For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি ৪ বীরাঙ্গনা

Published : Tuesday, 5 December, 2023 at 2:29 PM Count : 794


স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার চার বীরাঙ্গনার। স্বীকৃতি না পাওয়া বীরাঙ্গনারা হলেন, রেজিয়া বেওয়া, জয়নব বেগম, সাহেরা বেগম ও রওশন আরা। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদারের পাশবিক নির্যাতনের জীবন্ত সাক্ষী এই নারীরা আজও পান নাই কোনো সরকারি সহযোগিতা । হতাশা নিয়ে জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো কাটাচ্ছেন অনাহারে-অর্ধাহারে। প্রবীণ এই নারীদের একটাই চাওয়া গেজেটভুক্ত হওয়া। সাথে সরকারি অনুদান পেয়ে জীবনের বাকি সময়টা একটু ভালোভাবে কাটানোর। সমাজে লজ্জা অপমান মাথায় নিয়ে জীবন-যাপন করছেন উপজেলার এই চার বীরাঙ্গনা। 

১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া ৯ মাসের যুদ্ধ, যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বলে থাকি। যে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এই যুদ্ধে অনেকের অনেক অবদান রয়েছে, লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ও নারীদের নির্যাতনের এর বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের পর সম্মান হারা নারীদের কে বীরাঙ্গনা নামে অবিহিত করা হয়। 
এখন কার অনেক ছেলে-মেয়ে জানে না বীরাঙ্গনা মানে কি? যাদের ভূমিকা দেশ স্বাধীন হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ছিলো। বীরাঙ্গনা বলতে আমরা ধর্ষিতা নারীকে বুঝায় কিন্তু বীরাঙ্গনা অর্থ একটি দেশের জন্য যে নিজের সম্মান ত্যাগ করেছে, সেই নারীকে বীরাঙ্গনা বোঝায়, যিনি বীরের মতো ত্যাগ করেছেন। 

বিজ্ঞজনেরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বীরাঙ্গনারা। কিন্তু তাদের যুদ্ধটা স্বাধীন দেশের ৫২ বছর পরেও শেষ হয়নি। স্বাধীন দেশে এই বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জরুরি। তাদের বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা জরুরি। তাছাড়া এই নারীদের নিয়ে লেখনিতে শব্দ চয়নেও সংযত হওয়া প্রয়োজন।

জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৩তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৬ জুন গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে ৪১৬ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান। পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩৮ জনে। কিন্তু অজানা কারণে এ প্রক্রিয়া এখন থমকে আছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন ঘোড়াঘাট পৌরসভার খন্দকারটোলা গ্রামের রেজিয়া বেওয়া। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্থানি হায়নাদের হাতে সর্বস্ব হারিয়েছেন তিনি। এখন বয়স হয়েছে, শরীরে নানা রোগ বাসা বেধেছে। শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তিও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। 

রেজিয়া বেওয়ার মেয়ে মালেকা বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর হলেও এখনো সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা ও স্বীকৃতি পান নাই আমার মা। অনেক কষ্ট করে আমাদের দিন অতিবাহিত করতে হয়। অসুস্থ হলে অন্যের কাছে হাত পেতে টাকা সংগ্রহ করতে হয়। আমার মা পাক হানাদারের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণে আমার বিয়ে পর্যন্ত হয়নি। তিনি অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, 'এত কিছু বিসর্জন দেওয়ার পরও যদি আমার মা তার প্রাপ্য সম্মান টুকু না পায়, তাহলে এই দেশ স্বাধীন হওয়ার কোনো মানে হয় না'।

উপজেলার ঘোড়াঘাট পৌরসভার ইসলামপুর গ্রামের বীরাঙ্গনা জয়নব বেগমের এর মেয়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার মা পাক হানাদারের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তার শশুর বাড়িতে জানার পর তাকে তার এক মাসের বাচ্চা নিয়ে মায়ের বাড়িতে এসে দিন কাটাতে হচ্ছে। এমনি অনিশ্চিতভাবে জীবন কাটাচ্ছেন অন্য দুইজন বীরাঙ্গনা সাহেরা বেগম ও রওশনআরাও।

বর্তমানে তাদের একটাই দাবি, সরকার যেনো তাদের প্রাপ্য সম্মান টুকু দিয়ে বাকি জীবনটা কিছুটা স্বাচ্ছন্দে কাটে তার ব্যবস্থা করে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলার প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বলেন, তাদের দূরাবস্থা দেখে ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করে আমরা কাগজপত্র উপজেলার মাধ্যমে অনেক দিন আগে মন্ত্রানালয়ে পাঠিয়েছি  এবং তাদের স্বীকৃতিসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

এমবি


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,