পাঠশালা এখন গো-শালা
Published : Friday, 4 June, 2021 at 1:48 PM Count : 603
করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকায় বরগুনার বেতাগীতে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিণত হয়েছে গো-শালায়। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, গত বছরের ০৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক ১৭ মার্চ থেকে বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো যায়, আগামী ১৩ জুন যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হারে (আক্রান্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে) থাকে তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এমন প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে প্রতিবেদক বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও মাধ্যমিক সমমান পর্যায়ের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ঘুরে দেখেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক বিদ্যালয় ভবনের কক্ষ গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপজেলার ৯৯ নম্বর ঝিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি কক্ষে গরু রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী বাসিন্দারা। এসব কক্ষের বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলগুলো পাশের অন্য কক্ষে রাখা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের চারদিক ঘুরে দেখা যায়, ঝোঁপ ঝাঁড় আর ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়ে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষই গরু, ছাগল ও বেড়ার দখলে। শ্রেণিকক্ষসমূহে তিন-পাঁচটি করে গরু বাঁধা রয়েছে। ছাদের ওপরে চলে তাস খেলার আড্ডা। বিড়ি-সিগারেটের ময়লা ও দূর্গন্ধে যে কেউ ওই পরিবেশে হঠাৎ গেলে আঁতকে উঠে। উপজেলার একাধিক বিদ্যালয় পশুর চারণভূমি ও নোংরা পরিবেশ দেখা গেছে।
এমন পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঝিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সারমিন জাহান বলেন, 'করোনার পর থেকে বিদ্যালয়ের খোঁজখবর তেমন নেয়া হয়নি। আর কিছুদিন আগে বন্যার কারণে গরু ছাগল রেখেছিল, আমি বাঁধা দিয়েছি। তবে তারা এলাকার প্রভাবশালী ও প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা হওয়ার কারণে কাউকে পরোয়া করে না।'
তবে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার শর্তে শ্রেণিকক্ষে পাঠে আগ্রহ প্রকাশ করেন নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
বেতাগীতে ১২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ী, দাখিল, আলিম, ফাজিল পর্যায় সব নিয়ে ৫৮টি মাদ্রাসা ও সাতটি কলেজ রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিবেশ নোংরা আর দুর্গন্ধে ভরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান বলেন,' বেশ কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঢিলেঢালা হয়েছে। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, 'ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তারা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করবেন এবং তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
-এমএ