For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

চিকিৎসক ছাড়াই চলছে ক্লিনিক, প্যাথলজি চালান কর্মচারীরা

Published : Sunday, 3 September, 2023 at 9:01 PM Count : 107

রাজশাহীপুঠিয়ায় যত্রতত্র ভাবে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারগুলোতে নেই নিজস্ব কোনো চিকিৎসক। কিন্তু প্রতিটি ক্লিনিকে একাধিক চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে বোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

আবার দক্ষ টেকনিশিয়ানদের স্বাক্ষর, সিল ব্যবহার করে প্যাথলজির বিভিন্ন পরীক্ষার প্রতিবেদন দেন সেখানকার কর্মচারীরা। এমনকি মালিক-কর্মচারীরা চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় তালিকাভুক্ত মোট নয়টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে। এছাড়া আলাদাভাবে আরও নয়টি প্যাথলজিক সেন্টার রয়েছে। তবে ওই তালিকার বাইরে আরও দু’একটি প্যাথলজি সেন্টার গোপনে অবৈধ ভাবে ব্যবসা করছে।

এদিকে, সরকারি নিয়ম অনুসারে একটি বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ১০টি বেডের জন্য সার্বক্ষণিক একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ও একজন প্রশিক্ষিত সেবিকা থাকার বিধান রয়েছে। আর প্যাথলজি বিভাগের জন্য স্ব-স্ব সেক্টরে সরকার অনুমোদিত ও প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান থাকার বিধান রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারগুলোতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো নজরদারি করে না। ফলে ক্লিনিক প্যাথলজি সেন্টার মালিকরা স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি কোনো নিয়ম নীতি মানছেন না। অনিয়ম ও অপচিকিৎসার কারণে মাঝে মধ্যে ঘটছে রোগী মৃত্যুর ঘটনা।

স্থানীয় বাসিন্দা নাজিমুল হক বলেন, তাৎক্ষণিক সেবা নিতে এসে রোগীরা বেশির ভাগ ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তারা ভালো মানের চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা দেওয়া কথা বলে প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীরা ডাক্তার সেজে রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দেন। এমনকি রোগীদের সির্জারিয়ানসহ নানা ধরনের অপারেশন করছেন। এছাড়া প্রশিক্ষিত সেবিকার কাজ করানো হয় আয়া দিয়ে।

তিনি বলেন, প্যাথলজি বিভাগে রোগীদের সঙ্গে আরও বেশি প্রতারণা করা হয়। কর্মচারী দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে এতে অন্য কোনো প্যাথলজিস্টদের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করে প্রতিবেদন দেন। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিভিল সার্জন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল আসছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যমতে, পুঠিয়ায় কোনো ক্লিনিকের নিজস্ব চিকিৎসক নেই। দু’একটা ক্লিনিকে ভাড়া করা চিকিৎসক দিয়ে শুধু অস্ত্রোপচার করানো হয়। বাকি কাজ ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা করেন। অথচ ক্লিনিকের সামনে একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম ব্যবহার করে বোর্ড ঝুলিয়ে রাখা আছে। যার বেশির ভাগ ভুয়া চিকিৎসক। অথবা এদের মধ্যে যার নাম ব্যবহার করে প্রচারণা করছে হয়তো ওই চিকিৎসকরা জানেনই না।

আবার অনেক ক্লিনিক মালিকরা নিজেরাই চিকিৎসক সেজে অস্ত্রোপচার করছেন। এতে রোগীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। এর ফলে মাঝে মধ্যে কিছু রোগী সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা সেবার অভাবে মারাও যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ক্লিনিক মালিক বলেন, ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারে যেন কোনো হয়রানি বা আইনি জটিলতা না হয় এ জন্য সকল মালিক মিলে সমিতি করা হয়েছে। যেকোনো সমস্যা হলে সমাধান করবে সমিতি।

ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ও এক ক্লিনিকের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, খাতা কলমে উপজেলার সকল ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারের মালিকরা বৈধ ভাবে ব্যবসা করছেন। তবে কোনো মালিকের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক নেই।

তিনি বলেন, এ ব্যবসায় যে আয় তাতে একজন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকের বেতন উঠবে না। তাই সকল মালিকরা বিভিন্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বা চুক্তি করেছে। প্রয়োজনে চিকিৎসকদের ডাকলে তারা তাৎক্ষণিক হাজির হন। আর যদি কোনো ক্লিনিক মালিক চিকিৎসক ছাড়া অস্ত্রোপচার করেন তাহলে এর দায়ভার ওই প্রতিষ্ঠান বহন করবে।

চিকিৎসক আসেন না অথচ তাদের নাম ব্যবহার করে বোর্ড ঝুলিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, এটা অনেকেই করছেন। তবে এ বিষয়টি যেন আর কেউ না করেন সে জন্য সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাজরুই রহমান প্রত্যয় বলেন, উপজেলার বেশির ভাগ ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারগুলোর মালিকরা যথাযথ নিয়ম মানছেন না। আর এ বিষয়গুলো তদারকি করতে সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ. কে. এম. নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, কয়টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধ ভাবে চলছে, সেগুলোর সঠিক তালিকা এখনো উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমার কাছে হস্তান্তর করেননি। তিনি তালিকা করে দিলেই আমরা অভিযান চালিয়ে সেসব হাসপাতাল বন্ধ করে দেব।

এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, পুঠিয়াতে অনেক ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে একটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোতে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।

অবৈধ ক্লিনিকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো অবৈধ ক্লিনিক বা প্যাথলজি সেন্টার আছে কি না সেটা কাগজপত্র না দেখে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

-আরএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,