ঠাকুরগাঁওয়ে একটি নবজাতক শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শিল্পী বেগম পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে। অভাবের তাড়নায় ও দৈনন্দিন খরচ মেটাতে ৩০ হাজার টাকায় বাচ্চাটিকে বিক্রি করে দেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে।
শিল্পী বেগম গোয়ালপাড়া এলাকার রায়হানের স্ত্রী। স্বামীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের পর দীর্ঘদিন ভাড়া বাড়িতে তার বসবাস করতেন। তার বকেয়া পড়েছে আট মাসের বাসা ভাড়া। মুদি দোকানেও বাকি খেয়েছন। সেই টাকাও পরিশোধ করতে পারেননি। অভাবের তাড়নায় ও দৈনন্দিন খরচ মেটাতে এবং সেসব টাকা পরিশোধে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক ছেলে সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। নবজাতকটি তার চতুর্থ সন্তান। যদিও সন্তান বিক্রির অর্থের বড় অংশই নিয়ে গেছে দালাল চক্র।
শিল্পী বেগম জানান, প্রায় ১২ বছর আগে বিয়ে হয় তার। সংসারে আরও দুই ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানও রয়েছে শিল্পীর। তবে চতুর্থ সন্তান গর্ভে আসার পরেই হঠাৎ বাড়ি ছেড়ে চলে যান তার স্বামী রায়হান। এরপর অভাবের সংসারে বিপাকে পরে যান শিল্পী বেগম। সস্তান গর্ভে থাকার সময় বাড়ি ভাড়া ও মুদি দোকান মিলিয়ে প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ টাকা বকেয়া তার।
তার অভাবের বিষয় জানতে পেরে গর্ভের সন্তান বিক্রির পরামর্শ দেয় একটি দালাল চক্র। উপায়ান্তর না পেয়ে অভাবের তাড়নায় ও দৈনন্দিন খরচ মেটাতে এবং বাড়ি ভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ করতে নবজাতক সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে স্ট্যাম্পে নবজাতক কেনাবেচার বিষয় লেখালেখির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দালাল চক্রের হয়ে কাজ করছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের এলাকার মিনি বেগম ও শহরের গোয়ালপাড়া এলাকার মাহমুদা বেগম।
নবজাতক শিশুর ক্রেতা সেজে কথা হয় দালাল চক্রের সদস্য মিনি বেগমের সঙ্গে। নবজাতক কেনাবেচার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি এই বছর পাঁচটি শিশু কেনাবেচার কাজ করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। আপনি চাইলে কম দামে আপনাকে একটা বাচ্চার ব্যবস্থা করে দেব।
মিনি জানান, তারা বেশ কয়েকজন মিলে এই কাজ করেন। বাজারে ছেলে শিশুর চাহিদা একটু বেশি। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় মেয়ে শিশু পাওয়া যায় আর ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ হাজার খরচ করতে হয়।
নবজাতক শিশুর ক্রেতা জসিম বলেন, আমার বিয়ের বয়স ১৫ বছর। এখনো কোনো সন্তান নেই। ডাক্তার বলেও দিয়েছে যে, আমি আর কখনো বাবা হতে পারব না। তাই এই বাচ্চাটা কিনতে চেয়েছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত¡বধায়ক ডা: ফিরোজ জামান জুয়েল জানান, নবজাতক শিশু বিক্রির বিষযটি শুনেছি। এটা অনৈতিক ও অপরাধ। তবে হাসপাতালে এর ধরণের কর্মকান্ড হতে দেওয়া হবে নাহ। তথ্য প্রমাণ পেলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি ফিরোজ কবির বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। অপরাধীদের ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন জানান, নবজাতক শিশু ক্রয় বিক্রয়ে কোনো সুযোগ নেই। এটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এএ/এমবি