হোটেল, রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকান, পোশাক, বিপণি বিতান, শপিংমল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপারশপ, জুয়েলারিসহ ২৫ খাতে ভ্যাট আহরণ বাড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
তবে ধীরগতিতে চলছে ইএফডি স্থাপনের কাজ। এছাড়া কিছু দোকানে ইএফডি বসানো হলেও কিছু দোকানে না বসানোর কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, গত এক বছরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাত্র তিন হাজার ৩৯৩টি ইএফডি স্থাপন করা হয়েছে (৩১ অগাস্ট, ২০২১ পর্যন্ত)। যেখানে ব্যবসায়ীদের চাহিদা ছয় লাখ।
ইএফডি নামের আধুনিক যন্ত্রটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। ইএফডির মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনের লেনদেনের প্রকৃত তথ্য জানতে পারেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। এ জন্য রাজস্ব বোর্ডে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি সার্ভার বসানো হয়েছে।
দোকান মালিক সমিতির নেতারা জানান, ক্রেতারা ভ্যাট দেবে সরকার ভ্যাট নেবে, এতে দোকান মালিকদের কোন সমস্যা নেই। তবে এক এলাকায় সব দোকানে ভ্যাট মেশিন না বাসানোর কারণে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। রাজস্ব বোর্ড থেকে বেছে বেছে কয়েকটি দোকানে ভ্যাট মেশিন বসানো হয়েছে। এতে পাশাপাশি একই ধরনের দোকানে ভ্যাট মেশিন না থাকায় যে দোকানে ভ্যাট মেশিন নেই সেই দোকানের তুলনায় ভ্যাট মেশিনযুক্ত দোকানের বিক্রি কম হচ্ছে।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, করোনাসহ নানা জটিলতায় ইএফডি মেশিন বসানোয় ধীরগতি এসেছে। গত ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত পাঁচটি কমিশনারেট (ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও চট্টগ্রাম) মিলে মোট তিন হাজার ৩৯৩টি ইএফডি স্থাপন করা হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছয় হাজার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসাতে চায় তারা।
জানা যায়, ২০১৯ সালে ভ্যাট আইন চালুর আগে প্রথম দফায় এক লাখ ইএফডি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আইনটি চালুর প্রথম এক বছরে ইএফডি আমদানি করতে পারেনি রাজস্ব বোর্ড। ২০১৯ সালের নভেম্বরে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় মেশিন আমদানির বিষয়টি আটকে যায়। ২০২০ সালের এপ্রিলে চীন থেকে ১০০ মেশিন আসে। তা ইনস্টল ও রক্ষণাবেক্ষণে চীনা প্রকৌশলী আসার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে তারা আসেননি। এরপর আরও কিছু মেশিন আসে। তা দিয়ে ২০২০ সালের ২৫ অগাস্ট ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও চট্টগ্রামের কিছু দোকানে ইএফডি বসায় এনবিআর।
ঢাকার শান্তিনগরে নিউ ঢাকা বিরিয়ানি হাউস হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
রেস্টুরেন্টটির মালিক হরে কিশোর ঘোষ অবজারভারকে বলেন, 'আমাদের এখানে ৫০-৬০ টাকার খাবার খেয়ে ভ্যাট নিতে চাইলে অনেক ক্রেতা দিতে চান না। আমরাও তেমন জোর করি না। সব ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট নেয়া হয় না। আমার পাশের রেস্টুরেন্টে ইএফডি স্থাপন করা হয়নি। সেখানে খাবার খেলে কোন ভ্যাট দিতে হয় না। তাহলে আমার এখানে কেন ভ্যাট দেবে। ভ্যাট নিতে বেশি জোর করলে ক্রেতা কমে যায়।'
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন অবজারভারকে বলেন, 'রাজস্ব বোর্ড দীর্ঘ এক বছরে মাত্র তিন হাজার ৩৯৩টি ইএফডি স্থাপন করেছে। যেখানে ইএফডি মেশিন দরকার কমপক্ষে ছয় লাখ। সে তুলনায় এখন পযন্ত শুন্য দশমিক ১ শতাংশ ভ্যাট মেশিন বসানো হয়নি। দ্রুত সময়ে সকল দোকানে একসঙ্গে ভ্যাট মেশিন বসাতে না পারলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
তিনি বলেন, 'এখন ইএফডি মেশিন ফ্রি দিচ্ছে এনবিআর। প্রয়োজনে আমরা দাম দিয়ে কিনে নেব। তারপরও আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল দোকানে একসঙ্গে ইএফডি স্থাপন করা হোক।'
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান অবজারভারকে বলেন, 'কিছু রেস্টুরেন্টে মেশিন বসানো হয়েছে, কিছু রেস্টুরেন্টে নেই। এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। সর্বশেষ আমরা ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা আমাদের কাছে ছয় মাসের সময় চেয়েছেন। আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করেছি, যত দিন মেশিন না দিতে পারে, তত দিন যেন রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঝামেলা না করে।'
তিনি বলেন, 'আমরা বার বার বলেছি, সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসাতে। যদি তা না পারে তাহলে সেক্টর অনুযায়ী দেয়ার জন্য বলেছি। মানে এখন যতগুলো আছে, সেগুলো একটা সেক্টরে দেয়া যেতে পারে। শুধু জুতার দোকান বা খাবারের দোকান, এভাবে দিতে পারে।'
রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অবজারভারকে বলেন, 'ইএফডির মাধ্যমে ক্রেতাদের রাজস্ব প্রদানের জন্য সব রকম প্রচারণা করা হচ্ছে। এখন পযন্ত তিন হাজার ৩৯৩টি ইএফডি স্থাপন করা হয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে দেশের সব দোকানে ইএফডি স্থাপন করা হবে।'
তিনি বলেন, 'শুল্কমুক্ত ভাবে চীন থেকে আমদানি করা প্রতিটি মেশিনের দাম পড়েছে ২২ হাজার টাকা। এসব মেশিন আনতে চীনের ‘এসজেডজেডটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মেশিন ইনস্টলেশনের বিষয়ে কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।'
মেশিন বসানোর অগ্রগতি ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলেও এসজেডজেডটির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
-এমএ