For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাজশাহীতে ফিড প্রতারণায় ৬৬ লাখ টাকার লোকসানে খামারি

Published : Tuesday, 21 December, 2021 at 5:17 PM Count : 443

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার হরিরামপুরে নিম্নমানের মাছের ফিড দেয়ায় ৬৬ লাখ টাকার লোকসানে পড়েছেন মৎস খামারি শফিকুর রহমান।

জানা যায়, বেশ কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ করেন শফিক। জায়গার হিসাবে পুকুর ১০০ বিঘার বেশি। একদিন দুর্গাপুরের বর্দ্ধনপুরের ‘আব্দুল্লাহ ফিড’ মিলের স্বত্বাধিকারী আশরাফ আলী মৎস্য খামারে পরিদর্শনে আসেন।

এ সময় আশরাফ আলী জানান, তার মিলে উৎপাদিত খাবারের গুণগত মান অনেক ভালো। দামও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক কম। শফিকুরকে তিনি অনুরোধ করেন তার মিলের খাবার ক্রয়ের জন্য। সেই খাবার খাইয়ে এক মৌসুমে (জানুয়ারি ২০২০ থেকে আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত) ৮৮ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন শফিকুর। অথচ পরের মৌসুমে (সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত) মাছ উৎপাদন চার ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। মাছ বিক্রি করেন মাত্র ২২ লাখ টাকার।

দুই মৌসুমেই একই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন শফিকুর। মাছের বাজারদর প্রায় একই রকম ছিল। পুকুরে কোনো রোগবালাইও হয়নি। মৎস্য উৎপাদন এমন কমে যাওয়ায় শফিকুর রহমানের সন্দেহ হয় যে, দ্বিতীয় মৌসুমে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করেছে আব্দুল্লাহ ফিড মিল।
এরপর শফিকুর রহমান মাছের সেই খাবারের নমুনা বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার রাজশাহীতে পরীক্ষা করে দেখেন তার সন্দেহ ঠিক। খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ নির্ধারিত মানের চেয়ে অনেক কম। তখন শফিকুর বুঝতে পারেন, আশরাফ আলী প্রথম মৌসুমে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করে বিশ্বাস অর্জন করেন। পরের মৌসুমে তিনি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করেন।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার রাজশাহীতে নুমনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, সেখানে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ প্রোটিন পাওয়া গেছে। এটি মৎস্য বিধিমালা এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মাত্রা ২২ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। এমনকি খাবারের বস্তাতে লেখা ছিল প্রোটিনের পরিমাণ ২৬ শতাংশ।

আশরাফ আলীর এমন কাণ্ডে তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করেও পাননি। গত ৯ এপ্রিল তিনি আদালতে একটি নালিশি আবেদন করেন। তদন্তভার আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে। পিবিআইয়ের তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে, দ্বিতীয় মৌসুমে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে তিনি শফিকুর রহমানের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এই নালিশি আবেদনের তদন্ত শেষ করে আব্দুল্লাহ ফিড মিলের বিরুদ্ধে গত অক্টোবরের শুরুতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন রাজশাহী জেলা পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাকিবুল হাসান রকিব। 

গত ৯ সেপ্টেম্বর তিনি তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে পিবিআই সদর দফতরেও একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন রাকিব। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আব্দুল্লাহ ফিডের যে নমুনা শফিকুর পরীক্ষা করিয়েছেন সেখানে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ প্রোটিন পাওয়া গেছে। এটি মৎস্য বিধিমালা এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মাত্রা ২২ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। এমনকি খাবারের বস্তাতে লেখা ছিল প্রোটিনের পরিমাণ ২৬ শতাংশ।

এই নালিশি আবেদনের সাক্ষী এবং আরেক মৎস্য খামারি রাকিবুল ইসলাম দুটি বস্তা থেকে খাবারের নমুনা পরীক্ষা করেন। সেখানে দেখা গেছে, প্রোটিনের পরিমাণ আছে ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আরও দুজন সাক্ষীর নমুনা পরীক্ষায় ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রোটিন পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নালিশি আবেদনের বাদী শফিকুর রহমান বলেন, দুর্গাপুর উপজেলার অন্তত আটজন বড় মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ ফিড থেকে খাবার নিয়ে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি এক মৌসুমেই ৬৬ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হন। খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকলে মাছের ওজন বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।

নালিশি আবেদনের তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী জেলা পিবিআইয়ের এসআই রাকিবুল হাসান রকিব বলেন, রাজশাহীর বিসিএসআইআর কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় মামলার বাদী এবং সাক্ষীরা খাবারের যে নমুনা পরীক্ষা করেছেন, সেটা ঠিক আছে। ‘আব্দুল্লাহ ফিড’ মিলে কোনো স্থায়ী রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়নি।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৎস্য খামারিদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে বিশ্বাসভঙ্গ এবং প্রতারণা করেছেন আশরাফ আলী। এ কারণে তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

আব্দুল্লাহ ফিড মিলের স্বত্বাধিকারী আশরাফ আলী বলেন, ‘নিজস্ব পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে মানসম্মত খাবার উৎপাদন করি আমরা। অনেক সময় বিভিন্ন খামারিকে বাকিতে খাবার সরবরাহ করি আমরা। বাকির পরিমাণ বেশি হলে তারা নানা অভিযোগ করেন। এই কারণেই শফিকুর রহমান আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। যারা খাবার পরীক্ষা করেছেন, তারা আব্দুল্লাহ ফিড মিলের খাবার পরীক্ষা করেননি। তারা নমুনা কোথা থেকে নিয়েছেন, তারা বলতে পারবেন।’ তার প্রতিষ্ঠানে কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ আছে বলেও দাবি করেন তিনি।

আশরাফ আলীর কাছে কোনো পাওনা বাকি রেখেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, তিনি ৮ মাসে (দ্বিতীয় মৌসুম) আব্দুল্লাহ ফিডের কাছ ৪৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার মাছের খাবার নিয়েছেন। পরিশোধ করেন ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খাবারের গুণগত মানে সমস্যা থাকায় তিনি আইনের আশ্রয় নেন। বাকি টাকা তিনি পরিশোধ করেননি।

আব্দুল্লাহ ফিড মিলের খাবারের গুণগত মান নিয়ে রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, স্বাভাবিক কাজের অংশ হিসেবে আব্দুল্লাহ ফিড মিলের খাবারের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ফলাফলে দেখা গেছে, খাবার মানসম্মত। পিবিআইয়ের তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। সেটি পিবিআই বলতে পারবে।

তবে এই দফতরের আরেকটি সূত্র জানায়, আব্দুল্লাহ ফিড মিল নিম্নমানের খাবার বাজারে সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে আব্দুল্লাহ ফিড মিলের খাবারের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে।

-আরএইচ/এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,