পটুয়াখালীর গলাচিপা-আমতলী ও কলাপাড়া উপজেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের বন্ধন গোলখালী ইউনিয়নের বলইবুনিয়া-টেপুরা আয়রন স্টাকচারের ব্রিজটির বেহাল দশা।
ব্রিজের প্রায় অর্ধেকাংশ শ্লিপার ভেঙে গেছে। এক পাশের আয়রন রেলিং খসে পড়েছে। লোহার বিমে মরিচা ধরে ক্ষয়ে গেছে। রেলিং ধ্বসে পড়েছে। মোট কথা পুরো ব্রিজের অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে করে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন পায়ে হেটে কোনমতে পারাপার হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্রিজের গুরুত্ব স্বীকার করে জানান, খালের ওপরের নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই পুরোনো ব্রিজের স্থলে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
একশ’ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ব্রিজের অবস্থান গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের নলুয়াবাগী গ্রামে। এ ব্রিজটি গলাচিপা উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও বরগুনার আমতলী উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তিন উপজেলার সড়ক যোগাযোগের দিকে লক্ষ্য করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ১৯৯৯ সালে নলুয়াবাগী গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বলইবুনিয়া খালের ওপর আয়রন ব্রিজটি নির্মাণ করে। এ ব্রিজ পার হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ কলাপাড়া ও আমতলী উপজেলায় সড়ক পথে যাতায়াত করা যায়।
এছাড়া, খালের দুই পাড়ে বলইবুনিয়া ও নলুয়াবাগী বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এ ব্রিজ ব্যবহার করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজ নির্মাণের পর থেকে কোন ধরনের মেরামত কিংবা সংস্কার হয়নি। ফলে ব্রিজটি প্রায় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিলন শরীফ বলেন, নির্মাণ পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে ব্রিজের স্লিপারগুলো ভেঙ্গে গেছে। লোহার বিমে মরিচা ধরে ক্ষয়ে গেছে। রেলিং ভেঙ্গে পড়েছে। দীর্ঘদিন এ ব্রিজ ব্যবহার প্রায় বন্ধই ছিল। কয়েক বছর আগে যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কামরান সাইদ প্রিন্স মহব্বত ব্যক্তিগত ভাবে অর্থ দিয়ে কাঠের স্লিপার বসিয়ে দেন। বর্তমানে সেগুলোও ভেঙ্গে গেছে।
স্থানীয় শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, এ ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ’ শিশু বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। শিশুদের জন্য এ ব্রিজের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
বলইবুনিয়া গ্রামের হাসান মৃধা বলেন, এ ব্রিজ দিয়ে খুব অল্প সময়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর, কলাপাড়া ও আমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা যায়। এতে করে এলাকার মানুষের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র ব্রিজের জন্য সে সুবিধা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
একই গ্রামের জহির খান বলেন, এলাকার বহু যুবক মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করে কর্মসংস্থান করেছে। কিন্তু এখন তারা বেকার হওয়ার পথে রয়েছে।
এলাকার বহু মানুষ এভাবে তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
অবিলম্বে বলইবুনিয়া খালের ওপর নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে গোলখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন বলেন, গলাচিপা-আমতলী-কলাপড়া উপজেলার মোহনায় বলইবুনিয়া-টেপুরা আয়রন ব্রিজ নির্মাণের পর আর মেরামত করা হয়নি। তিন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এ ব্রিজ ব্যবহার করলেও তা বর্তমানে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের গলাচিপা উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্রিজটি তিন উপজেলার মানুষের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ব্রিজটি বর্তমানে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। এখানে নতুন ব্রিজ র্নিমাণের প্রকল্প তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করি চলতি অর্থবছরেই নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
-এমএ