For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

বইয়ের সঙ্গে পাঠকের আত্মিক সম্পর্ক গড়বে দৃষ্টিনন্দন পাঠাগার

Published : Sunday, 14 November, 2021 at 12:16 PM Count : 264

বইয়ের সঙ্গে পাঠকের আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করতে এক সময় তরুণ, শিশু-কিশোরদের অবসর সময় কাটত বিভিন্ন পাঠাগারে। তবে প্রযুক্তির যুগে সেই সব পাঠাগারে এখন আর পাঠকের দেখা মেলে না। মাঠেও ফুটবল বা ক্রিকেট নিয়ে কসরতে দেখা যায় না তাদের। 

অবসর সময়ে বই বা খেলাধুলার পরিবর্তে তরুণ, শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে এখন মোবাইল। যে মোবাইল ও ইন্টারনেট ছিল প্রযুক্তির আর্শিবাদ সে মোবাইল ও ইন্টারনেটই যেন প্রকৃতির অভিশাপ। দীর্ঘদিন বই থেকে দূরে থাকা বইপ্রেমী পাঠকদের জন্য গাজীপুরেকালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে নজরকাড়া পাঠাগার।

প্রশাসনের এমন উদ্যোগে স্থানীয় বই প্রেমীরাও খুশি। প্রশাসন বলছে- এটি রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত নজরদারি থাকবে। 

জানা গেছে, উপজেলার পুরাতন ব্যাংকের মোড় এলাকায় কালীগঞ্জ রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ (আরআরএন) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে পাঠাগারটি। ইন্টেরিয়র ডিজাইন তৈরি মূল ভবনটি ২১’শ বর্গফুটের। এর ফ্লোর করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টাইলস দিয়ে। রয়েছে অত্যাধুনিক আলোকসজ্জা। পুরো পাঠাগার এলাকাটি ৮ ফুট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। মূল ভবনের বাইরে এক পাশে সভা-সমাবেশের জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ রাখা হয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘শহীদ ময়েজউদ্দিন মঞ্চ’। অপর পাশে রয়েছে নানা জাতের ফুল বাগান।
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে ছাপা হরফের বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন পাঠকরা। নিজেদের এক সময়ের কেনা বইগুলোও পড়ে রয়েছে অবহেলায় ও অপাঠ্য অবস্থায়। তাই বই প্রেমীদের প্রতি নজর দিতে ইউএনও শিবলী সাদিকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় পাঠাগারটি। 

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু করা পাঠাগারটি ইতিমধ্যে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের নজর কেড়েছে। পাঠাগার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৩ লাখ টাকা পাওয়া গেছে উপজেলা পরিষদ থেকে। ইউএনও’র ডাকে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক, শিক্ষানুরাগী ও সামাজিক সংগঠন। তারা অর্থ, নির্মাণ সামগ্রী ও বই দিয়ে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন। ইতিমধ্যে ছয় লাখ টাকা দিয়ে পাঠাগারের জন্য দুই হাজারের বেশি বই কেনা হয়েছে।

এছাড়াও, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের বাইরে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে পাঠাগারটিতে প্রতিদিন স্থানীয় কোন না কোন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভিজিট করা হয়েছে বাধ্যতামূলক।

পাঠাগারটির জন্য করা হয়েছে একটি উপদেষ্টা ও একটি পরিচালনা কমিটি। উপদেষ্টা কমিটিতে পদাধিকার বলে স্থানীয় সাংসদকে প্রধান উপদেষ্টা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রকে উপদেষ্টা করা হয়েছে।

এছাড়াও, পরিচালনা কমিটিতে পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে সভাপতি, আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সদস্য সচিব এবং উপজেলা পর্যায়ের সকল দপ্তর প্রধান ও পৌরসভার আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে সার্বক্ষণিক সদস্য করে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুদানের অর্থে নিজস্ব তহবিল থেকে পাঠাগার পরিচালিত হবে।

যে কারণে সাধারণ সদস্যদের এক হাজার এবং আজীবন সদস্যদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে পাঠাগারে সাধারণ সদস্যর মতই জ্ঞানচর্চা করতে পারবে। 

শহীদ ময়েজউদ্দিন মঞ্চে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ ময়েজউদ্দিনসহ জাতীয় বীরদের সম্পর্কে শিক্ষামূলক বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শিশুদের জন্য চিত্রাংকণ প্রতিযোগীতাসহ জাতীয় দিবসে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। দর্শণার্থীদের জন্য পাঠাগারে পরিদর্শন বই সংরক্ষণ করা হবে। পরিদর্শন বইতে পাঠক ও দর্শণার্থীরা পাঠাগার সম্পর্কে তাদের মতামত ও পরামর্শ লিপিবদ্ধ করতে পারবেন। পরবর্তীতে তাদের লিপিবদ্ধ করা মতামতের ভিত্তিতে পাঠাগার পরিচালনা করতে ওই পরামর্শ বিবেচনা নেয়া হবে।

কালীগঞ্জ উপজেলার কেন্দ্রীয় পাঠাগারে ভেতরে প্রবেশকালেই চোখে পড়বে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নজরকারা ছবি। দেখে মনে হবে যেন জীবন্ত জাতির পিতা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ডায়াসে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। 

পাঠাগারে মূল ফটকের ডান পাশে অভ্যর্থনা কক্ষ, সভাপতির কক্ষ, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার রয়েছে। বাম দিকে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার, সাহিত্য কর্ণার, ইসলামী কর্ণার ও শিশু কর্ণার। এছাড়াও ছোট ছোট তাক বিশিষ্ট বৃত্তাকৃতির চারটি পড়ার টেবিল। টেবিলের বাইরের দিকে বই থাকবে, আর ভেতরে বসবে পাঠক। টেবিলের মাঝখানে পাতাবাহার গাছ। সব কিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া এবং দৃষ্টিনন্দন। আলো ঝলমলে বিশাল পাঠাগারের আলমিরায় থরে থরে সাজানো দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লেখকদের বই। 
 
কালীগঞ্জ বাজারের চাল ব্যবসায়ী, কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও পাঠাগারের পাঠক সাব্বির আহমেদ বলেন, পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার প্রবণতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা। বর্তমানে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ প্রায় সব ধরনের মানুষের হাতে ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন রয়েছে। তবে কালীগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন এই পাঠাগার, হারিয়ে যাওয়া পাঠকদের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

উপজেলা কেন্দ্রীয় পাঠাগারে লাইব্রেরীয়ান এহসান আহমেদ বলেন, এখানে একসঙ্গে গ্রন্থাগারে ৫০ হাজার বই রাখার ব্যবস্থা রয়েছে এবং ৩০/৩৫ জন পাঠকের নিরিবিলি পরিবেশে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে প্রতি রোববার। পাঠক নিবন্ধন চলছে। এতে নানা বয়সী বইপ্রেমীদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মসলিন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রহমান আরমান বলেন, একজন শিক্ষিত মানুষের কাছে বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বই চিন্তার খোরাক যোগায়। যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিন্তার খোরাক খুবই কম। তাই বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। তবে পাঠক বাড়ানোর জন্য বই পড়ার প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শিবলী সাদিক বলেন, শিক্ষার প্রসার এবং জ্ঞানপিপাসু মানুষের কথা চিন্তা করে পাঠাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা ও সহায়তা করেছেন মূলধারার স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ও কালীগঞ্জ রাজা আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কয়েকজন শিক্ষার্থী। যারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। 

কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার এলাকার শিক্ষা প্রসারে মূল কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে তিনি আশা করেন। 

ইউএনও বলেন, পাঠাগারে বইয়ের শ্রেণি ভাগ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গ্যালারি ও বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। যা সকল বয়সী মানুষের মনকে আকৃষ্ট করবে। প্রযুক্তির আশির্বাদ মোবাইল-ইন্টারনেটের কারণেই পাঠ্য বইয়ের বাইরে পাঠাগারে এসে বই পড়ার পাঠক কমে গেছে। তবে দৃষ্টিনন্দন রুচিশীল এই পাঠাগারে পাঠক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বই পড়া প্রতিযোগিতা, বির্তক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন জ্ঞানমূলক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। 

আর এতে করে পাঠক পাঠাগারমূখী হবে বলেও তিনি মনে করেন।  

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,