For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

দূর্গম চরে মাধ্যমিক শিক্ষার বেহাল দশা

Published : Saturday, 23 October, 2021 at 12:07 PM Count : 235

পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও তার উপায় নেই ভোলাচরফ্যাশনের চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের। চরে পর্যাপ্ত মাধ্যমিক স্কুল না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষেই থমকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। শিক্ষা সুযোগ বঞ্চিত হয়ে বাল্য বিবাহসহ নানা সামাজিক বিচ্যুতি ও চরভিত্তিক নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

সচেতন মহল বলছে, চরাঞ্চলগুলোতে নতুন করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটলে চরের শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। পিছিয়ে পড়া শিশু কিশোর-কিশোরীরা সমাজের মূল ধারায় অন্তর্ভূক্ত হবে। 

এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান অনিয়মিত এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা ঠিকমতো না আসায় সংসারের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে ছেলে-মেয়েরা। যার ফলে অনেক কিশোরীদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা।

চরফ্যাশন উপজেলার অধীনে অনেকগুলো চর রয়েছে। যার মধ্যে জনবসতিপূর্ণ ঢালচর, চর নিজাম, চর কুকরি মুকরি, চর পাতিলা, মুজিব নগর, সিকদারের চর, চরহাসিনা, খুড়চির চর, চর ফারুকী, চরমোতাহার, চর মনোহর,লক্ষ্মীর চর, চর লিউলিন, চর কচুয়াখালি, চর আশ্রাফ আলমসহ ছোট-বড় ১১টি চর মূল ভূ-খন্ড থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। আর এসব চরাঞ্চলগুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই হ-য-ব-র-ল বলে জানান স্থানীয়রা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চর কুকরি-মুকরীতে নন এমপিও একটি দাখিল মাদ্রাসা ও একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়,পশ্চিম ঢালচরে একটি দাখিল মাদ্রাসা ও একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মুজিব নগরেও একটি দাখিল মাদ্রাসাসহ একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর এসব বিদ্যালয়গুতে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এসব চরগুলোতে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। 

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার তথ্যমতে- চরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজারের বেশি শিশু শিক্ষার্থী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংকটে পড়ালেখার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে শিশু শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও জেলে, কৃষক ও অন্যান্য খেটে খাওয়া দিনমজুর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শহরে রেখে পড়ানোর সামর্থ নেই বলেও উচ্চ শিক্ষায় সরকারি সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে চরের শিক্ষার্থীরা। 

যার ফলে বাড়ছে মেয়েদের বাল্যবিবাহ, শিশু শ্রম এবং নানা অপরাধমূলক কাজেও লিপ্ত হচ্ছে কিশোররা। 

চর নিজামের বাসিন্দা খলিল উদ্দিন বলেন, চরে বিদ্যালয় না থাকা এবং শিক্ষকরা অনুপস্থিত ও শিক্ষক সংকটে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করানোর মন মানষিকতা থাকার পরও সন্তানদের শিক্ষিত করতে পারছি না। 

পাতিলার চরের বাসিন্দা আবুল ফজল বলেন, আমাদের চর থেকে চর কুকরি-মুকরির স্কুলে যাতায়াত করতে হয় নৌকা দিয়ে। যার ফলে ছেলেকে কাজে দিয়ে দিয়েছি। 

বিবি জলেখা বলেন, গরীব মানুষ হয়ে জন্মেছি। মেয়েকে আর কত দিন ঘরে রাখব। অনেক চিন্তা করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিম ঢালচর দাখিল মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, চরটি দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। যার ফলে নদী ভাঙ্গণের শিকার পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থী সংকটের পাশাপাশি শিক্ষক সংকটও রয়েছে।

এক জনপ্রতিনিধি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা দূর্গম হওয়ায় এখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখানে বেশি দিন থাকেন না। বদলি হয়ে অন্য কোন বিদ্যালয়ে চলে যান।

কুকরি-মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলে পিছিয়ে পড়া চরের শিক্ষার্থীরা তাদের লালিত স্বপ্ন পূরণে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। মেয়েদেরও মাধ্যমিক শিক্ষার্জন নিশ্চিত হবে। এসব চরের শিক্ষার্থীরা ইচ্ছে থাকার পরও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংকটে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে গরু চড়ানো, জেলেদের সঙ্গে মৎস্য শিকারে যাওয়াসহ ক্ষেত খামারের বিভিন্ন কাজ করছে। এছাড়াও মেয়েরা মায়ের সঙ্গে গৃহস্থালির কাজ করেই বেড়ে উঠছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে কোমলমতী এসব শিশুদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,