য দিয়ে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এরপরে হিন্দু শাস্ত্র মতে পালন করা হয় বিয়ের আচার। একে একে হয় গ্রামপূজা, গায়ে হলুদ, নান্দিমুখসহ সব অনুষ্ঠান। এরপর দুপুরে ভক্ত-পূণ্যার্থীর মাঝে বিতরণ করা হয় প্রসাদ (আপ্যায়ন)। দুপুর ১২টা থেকে ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সাধারণ বিয়ের মতই বরকে ধুতি-পাঞ্জাবী ও কনেকে পরিয়ে দেওয়া হয় শাড়ি। পরে তাদের সাজিয়ে দেওয়া হয় বিয়ের সাজে। পরে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বট ও পাকুর গাছের বিয়ে।

এই বিয়ের পুরোহিত ছিলেন গনেশ চক্রবর্তী ও তার সহযোগীরা। তিনি জানান, সনাতন ধর্ম মতে দেশাচার, কুলাচার ও বেদাচার মেনে বট-পাকুরের বিয়ে দেওয়া হলে এলাকার লোকজনের মঙ্গল হয়। শুধু তাই নয়, পবিত্র গীতাতেও বট পাকুরের বিয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। পূর্বকাল থেকেই এই ধরনের বিয়ের প্রচলন হয়ে আসছে। তাই এমন বিয়েতে থাকতে পেরে তিনি অনেক আনন্দিত বলে জানান।

আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের বিষয়ে মন্দির কমিটির সভাপতি বিশাল রায় ও সাধরিণ সম্পাদক মৃনাল কান্তি রায় জানান, গ্রামের সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে এই বিয়ের আয়োজন করেছে। দুই ছয় গ্রামের লোকজন মিলে এমন আয়োজন করা তারা বেশ খুশি। বিয়েতে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৫ হাজার মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়েছে। আমন্ত্রিতদের খাওয়ানো হয় সবজি ঘণ্ট আর পায়েস। সঙ্গে ছিল জলপাইয়ের আচার। মূলত রীতি চরিতার্থ করার স্বার্থেই এ আয়োজন। বট-পাকুড় এখন আজীবন এভাবে পাশাপাশি থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পাকুড় গাছের মা মেনকা রানী রায় বলেন, ১০ দিন আগে তিনি পাকুড়ের মা হওয়ার সিদ্ধান্ত পান মন্দির কমিটির মাধ্যমে। মূলত মেয়ের বিয়ে দেওয়া উপলক্ষেই তিনি মা হয়েছেন। গাছের মা হওয়া এবং ধুমধাম আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে দেওয়ায় তিনি বেশ আনন্দিত।

পুরোহিত গনেশ চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বাসি বিয়ে এবং শুক্রবার প্রতিটি বাড়ীতে নিজের অতিথি আপ্যায়ন করবেন।

-এএইচ/এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,