For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাবির ডাইনিং-ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর খাবার, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

Published : Sunday, 26 December, 2021 at 7:19 PM Count : 377

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং ও ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনে ক্ষুধামন্দাসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা।

একদিকে যেমন রান্নাঘরে ধুলাবালি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অন্যদিকে মানহীন ও একই খাবার প্রতিদিন দেয়ায় ডাইনিং-ক্যান্টিনে খাবারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, অপুষ্টিকর, পচা ও দুপুরের খাবার রাতের খাবারে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা বাধ্য হয়েই খাচ্ছেন তারা। নিম্নমানের খাবার খেয়ে ক্ষুধামন্দা ও চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন তারা। প্রশাসন বলছে, বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবুও সব সমস্যা সমাধানের জন্য তারা চেষ্টা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা আমাশয়, ডায়রিয়া, হ্যাপাটাইটিস, জন্ডিস, এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া পেটের সমস্যা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের ওপর ভরসা করতে হয়। সেই ডাইনিং-ক্যান্টিনগুলোর রান্নাঘরে ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। যেখানে অস্বাস্থ্যকর ও ধুলাবালির মধ্যে খাবার রান্না ও পরিবেশন করতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদের জন্য ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য ৬টিসহ মোট ১৭টি হল রয়েছে। এসব হলে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীসহ বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেকেই হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনে নিয়মিত খাবার খেয়ে থাকেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী আরিফ হুসাইন বলেন, হলের ডাইনিংয়ে একই খাবার প্রতিদিন দিচ্ছে। পেঁপে ও আলুর সঙ্গে মাছ অথবা ব্রয়লার মুরগি প্রতিদিন খেতে হচ্ছে; সাথে পানির মতো ডাল। এরপর যদি ক্যান্টিনে খেতে যাই, সেখানে দাম অতিরিক্ত নেয়। কিন্তু খাবারের মান তত উন্নত না। মূলত বাধ্য হয়েই খাচ্ছি। মাঝে মধ্যে পেটে সমস্যা হয়, অসুস্থ হই।

তিনি আরো বলেন, ডাইনিং ও ক্যান্টিন দুটাতেই ধুলাবালি, ময়লা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সব সময় দেখা যায়। কয়েকদিন খাবারে মাছি ও পোকামাকড় পেয়েছি, তখন খাবার রেখে চলে আসতে হয়েছে।

শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভালো স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে মোটেই চিন্তা করছে না। যদি তারা চিন্তা করত তাহলে হলে এই ধরনের বাজে, অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হতো না আমাদের।

এছাড়া কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুপুরের খাবার রাতের খাবারে মিশিয়ে দেয়ার অভিযোগ করে মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জুয়েল মামুন বলেন, কর্মচারীরা কম করে তরকারি দিয়ে দুপুরের খাবার রাতের খাবারে মিশিয়ে দেয়। এটা করে তারা অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা করেন। সেই সাথে হলের রান্নাঘর থাকে ময়লায় পরিপূর্ণ। খাবারে পচা আলু, চালে পাথর, রান্না করার অপরিচ্ছন্ন হাঁড়ি-পাতিল ছাড়াও প্রতিদিন একই পদের খাবারে আমরা খাই।

মুন্নুজান হলের শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন বলেন, হলের খাবার খুবই বাজে। পুই শাক, পেঁপে আর আলু এই তিন ধরনের খাবার প্রতিদিন দিচ্ছে। বাধ্য হয়েই খাচ্ছি। দুই দিনের বেশি খাওয়া যায় না। খেলেই অসুস্থ হতে হয়। আর হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের একটিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়, খুবই নোংরা।

এদিকে গত ২০ নভেম্বর অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার নিয়ে আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন সব সময় অপরিষ্কার থাকে। খাবারে মশা ও মাছি থাকে; খাবার নিম্নমানের। বারবার এ নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হল কর্তৃপক্ষ।

৫ নভেম্বর হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে তাপসী রাবেয়া হলের ছাত্রীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেখানেও খাবারের মান উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে তারা।

পেটের পীড়াজনিতে অসুখে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক তবিবুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, এখন করোনার সিম্পটম নিয়ে অনেক শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। তবে পেটের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। যাদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া, হ্যাপাটাইটিস, জন্ডিস, এলার্জি, ফুড পয়জনিং আক্রান্ত। এ সবের কারণ পঁচা, ময়লাযুক্ত, অস্বাস্থ্যকর ও অপুষ্টিকর খাবার খাওয়া। তারা অরুচি, অনীহা, ও পুষ্টিহীনতায় ভোগে। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকাটা স্বাভাবিক।

চিকিৎসক আরো বলেন, ডায়রিয়া ও পেটের পীড়াজনিত সমস্যা নিয়ে আসা বেশিরভাগ রোগীকে জিজ্ঞেস করলে দেখা যায়, তারা হল ডাইনিং, ক্যান্টিন ও বাইরের খোলা দোকানে খাবার খেয়েছে। খাবারের মান ঠিক না থাকা ও প্রতিদিন একই খাবার খাওয়া এসবের জন্য দায়ী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ রওশন জাহিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যকর খাবার দিতে সব প্রভোস্ট আন্তরিক। আমি চাইলেও ডাইনিং-ক্যান্টিনে খাবারের মান উন্নত করতে পারি না। কারণ বাজারে চাল, ডালসহ নিত্যপয়োজনীয় পণ্যের দাবি বেশি। দামের  ঊর্ধ্বগতিতে খাবারের মান বাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে কোনো ধরনের ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা নেই। প্রশাসন শুধু ডাইনিং-ক্যান্টিনের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিয়ে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, অকেন সময় খাবারে মশা-মাছি বা পোকা-মাকড় পড়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসে। এর জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়। আর কর্মচারীরা রাতদিন রান্না করে শিক্ষার্থীদের খাবার পরিবেশন করছে যা খুবই কষ্টকরা। তাই একটু সমস্যা তো হবেই। আমরাও হলে ছিলাম, তখনও এই ধরনের সমস্যা ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ নিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেক হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে প্রশাসন আলোচনায় বসব। এরপর সংশ্লিষ্ট হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়গুলো সমাধান করা হবে।

তিনি আরো বলেন, দুপুরের তরকারি রাতের তরকারির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া ও খাবারে মশা-মাছি থাকার বিষয়ে হলের কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেয়া হবে।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, খাবারের অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়গুলো সমাধান হবে বলে আশা করছি।

-আরএইচ/এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,