বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলা করুনানগর বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার ২ নং চরবাদাম ইউনিয়নের পশ্চিম চরকলাকোপা গ্রামের আবুল বাসারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তারকৃত জাকির হোসেন উরফে সুমন (৩২) লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা।
নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক শ্বশুর বাদশা আলম (৫৫) এবং স্ত্রী রাশেদা বেগম (২৮)।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে জাকির হোসেন উরফে সুমনের (৩২) সঙ্গে বিয়ে হয় রাশেদা বেগমের। বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে নিয়ে চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তাদের ঘরে জাহিদ নামের দুই বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। সন্তান হওয়ার পর থেকেই জাকির নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। স্ত্রীর আয়ের টাকায় নেশা করতেন। নেশার টাকা না দেয়ায় এর আগেও কয়েকবার মারধরের পাশাপাশি রাশেদাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছে জাকির।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জাকির হোসেন মূল নাম গোপন করে সুমন নামে রাশেদাকে বিয়ে করেন। এর আগেও জাকির দুটি বিয়ে করেছেন। এসব নিয়ে বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য চলে আসছে। বহু দেন-দরবার করার পর মাদকাসক্ত সুমনকে গত বছর তালাক দেন রাশেদা। এরপর থেকেই গ্রামের বাড়িতে বাবার সঙ্গে থাকতেন রাশেদা। গত মাসে পারবাবিরক ভাবে একই এলাকার মো. কাদেরের সঙ্গে রাশেদা বেগমের দ্বিতীয় বিয়ে হয়।
সাবেক স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন জাকির। বুধবার সন্ধ্যায় শ্বশুর বাড়িতে এসে পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ধারালো ছুরি দিয়ে শ্বশুর বাদশা আলমকে (৫৫) এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। বাবার চিৎকারে মেয়ে রাশেদা বেগম (২৮) এগিয়ে এলে তাকেও একাধিক ছুরিকাঘাত করা হয়। শ্বাশুড়ি আংকরি বেগম (৫০) এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনাস্থলেই রাশেদা ও বাদশা আলম প্রাণ হারান। আহতদের চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটি এলে কৌশলে পালিয়ে যায় জাকির। আহত আংকরি বেগম আশংকাজনক অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘাটককে গ্রেপ্তার করতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে রাতে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকির হোসেন খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ আরও জানায়, ঘাতক জাকির চট্টগ্রাম থেকে ছুরি ক্রয় করে জোনাকি বাসযোগে লক্ষ্মীপুর আসে। লক্ষ্মীপুর থেকে লোকাল বাসে সাবেক শ্বশুর বাড়িতে আসে। সুযোগ বুঝেই ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যান। খুনের কাজে ব্যবহৃত ছুরিটি শ্বশুর বাড়ির পুকুরে ফেলে দেয় সে। পুলিশ ছুরিটি আলামত হিসেবে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত বাদশা আলমের ছেলে মো. জুয়েল বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে রামগতি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
চরবাদাম ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিম জানান, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ঘাতকের যেন সর্বোচ্চ বিচার হয় সে বিষয়ে প্রসাশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
সহকারী পুলিশ সুপার (রামগতি-কমলনগর সার্কেল) সাইফুল আলম চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে আমি স্থানীয় থানার ওসি মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ারসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। নিহতদের লাশ সুরতহালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভিকটিমের পরিবার যেন বিচার পান সে বিষয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সকালে রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, উপজেলার করুনানগর এলাকায় ভোরে অভিযান চালিয়ে ঘাতক জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
-আরএম/এমএ