'ঠান্ডায় মরিমো ১ ভাগ, না খায়া মরিমো ১০ ভাগ'
Published : Wednesday, 17 January, 2024 at 2:38 PM Count : 247
লালমনিরহাট জেলা শহরের সুরকিমিল এলাকার রেলওয়ে কোয়ার্টার সংলগ্ন খালি জায়গায় পড়ে আছে পুরাতন ভাঙা ইটের স্তুপ। ইট-সুরকির ব্যবসায়ীরা রেলওয়ের খালি জায়গা পেয়ে এসব নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, সেই ইটের স্তুপের পাশে বসে ইট ভাঙছেন পঞ্চাশোর্ধ আলিজন। তীব্র শীত উপেক্ষা করে সাতসকালে এসে ইট ভাঙার কাজে লেগে পড়েছেন। গায়ে একটা একটা পাতলা চাদর জড়ানো, পায়ে এক জোড়া স্যান্ডেল আর বাম হাতের তর্জনি ও বৃদ্ধাঙ্গুলে ব্যান্ডেজের মত করে কাপড় লাগানো। শরীরে অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। অথচ শীর্ণ হাত দিয়ে ইট ভেঙ্গে চলেছেন অবিরাম।
কি বাহে ঠান্ডা কেমন? আঞ্চলিক ভাষায় করা প্রশ্ন শুনে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন, 'কি করমেন শুনি?' তারপর ইট ভাঙতে ভাঙতে আলিজন বলে চলেন, 'জীবনেও এমন ঠান্ডা পাই নাই বাহে। হাত দিয়া কাম করায় যায় না। সাঁঝ (সন্ধ্যা) পার হইলেই কনকনা ঠান্ডা শুরু হয়। আইতোত নিন্দ আইসপার চায় না জারোতে (রাতে ঘুম আসতে চায় না শীতে)।'
কম্বল দেয় নাই কেউ? এবার ইট ভাঙ্গা থামিয়ে চোখ তুলে তাকান প্রতিবেদকের দিকে। উত্তরে বলেন, 'একখান কম্বল পাইছি। কিন্তু একখান কম্বল দিয়া জার (শীত) যায়? কাঁপাকাঁপি করি আইত (রাত) কাটাই, ঘুমে ধরবার চায় না।'
বাড়িতে কে কে আছেন? আবার ইট ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলে চলেন, 'বেটাবেটি নাই, হাতে করি প্যাটে (পেটে) খাই।'
স্বামী নাই আপনার? 'না নাহে, কোনদিন মরি গেইছে'- তাঁর দীর্ঘশ্বাস ভরা উত্তর। থাকেন কোথায়? 'একজনের বাড়িত' - তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর।
কত টাকা দিনে পান? 'যেমন কাম করি, তেমন টাকা দেয়। কোনো দিন ১০০, কোনো দিন দ্যাড়'শ (১৫০)।'
এত ঠান্ডায় এই ইট ভাঙ্গার কাজ করতে কষ্ট হয় না? অসুস্থ হলে কি করবেন? 'ঠান্ডার কথা চিন্তা করিলে প্যাট চলিবে কি দিয়া ? ঠান্ডায় মরিমো (মরবো) ১ ভাগ, ফির না খায়া মরিমো ১০ ভাগ। আল্লাহ যতদিন তুলি নাই নেয় ততদিন কি কষ্ট হয় হউক কাম করায় নাগবে (লাগবে)। কিন্তু এই কয়টা দিন ধরি বেশিক্ষণ কাম কইরবার পাঙ (পারি) নাই' - বলেন আলিজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের সুরকিমিল এলাকার আশপাশে শতাধিক হতদরিদ্র মানুষ ইট ভাঙ্গার কাজ করেন। যারা কি শীত কি বর্ষা সব মৌসুমেই দিনভর ইট ভাঙ্গার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
-এমএ