জীবিকার টানে বই ছেড়েছে ওরা
Published : Sunday, 19 September, 2021 at 12:08 PM Count : 509
করোনায় স্কুল বন্ধ থাকাকালীন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিছিন্ন দ্বীপগুলোর অনেক শিক্ষার্থী কাঁকড়া শিকারের কাজে যোগ দিয়েছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসব শিক্ষার্থীরা আর বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না।
গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যালয় খোলা হলেও তাদের উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। মহামারি করোনার কারণে সারাদেশের ন্যায় ১৮ মাস ধরে বন্ধ ছিল চরফ্যাশনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পৌরসভাসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৬২ হাজার ৮০৬ জন। এসব শিক্ষার্থীর ৩০-৪০ শতাংশই বিছিন্ন দ্বীপ চরগুলোতে।
উপজেলার বিছিন্ন দ্বীপ কুকরির বাবুগঞ্জ গ্রামের জেলে মোশাররফ গাজীর ছেলে আজিজুল ও তার ভাই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। করোনা সঙ্কটে দুই ভাই পড়াশোনা বাদ দিয়ে উপার্জনে নেমেছে। তারা দু'জনেই কাঁকড়া শিকারী। প্রতিদিন ভোরে বের হয়, ফেরে বিকেলে। সপ্তাহে একদিনও ছুটি নেই। জীবিকার টানে বই ছেড়ে ওরা কাজে। অথচ বছর খানিক আগেও এই কিশোরের দল বইখাতা নিয়ে পড়তে যেত।
শনিবার চর কুকরি মুকরির বাবুগঞ্জের বেড়িবাঁধের বাইরে দেখা হয় ওদের সঙ্গে। আজিজুল ও তার ভাই মিলে পেয়েছে ৫০টি কাঁকড়া। অন্যদের কেউ ২০টি, কেউ ৩০টি পেয়েছে। ওদের ছবি তোলা দেখে পাশে এসে দাঁড়ায় মান্না ও ইমন। পরে আসে সবুজ ও সাকিল।
কি করো? প্রশ্ন করতেই জবাব- ‘ক্যাঁকড়া ধরি’। কাঁকড়াকে ওরা ‘ক্যাঁকড়া’ বলে। সবার হাতে একটা করে লোহার শিক আর একটি ব্যাগ। মাথা বাঁকানো শিক দিয়ে ওরা বনের ভেতরে, নদীর ধারের গর্ত থেকে কাঁকড়া ধরে। মান্না ও ইমন খুব ভালো বন্ধু।
পঞ্চমের সমাপনীতে দু’জনের রেজাল্টও ভালো। তবুও ছাড়তে হয়েছে লেখাপড়া। সকাল থেকে রাত অবধি খেটে পরিবারের আহার নিশ্চিত করাই লক্ষ্য তাদের। তাই বিদ্যালয়ে যাওয়া নিয়েও তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। পরিবারের আয়ের পথ না থাকায় তারা বাধ্য হয়েই কাঁকড়া শিকারের কাজে নেমেছে।
শুধু সবুজ ও সাকিল নয়। মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী হাল ধরেছে সংসারের।
চর কুকরি মুকরিতে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রয়েছে শিক্ষক সংকট, সঙ্গে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব। এর সঙ্গে যোগ হয় বাবা-মায়ের সংসারের টানাটানি। স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের যুক্ত হতে হয় কাজে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সফিকুল ইসলাম বলেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শতকরা ৭৮ থেকে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে।
বাকিদের উপস্থিত না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যে সকল শিক্ষার্থীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি তাদেরকে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে। এছাড়াও অসুস্থতাসহ আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কারণে অনেকেই আসছে না।
তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সকলেই বিদ্যালয়মুখী হবে বলে প্রত্যাশা তার।
-এমএ