For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র পঞ্চগড়ে উদ্বোধন

Published : Saturday, 2 September, 2023 at 4:29 PM Count : 196

বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী বলেছেন, চা চাষীদের কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু করা হলো। এতে চা উৎপাদনকারীদের ব্যয় কমবে। চা চাষীরা পাতার মূল্য না পেলে এই নিলাম কেন্দ্র চালু করা মূল্যহীন হবে। 

তিনি শনিবার পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশের ৬৫ ভাগ চা উৎপাদন হয় সিলেট অঞ্চলে। সেখানে নিলাম কেন্দ্র চালু করতে একশ বছর সময় লেগেছে। সেখানে দুই আড়াই বছরের মধ্যে এই চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হলো।

তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র থেকে নিলাম কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে এ অঞ্চলের চা চাষী ও চা উৎপাদনকারীদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ হলো। এতো দিন শুধু চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম হতো। এতে চা উৎপাদনকারীদের বেশ সমস্যা হতো এবং ব্যয় বেশি হতো। 
চা উৎপাদনকারীদের দাবীর প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে।
টিপু মুনশি বলেন, দেশের তৃতীয় এই চা নিলামকেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চা শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। নিলাম কেন্দ্র চালু হলে একদিকে পরিবহন ব্যয়, সময় ও শ্রম ব্যয় কমবে।

চা চাষীরা যাতে কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল পায় সে ব্যাপারে চা বোর্ড ও প্রশাসন প্রয়োজনের আইন প্রয়োগ করবে। চা চাষীরা যাতে নীল চাষীদের মত অবস্থা না হয়। কারো হাতের পুতুল যেন না হয়। তবে তিনি চা চাষীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি গুণগত মান সম্পন্ন পাতা সরবরাহ করার আহবান জানান।

তিনি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চা পাতা সংগ্রহ করার কথা বলে জানান এসব যন্ত্রের দাম আড়াই লাখ টাকা। আমরা এসব যন্ত্র বিনামূল্যে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করবো। 

তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত চা চট্টগ্রামে নিতে পরিবহন খরচসহ নানা ধরণের ভোগান্তি পোহাতে হতো উৎপাদনকারীদের। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম কেন্দ্রে স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন চা বাগান সংশ্লিষ্টরা ও চেম্বার নেতৃবৃন্দ। এই দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেন। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের পর পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চা-বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল পঞ্চগড় একাধিকবার সফর করে যথার্থতা পান। ফলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে অবকাঠামোগত সুবিধা পর্যবেক্ষণ করে উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. নূরুল ইসলাম সুজন, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পঞ্চগড় চেম্বারের সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখ, পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিরুল হক খোকন। 

অনুষ্ঠানে যার হাত ধরে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু সেই সময়ের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ইসলাম সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। এর আগে অতিথিরা জেলায় চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হলে তৈরি করা চায়ের পরিবহন খরচ কমে যাবে। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। নিলাম কেন্দ্রে চায়ের উন্মুক্ত কেনাবেচায় ক্ষুদ্র চা চাষিরা চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্যও পাবেন। এতে গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা। 

জেলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে চা আবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে। ৮টি নিবন্ধিত ও ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগান, সাত হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং এক হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে উঠেছে এখানে।

পঞ্চগড়কে অনুসরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে পাশের জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটও। 

এরইমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ৪৫৭ দশমিক ২৯ একর, লালমনিরহাটে ২২২ দশমিক ৩৮ একর, দিনাজপুরে ৮৯ একর এবং নীলফামারীতে ৭০ দশমিক ৫৯ একর জমিতে চা আবাদ সম্প্রসারণ হয়েছে। সর্বশেষ উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়সহ পাঁচ জেলায় মোট ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে ৩০টি চা বাগান এবং ৮ হাজারের বেশি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান গড়ে উঠেছে। চা উৎপাদনের হিসাবে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে এ অঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ২০২১ সালে এ চা অঞ্চলে চা আবাদে জমির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর। উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা। ২০২২ মৌসুম এক কোটি ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে এখানে, যা বিগত বছরের তুলনায় ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ কেজি বেশি এবং দেশের মোট উৎপাদনের ১৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের পর পঞ্চগড় হবে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হয়। যা পরে উত্তরাঞ্চলের আরো কয়েকটি জেলায় চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় চা অঞ্চল পঞ্চগড়। গত বছর জেলায় ২৫ টি কারখানায় এক কোটি ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ২৬০ কোটি টাকা। দেশে মোট উৎপাদিত চায়ের ১৯ শতাংশ চা পঞ্চগড়ে উৎপাদিত হয়েছে। অনলাইনে এ কেন্দ্রটির নিলাম পরিচালনা করা হবে। এজন্য ব্রোকার ও ওয়্যার হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে।

এসআইএস/এসআর


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,